Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট চেম্বারে ৪০ শতাংশ ভোটারই অযোগ্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ৯:১২ পিএম

ব্যবসা নেই, আছে টিআইএন ও ট্রেড লাইসেন্স। এভাবে জাল সনদে সিলেট চেম্বারের সদস্য হয়েছেন অনেকে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার বাড়াতে ব্যবসায়ী নেতাদের এমন অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের শতকরা ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী সদস্য বা ভোটার হওয়ার অযোগ্য। সংগঠনটির নির্বাচনী বোর্ডের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখলে অযোগ্য ভোটারের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

গত ২৩ মার্চ ভোটার তালিকায় ‘গলদ’ সিলেট চেম্বার অব কমার্সে শিরোনামে বাংলানিউজকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সদস্যের তদন্ত কমিটি সিলেট চেম্বারের এই অনিয়ম তদন্ত করে।

মন্ত্রণালয়ের এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা উপ-সচিব মো. জালাল উদ্দিন বলেন, গত ১৭ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত থেকে আসার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি ডিও লেটার দেন। ওই প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কেননা, মন্ত্রী যদি বলেন, তদন্ত প্রয়োজন নেই, কেবল কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু সেটা হয়নি। এরপরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২০ জন ভোটারের কাগজপত্র পরীক্ষা করেছি। ৮ জনের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাব রয়েছে নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাতে অনুমেয়, সিলেট চেম্বারে শতকরা ৬০ ভাগ ব্যবসায়ী ভোটার হওয়ার যোগ্য। বাকি ৪০ ভাগ ব্যবসায়ী ভোটার হওয়ার অযোগ্য। যে কারণে মেয়াদ বাড়িয়ে ভোটার তালিকাটি বাতিল করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে মত দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিলেট চেম্বারের অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে ২৯৩ জন, সহযোগী ক্যাটাগরিতে ১৮৪ জন ব্যবসায়ীকে চেম্বারের সদস্য পদ দেওয়া হয়। এ বছরের ২৬ জানুয়ারি অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে আরো ৪৬৭ জন এবং সহযোগী ক্যাটাগরির ১৮৩ জন ব্যবসায়ীকে সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। দু’টি সভায় মোট ১ হাজার ১২৭ জন ব্যবসায়ীকে সদস্য পদ দেওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিককতা প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।

নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান বিজিত চৌধুরী এবং সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মনির উদ্দিন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানান যে, পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে নির্বাচনী বোর্ড সব সদস্যের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেননি। তবে গত ৬ মার্চ সভায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৮৮ জন সদস্যের কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেন। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাত্র ৭ জন ভোটার আপিল করেন, তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল মর্মে কার্যবিবরণীতেও উল্লেখ করেন।

নির্বাচনী বোর্ড, আপিল বোর্ড ও চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণী, প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকা, ভোটারদের দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, চেম্বারের সদস্য করার সময় তাদের দাখিলকৃত কাগজপত্র বিধিমালার আলোকেই যাচাই-বাছাই করা হয়নি।

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময় নির্বাচনী বোর্ড সময় স্বল্পতার কারণে সবার কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেও ৮৮ জনকে বাতিল করেছিলেন।

এদিকে, ৩১ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পেছাতে ৪ এপ্রিল বাণিজ্যমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেন চেম্বার সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ। ওই আবেদনে সুপারিশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ভোটার তালিকা সংশোধনকল্পে এই পরিষদের ৩ মাসের মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচনের জন্য ৩ মাস সময় বাড়িয়েছে মন্ত্রণালয়।

ওই আবেদনে চেম্বার সভাপতি উল্লেখ করেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। পবিত্র রমজান মাস, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে তড়িগড়ি করে নির্বাচন করা সম্ভব না। ফলে ৩ মাসের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করে তিনি। অন্যথায় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা পরবর্তী ৬ বছরের জন্য বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, অর্থাৎ বহিষ্কার হবেন।

এই আবেদনে স্পষ্টতই বর্তমান পরিষদের গাফিলতির বিষয়টি ফুটে ওঠেছে, দাবি করেন একাধিক ব্যবসায়ী নেতা। সিলেট চেম্বারের নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান বিজিত চৌধুরী বলেন, ভোটার তালিকায় আমরা যে গলদ ধরেছিলাম, সেই বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও উঠে এসেছে। নির্বাচন কমিশন জালিয়াতি ধরায় চেম্বার সভাপতি নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ও আপিল বোর্ড বদলানোর বিষয়টিও আবেদনে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, পুঙ্খানোপুঙ্খভাবে বাছাই করলে সিলেট চেম্বারের প্রায় ৪ হাজারের ভোটারের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বাদ পড়বেন। যাদের অনেকের টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স আছে, অথচ ব্যবসা নেই, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভোটার তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চিনি গ্রুপে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে একই পরিবারের ভাই-ভাতিজা, কাজের লোককে। এছাড়া গোলাপগঞ্জ চেম্বার ও ট্রেড গ্রুপের জমা দেওয়া রেজুলেশনে সাধারণ সভার উপস্থিতি, স্বাক্ষর সবই একজনের হাতের লেখা। আর ঠিকাদার মালিক গ্রুপ কিভাবে হয়, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।

এ বিষয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ