পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720000601](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাপদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা বেড়েই চলেছে। সবখানে মানুষের কষ্ট ভোগান্তির শেষ নেই। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। অবিরাম তেরো দিন ধরে চলা সারাদেশের তীব্র গরমে স্বাভাবিক জনজীবন গেছে থমকে। রোদের আগুনে শরীর ঝলসে যায়! গলা ভেজাতে গেলে গ্লাসে-জগে, ট্যাপে খাবার পানিও গরম! গতকাল (রোববার) রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ ৩৬ ডিগ্রির ঘরে ছিল। তবে বাতাসে অত্যধিক জলীয়বাষ্পের কারণে প্রকৃত তাপানুভ‚তি ৪৪ ডিগ্রিতে। উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীতে পারদ উঠে গেছে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
আজ সোমবারও দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ অসহনীয় মাত্রায় থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। গতকাল দেশের অনেক জায়গায় তাপপ্রবাহ উঠে গেছে মাঝারি পর্যায়ে। ভ্যাপসা গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট-লোডশেডিং আর পানির সঙ্কটে শহর-নগর গ্রামে-গঞ্জে ত্রাহি অবস্থা। পুকুর দীঘি কুয়া শুকিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় নলকুপে পানি উঠছে না। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ এবং কোথাও কোথাও হালকা ছিটেফোঁটা সাময়িক বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বস্তির বৃষ্টির আকুতি নিয়ে সবার নজর আকাশের দিকে। মেঘ বৃষ্টি চাই- বৃষ্টি নেই। ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে’। রহমতের বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া মোনাজাত হচ্ছে দেশের সর্বত্র।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র মতে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র প্রভাবে বাংলাদেশে মেঘ-বাদলের আবহ তৈরি হয়নি। উল্টো ভ্যাপসা গরম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ‘ফণি’। ঘূর্ণিঝড়টি আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে না যাওয়া পর্যন্ত আবহাওয়ায় পরিবর্তনের কোনো আলামত নেই। বঙ্গোসাগরে অবিরাম ঘূর্ণন প্রক্রিয়ার মধ্যেই ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। এটি প্রবল থেকে প্রবলতর হতে পারে।
‘ফণি’র গতিপথ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্র-তামিলনাডু বরাবর বজায় রয়েছে। ‘ফণি’ তার বর্তমান গতিপথ যদি পরিবর্তন না করে তাহলে ভারতে আঘাত করতে পারে। অন্যথায় এটি ঘুরে গিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকেও ধাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রামসহ সমুদ্র বন্দরসমূহে দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল থেকে প্রায় ১৬শ’ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। ফণীর বিপরীতমুখী প্রভাবে রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগসহ সারাদেশে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম অব্যাহত রয়েছে। তীব্র গরমে আর ঘামে নাকাল হয়ে মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও রাঙ্গামাটি অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের আবহ তৈরি হতে পারে।
‘ফণি’ শক্তিশালী হচ্ছে
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুছ জানান, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ আরও উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬২০ কি.মি. দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৭৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৬৩৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
‘ফণি’ আরও ঘনীভ‚ত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
পুড়ছে পদ্মাপাড়ে রাজশাহী
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গতকাল চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঝলসে যায় মরা পদ্মাপাড়ের তপ্ত বালুর তীরের খটখটে জনপদ রাজশাহী। এছাড়া রাজশাহী বিভাগ, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের উপর দিয়ে মাঝারি ধরনের প্রচন্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এ তাপদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সে. এবং সর্বনিম্ন ২৮দশমিক৪ ডিগ্রি সে.। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের সর্বত্র রাতের বেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
গতকাল ফরিদপুরে ৩৭, টাঙ্গাইলে ৩৬দশমিক২, গোপালগঞ্জে ৩৬দশমিক১, রাঙ্গামাটিতে ৩৬, ঈশ্বরদীতে ৩৮দশমিক৫, তাড়াশে ৩৬, খুলনায় ৩৭, সাতক্ষীরায় ৩৬দশমিক৬, যশোরে ৩৮দশমিক২, চুয়াডাঙ্গায় ৩৯দশমিক৪, কুমারখালীতে ৩৭দশমিক৪, পটুয়াখালীতে ৩৫দশমিক২ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা ছিল।
সিলেটে গতকাল ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানে তাপমাত্রার পারদ নেমে আসে ৩১.৮ ডিগ্রি সে.। শ্রীমঙ্গলে ৯ মি.মি., রংপুরে ১৪ মি.মি., দিনাজপুরে ১ মি.মি., সৈয়দপুরে ৩ মি.মি., তেতুলিয়ায় ৪ মি.মি., ডিমলায় ৪৮ মি.মি., রাজারহাটে ৪৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে রংপুরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯দশমিক৯ ডিগ্রিতে নেমে যায়। তেতুলিয়া ও ডিমলায় ছিল দেশের সর্বনিম্ন ২১.৭ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।