Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে পালিত হলো আলোচিত রানা প্লাজা ধসের ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি

সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:৫৮ পিএম

বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে সাভারের আলোচিত রানা প্লাজা ধসের ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে। সকাল থেকে রানা-প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। এছাড়া আহত নিহতের পরিবারও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ স্কপ এর উদ্যোগেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বাংলাদেশ লেভার ফেডারেশন এর সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর এর নেতৃত্বে এসময় তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন রানা প্লাজার সামনে মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করেন। মানববন্ধন থেকে এসময় তারা অবিলম্বে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ফাঁসির দাবি জানান।

পরে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে নেতৃবৃন্দরা ২৪শে এপ্রিলকে গার্মেন্টস শ্রমিক দিবস ঘোষনা, শ্রমিক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, নিহত শ্রমিক পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ৪৮লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন প্রদান, আহত-পঙ্গু শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরন ও পুর্নবাসন নিশ্চিত করার দাবী জানান।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট-শিল্পাঞ্চল কমিটির সভাপতি এডভোকেট সৌমিত্র কুমার দাশ রানা বলেন, প্লাজা ভবনধ্বসে নিহত শ্রমিক পরিবার তাদের স্বজন হত্যার বিচার আজও পায় নাই। এই হত্যাকান্ডের অভিযুক্ত ভবন মালিকসহ গার্মেন্টস মালিকদের কোন বিচারই করা হয় নাই। বিচারের নামে কালক্ষেপনের কৌশল নিয়ে সংশ্লিষ্টদের রক্ষার আয়োজন চলছে। ফলে বিচারহীনতার এক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে গার্মেন্টস সেক্টরে।

তিনি বলেন, মাত্র ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন দিয়ে মালিকদের শ্রমিক হত্যার দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে সরকার। যার ফলে মালিকরা দিনে দিনে আরও বেপরোয়া হওয়ার সাহস পাচ্ছে। তাই অবিলম্বে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরন আইএলও কনভেনশন অনুযাযী ৪৮লক্ষ টাকা করাসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করে আইন প্রনয়ন করতে হবে। আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরন ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

নিহত শ্রমিকদের স্মরনে আজও পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়নি। তাই নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রানাপ্লাজার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করে ২৪শে এপ্রিলকে গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস হিসাবে ঘোষনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ৬বছর অতিবাহিত হলেও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা ও ২৪শে এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ও সাধারন ছুটি ঘোষনার দাবী জানান সংগঠনটির এ নেতা।
এছাড়া রানা প্লাজার সামনে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করে রানা প্লাজা জায়গা সরকার অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও শ্রমিকের পরিবারকে পুনর্বাসন করার দাবিও জানান তিনি।

নিহতদের স্মরনে অস্থায়ী স্মৃতিস্থম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন রানা প্লাজার ৬তলার ইথার ট্রেক্স কারখানার আহত শ্রমিক আকলিমা আক্তার আখি। দূর্ঘটনায় তার ডান হাত প্যারালাইজড। তিনি বলেন ডান হাত অচল, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।
আহত শ্রমিক তাসলিমা বেগম অসহায়ের মতো বসে রয়েছেন রানা প্লাজার পাশে একটি টং দোকানে। স্বামী অসুস্থ্যতার কারনে বাসা বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে তার।

আয়শা বেগম জানালেন, ভীমের নীচে চাপা পরে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে গেছে, অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না তিনি। কষ্ট হলেও বর্ষপূতিতে তিনিও নিহতদের স্মরনে ফুল দিতে এসেছেন।
জাহানারা বেগম আজও খোঁজে ফেরেন তার মেয়ে সুলতানাকে। সুলতানা ৫ম তলার পোশাক কারখানায় অপারেটর পদে কাজ করতেন। রানা প্লাজা ধসের পর তার মেয়ের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
জাহানারা বেগম বলেন, তার মেয়ের ৮ ও ১০ বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। নিজে ভিক্ষা করে তাদের লেখাপড়া শিক্ষাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত; ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পরপরই সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এ দূর্ঘটনায় ১১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দূর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
এদূর্ঘটনায় সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল।
ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। এই দূর্ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশে ঘটা সবচেয়ে বড় শিল্পদূর্ঘটনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রানা প্লাজা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ