Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লায় কিশোর অপরাধ

অভিভাবকরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, নিভছে স্বপ্ন প্রদীপ

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কুমিল্লায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের অপরাধের নৃশংসতায় নিভে যাচ্ছে পরিবারের স্বপ্ন প্রদীপ। শাহাজাদা, অন্তু, সাজ্জাতুলের ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মিরনকে। সহপাঠিদের হাতে সম্প্রতি মিরন খুনের ঘটনা এসব কিশোরদের মূল্যবোধ এবং মানবিকতাবোধকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
কিশোর অপরাধ বাড়ছে কুমিল্লায়। এক সময় বস্তি বা এলাকার দরিদ্র পরিবারের পড়ালেখা না জানা কিশোররা চুরি ছিনতাই থেকে শুরু করে মারামারি এমন কি খুনোখুনির সাথে জড়িত থাকতো। আর এখন নগরীর অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ও বাসাবাড়িতে থাকা কিশোররা জড়াচ্ছে এসব অপরাধে। স্কুল পর্যায়ে অষ্টম থেকে দশম এবং কলেজে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর অধিকাংশ ছাত্র গ্রুপ গঠন করে অপরাধ করছে।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অনুসন্ধানে কুমিল্লা নগরজুড়ে বেশকিছু কিশোর অপরাধী গ্রুপের তথ্য উঠে এসেছে। এসব গ্রুপের হাত ধরে গত তিন বছরে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় চরম উদ্বিগ্ন অভিভাবক, আইন-শৃংখলা বাহিনী ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা।
কুমিল্লা নগরীতে স্কুল কলেজ পড়–য়া ছাত্রদের অধিকাংশই একাধিক গ্রুপ গঠন করে পাড়া-মহল্লায় মাস্তানিতে জড়িয়ে পড়েছে। এসব গ্রুপের নামেরও নানা বাহার। র‌্যাক্স, এক্স, এলআর এন, সিএমএইচ, মডার্ণ, ঈগল, রকস্টার, ডিস্কো বয়েজ ও বস ইত্যাদি। এসব গ্রুপের আবার গ্যাং লিডারও রয়েছে। অধিকাংশই ফেসবুক, ইন্টারনেটে আসক্ত। নেশার মধ্যে ধূমপানেই বেশি আসক্ত।
স্কুল, কলেজ ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের সম্পর্কও সব সময় ভালো থাকে না। এসব শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে পরিবারের প্রশ্রয় পেয়ে দিন দিন বিপদগামী ও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠে। কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুল, জিলা স্কুল, কালেক্টরেট স্কুল ও হাইস্কুলসহ নগরীর আরও কিছু স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র গ্যাং কালচারে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
এরা প্রায় সবাই সমবয়সী, সহপাঠী বন্ধু ও একই স্কুল অথবা পাশাপাশি স্কুলেই পড়াশোনা করে সবাই। মিলিত হচ্ছে কোন উৎসব আয়োজনে। সেই বন্ধুই কিনা হঠাৎ করে একদিন ভয়ঙ্কর শত্রু হয়ে যায়, একেবারে খুন করে ফেলে! কিশোরদের এভাবে অপরাধী হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে ‘গ্যাং কালচার।’ গত তিন/চার বছর ধরে কুমিল্লায় স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্রদের অধিকাংশই বিভিন্ন নামে গ্রুপ গঠন করে এলাকায় মাস্তানি করছে।
অভিভাবকদের কেউ কেউ গ্রুপিং করার বিষয়টি জানার পরও সন্তানকে না সামলিয়ে প্রশ্রয় দিয়েছেন। যার ফলে এসব কিশোররা বেপরোয়া জীবনের পথে পা বাড়াতে থাকে। আর এপথে চলতে চলতে খুনের নেশায় মেতে উঠে। ২০১৭ সালের মে মাসে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় একটি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শাহাজাদা।
গত বছরের জুলাই মাসে নগরীর ধর্মসাগর পাড়ে খুন হয় অন্তু নামে এক কলেজছাত্র। আর চলতি বছরের মার্চের ১০ তারিখ সাজ্জাতুল নামে এক কিশোর খুন হয় সহপাঠিদের হাতে। সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল রাতে নগরীর ঠাকুরপাড়ায় মডার্ণ হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মিরন খুন হয় সহপাঠিদের হাতে। এছাড়া নগরীর বাইরেও মারামারির ঘটনায় কিশোর গ্রুপগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠছে।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. রুহুল আমিন ভূইয়া ইনকিলাবকে বলেন, সুস্থ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের অভাব, লাগামহীনভাবে সন্তানদের ছেড়ে দেয়া এবং অভিভাবকরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সন্তানরা বিপদগামী হয়ে উঠছে। যে পরিবারের সন্তানটি খুন হচ্ছে সেই পরিবারের একটি স্বপ্নের মৃত্যু ঘটছে। আবার যারা খুন করছে তারাও তো অপরাধী হয়ে সাজা ভোগ করবে। এদের অভিভাবকরাও তো তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো।
তিনি বলেন, একটি খুন কতোগুলো পরিবারের স্বপ্ন ধ্বংস করে দিচ্ছে। এসব কিশোররা যে অপরাধ করছে, এই অপরাধের ফলে কী হবে, সেটা তারা চিন্তা করছে না। এক্ষেত্রে গুরুদায়িত্ব রয়েছে সমাজ, পরিবার ও অভিভাবকদের। বিশেষ করে মা-বাবা ও ভাইবোনের। পাড়া-মহল্লার মুরব্বিরাও এক্ষেত্রে দেখভাল করতে পারেন। যথাযথ ভালবাসা দিয়ে সন্তানদের বোঝালে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা পেতেও পারে তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ