পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ফুটপাতের বাংলা হলো পায়ে চলার পথ। নাগরিকরা নির্বিঘ্নে ফুটপাত দিয়ে হাঁটবে এটা তাদের নাগরিক অধিকার। সেখানে কারো ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা নয়। এটা সত্য হলেও, ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ফুটপাতে বেচাকেনা হয়ে আসছে। এটা হঠাৎ শুরু হয়নি। বলা চলে নগরপত্তন যবে থেকে শুরু ফুটপাতে বেচাকেনাও হয়তো সেখান থেকেই চলে আসছে। তাই বলে এটা চলতেই থাকবে এমনটি হতে পারে না। তাহলে কী করতে হবে।
ফুটপাত খালি করতে হবে। আর নাগরিকদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে দ্বিমত কারোই নেই। তবে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে হকারদের জন্য। আবারো কারো কারো মতে, ফুটপাতে বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেলে যার যার বিকল্প সেই খুঁজে নেবে। আমি তাদের সাথে দ্বিমত করছি না। তবে ফুটপাতে বেচাকেনা করে জীবিকা নির্বাহ করে যারা তাদের জন্য হলিডে মার্কেট একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। হলিডে মার্কেট যেমন বাড়ানো প্রয়োজন, তেমনি তা হতে হবে পরিকল্পিত। হলিডে মার্কেটের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থাও হতে হবে সহজ এবং সাশ্রয়ী। সরকার যেমন চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করছে, তেমনি হলিডে মার্কেটের জন্য ঐসব দিনে সংশ্লিষ্ট রুটে বিশেষ বাস চালু করতে হবে। সেইসাথে রিক্সা চলাচলও স্বাভাবিক করা প্রয়োজন।
যেসব দেশ উন্নত দেশের কাতারে চলে গেছে সেসব দেশেও হলিডে মার্কেট আছে এবং তা জনপ্রিয়। সেখানে শুধু স্বল্প আয়ের মানুষরাই যায় না। সর্বশ্রেণির মানুষই যায়। শুধু সস্তায় পণ্য ক্রয়ই হলিডে মার্কেটের বৈশিষ্ট্য নয়। এক জায়গায় সব পণ্য পাওয়ার সুযোগ হয় এই হলিডে মার্কেটে। তাই নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি সর্বশ্রেণির মানুষের সমাগম ঘটে। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে চলে বেচাকেনা। আবার মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফেরারও ব্যবস্থা থাকতে হবে। সে ব্যবস্থা নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
নগরীর রাস্তায় চলাচল স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। বর্তমানে তার নামে নগরীতে চলছে যানবাহনের উপর পুলিশের নিষ্ঠুর আচরণ। নগরীর প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ এখন গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষার নামে নগদ অর্থ আদায় করছে। এই আচরণের কারণে নগরীতে এখন মারাত্মক যানবাহন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মালিক এখন পুলিশের টাকা দিয়ে গাড়ির মেইনটেইনেস খরচ পোষাতে পারছে না। গাড়ি চালিয়ে রাখতে যে খরচ তার চেয়ে বন্ধ রাখলে সেই খরচ থেকে বাঁচা যায়। এহেন একতরফা আচরণ কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না।
সুপ্রভাত বাসের চাপায় একজন ছাত্র নিহতের ঘটনায় ঐ পরিবহনটিই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে ঐ রুটে এখন গণপরিবহনের যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা দেখার কেউ নেই। আবার ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাবালে নূর পরিবহনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা কি সমাধান? দুর্ঘটার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ শাস্তি পাক সেটা সবাই চায়। কিন্তু একটি সমস্যার জন্য নতুন করে সমস্যা তৈরি করা করো কাম্য হতে পারে না। বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতা রোধ করতে হবে। তাহলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। সে ব্যাপারে কিন্তু কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। গাড়ি সিরিয়ালে চালাতে হবে। সারিবদ্ধভাবে চালাতে হবে। ইমার্জেন্সি লেন রাখতে হবে। শ্লো যানবাহনের আলাদা লেন প্রয়োজন। সেসব উদ্যোগ দেখা যায় না।
ঢাকা মহানগরীতে বাস যেখানে থামার কথা সেখানে থামে না, থামে মোড়ের মধ্যে। কারণ যাত্রীরা মোড়ের মধ্যেই দাঁড়ায়। পুলিশ সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। মোড়টাই বন্ধ করে রাখার ফলে গাড়ি মোড় ক্রস করতে পারে না। ফলে যানজট লেগেই থাকে। হাজারো কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যানজটে। রাস্তার উপরে বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য উঠানামা চলছে সমানে। এ সব রোধে কোনো পদক্ষেপ নেই।
রাজধানী ঢাকার বড় বড় মার্কেট এবং শপিং মলগুলোর সংলগ্ন রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। এর কারণ হলো রাস্তা এবং মার্কেট পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয়হীনতা। বড় বড় মার্কেট করেছে তাতে রাখেনাই কোনো গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এ বিষয়ে জরুরি এবং কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সেটা এমন হতে পারে যে, নিচতলায় কোনো শপিং হবে না। সব মার্কেটের নিচতলা এবং বেজমেন্ট গাড়ি পার্কিং থাকতে হবে। শপিং হবে উপরে। তাহলে রাস্তায় ভিড় কমে যাবে। যানজট কমে আসবে।
এই সব মিলিয়ে নগরীতে মানুষের স্বস্তিদায়ক যাতায়াত এবং হাঁটাচলা ও বসবাস নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন নতুন করে নগর পরিকল্পনা। সেটা হতে হবে সুদূরপ্রসারী এবং সুপরিকল্পিত। তাতে সাহসও থাকতে হবে। সুফল জনগণকে বোঝাতে হবে। জনমত সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে থাকতে হবে মিশন এবং ভিশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।