পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। এজন্য এই সংসদে শপথ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত দলটির। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একইরকম নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত ও নেতাদের নির্দেশনা অমান্য করেই সংসদে শপথ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান জাহিদ। সিদ্ধান্ত না মানায় গত শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তার প্রাথমিক সদস্য পদসহ দলের সকল পর্যায় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল ও দলের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে গিয়ে শপথ গ্রহণ করায় ইতোমধ্যে সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীরা জাহিদুর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক, মীর জাফর বলে আখ্যা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমে তার শপথকে নিয়ে চলছে ব্যাপক নেতিবাচক আলোচনা। ব্যতিক্রম নয়, তার নিজ নির্বাচনী এলাকা (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) ও জেলা ঠাকুরগাঁও। কেবল লোভে পড়ে, হালুয়া-রুটির ভাগের আশায়, রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে এমপি হিসেবে শপথ গ্রহণ করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, যে নির্বাচনের ফলাফল দল প্রত্যাখ্যান করেছে, শপথ গ্রহণের বিষয়ে স্বয়ং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান না করে দিয়েছেন, সেই সংসদে গিয়ে শপথ গ্রহণ করায় জাহিদুর রহমান মীর জাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি দলের সাথে, নেতাকর্মীদের সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এর জন্য স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনগণ তাকে ক্ষমা করবে না।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোট ভাই মির্জা ফয়সল আমীন জাহিদুর রহমানের শপথ গ্রহণকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি শপথ নেয়ার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছে। কারণ তিনি দলের মধ্যে ভাঙনের চেষ্টা করছেন। এটাতে তিনি সফল হবেন না।
জাহিদের সংসদীয় আসন পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন এটা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এটা আমরা ঘৃণার চোখে দেখছি। আমাদের সকলকে ব্যথিত। সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে প্রত্যাখান করেছি। কেউ এটা মেনে নিতে পারছে না। দলের সবাই এটার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ব্যক্তি স্বার্থে জাহিদ সাহেব শপথ নিয়েছেন। এরসঙ্গে সরকারের কোনো আঁতাত/সন্ধি রয়েছে কিনা সন্দেহ হয়।
পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জাহিদুর রহমান শপথ গ্রহণের আগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু প্রত্যেকেই তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দেবেন সেই সিদ্ধান্ত যেন তিনি মেনে নেন। কোন লোভে পড়ে কিংবা ক্ষমতাসীনদের কাছে তিনি যদি নিজের নীতি-আদর্শ বিক্রি করে দিয়ে শপথ গ্রহণ করেন তাহলে সারাজীবন মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকবেন। কিন্তু নেতাকর্মীদের এসব পরামর্শকে কোন রকম আমলে না নিয়ে তিনি শপথ গ্রহণ করেছেন। এরপর থেকেই পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল এই দুই উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে বর্জন করেছে। তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও গত নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী কামাল আনোয়ার আহাম্মদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, তারেক রহমান ও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন জাহিদুর রহমান। এলাকার জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা তার এই সিদ্ধান্তকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। যথা সময়ে তার এই বিশ্বাস ঘাতকতার জবাব ওই এলাকার জনগণ তাকে ফিরিয়ে দেবে। রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, দল যেখানে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে, দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি অবস্থায় থেকেও আপোষ না করে শপথ না নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও শপথের বিষয়ে না করে দিয়েছেন। এতো কিছুর পরও জাহিদুর রহমান কিভাবে শপথ নিলেন সেটি আমরা বুঝতে পারছি না। তার শপথ নেয়া কোনভাবেই উচিত হয়নি। দলের নেতাকর্মীরা এটিকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। স্থানীয়ভাবে জাহিদুরের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে আতাউর বলেন, দু’একদিনের মধ্যে আমরা জেলার নেতৃবৃন্দের সাথে বসবো। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি আব্দুস সাত্তার: জাহিদুর রহমান শপথ গ্রহণের পর গুঞ্জন রয়েছে বাকী ৪জনও শপথ গ্রহণ করতে পারেন। এদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভ‚ইয়া। সংসদে যোগ দেয়ার ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেননি বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি সিদ্ধান্তই নিতে পারছিনা, কি করা। এবিষয়ে সোমবার কথা বলবেন জানিয়ে বলেন শপথতো সোমবার দিন পর্যন্তই নেয়া যাবে। যদিও শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি। জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক জহিরুল হক খোকন জানান-জেলা বিএনপি’র সভায় সংসদে উকিল আবদুস সাত্তার ভ‚ইয়ার যোগদান প্রসঙ্গে কোন কথা হয়নি। তবে তিনি সংসদে যোগ দেবেননা। জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজও বলেছেন তার সংসদে যোগ দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত বিএনপির দুই এমপির মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদের সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলামের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বাকী বগুড়ার দুই এমপির মধ্যে বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন দল সিদ্ধান্ত না দিলে তিনি শপথ নেবেন না। বগুড়া-৬ আসনের নির্বাচিত এমপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জানিয়েছেন তিনি এই সংসদে শপথ গ্রহণ করবেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।