পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দেশের মধ্যে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা চলছে। ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা শুধু দেশের গন্তেডি সীমাবদ্ধ নেই; সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন সভাতেও বিষয়টি উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি ব্যাংক মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ব্যাংক খাত সংস্কারে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপকে অংশীজনরা সমর্থন জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার বসন্তকালীন সভার দ্বিতীয় দিনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যখন বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন, তখন বাংলাদেশের আর্থিক খাত নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক। ওই প্রতিবেদনে বহুজাতিক সংস্থার নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা বলেন। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাব দেওয়া হয় বিশ্বব্যাংক থেকে। একই সঙ্গে ক্রমাগত বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) তিন দিনের বসন্তকালীন সভার দ্বিতীয় দিনে গতকাল এক ব্যতিক্রমী আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বের ১৮৯টি সদস্য দেশ থেকে আসা প্রতিনিধি এবং অংশীজনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। জবাবে অংশীজন ও প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংশগ্রহণকারী অংশীজন বলেছেন, কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারলে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা সম্ভব। বড় একটি অংশ বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং সংস্কারের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে পারে। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, সংঘাত ও সহিংসতা বন্ধ। যদিও বাংলাদেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম। যা মোট জিডিপির মাত্র দুই শতাংশের মধ্যে। বাংলাদেশের বিশেজ্ঞরা বরাবরই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি করে আসছেন। যা এদিন সভাতেও উঠে এসেছে।
বেশ কয়েকটি সভায় অংশ নেওয়া শেষে বিকেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে, আমাদের ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। ঋণখেলাপির পরিমাণও বেশি। তারা বলেছে, আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার আনতে। তারই অংশ হিসেবে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে পিছিয়ে পড়ায় এক্ষেত্রে করনীয় বিষয়ে তারা পরামর্শও দিবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বেশ কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকে আমরা শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করব। তবে সেটি অবশ্যই বেসরকারি ব্যাংক। কারণ, সরকারি ব্যাংক বেশ ভালো করছে। তারা ভালো সেবা দিচ্ছে। শুধু বেসরকারি ব্যাংক যেগুলো দুর্বল এবং ঝুঁকিতে আছে; সেগুলো একীভূত করা হবে। সেটা সরকারি ব্যাংকের সঙ্গেও হতে পারে, আবার ভালো বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গেও হতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংক একীভূত হওয়ার ঘটনা আছে। আমরাও সেটা করব। সেজন্য প্রয়োজনে আমরা ব্যাংক কম্পানি আইন সংশোধন করব। যদি কোনো দুর্বল ব্যাংক একীভূত হতে না চায়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ও শেয়ারবাজারে বিষয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক যেসব সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, সরকার সেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে চেষ্টা করবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া যেসব ব্যাংক এখন ঝুঁকিতে আছে, সেসব ব্যাংককে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে একটি মার্জার নীতিমালা তৈরি করছে বাংলাাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কবির আহমদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা মার্জার নীতিমালা নিয়ে এখন কাজ করছে। একীভূত ও দেউলিয়া আইন সংশোধন নিয়েও কাজ চলছে। গতকাল অর্থমন্ত্রী জানান, ব্যাংক খাতে সংস্কারে আমরা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বিদ্যমান ৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাংককে আমরা বলেছি, তোমরা যেভাবে ঋণখেলাপির হিসাব কর, সেখানে সত্যিকারের চিত্র উঠে আসে না। নানা কারণে ঋণখেলাপি হওয়ার সুযোগ আছে। তারা আমাদের এসব যুক্তি শুনেছে। তারপরও আমরা ঋণখেলাপি কমাতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরে সার্বিক ব্যাংক খাতের চিত্র উঠে আসবে। একই সঙ্গে রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। এই টাকা বেসরকারি খাতের উন্নয়নে খরচ হবে। উৎপাদনশীল খাতে খরচ হবে। এর মাধ্যমে দেশে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। ফলে দারিদ্র্যের হারও কমে আসবে।
বিশ্বব্যাংকের সব সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) কিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা নিয়ে আলাদা একটি সেশন অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। সেখানে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের কত টাকা দরকার, তা আমরা বের করেছি। বিষয়টি আমরা তাদের সামনে তুলে ধরেছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশে আর টাকা পাচার হবে না। এখন বরং বিদেশ থেকে টাকা বাংলাদেশে আসবে বিনিয়োগের জন্য। শেয়ারবাজারকে আরো গতিশীল করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ২০টি দেশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ‘ভালনারেবল গ্রæপ ২০’ এর সভা অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। সেখানে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে অভিযোজন ও উপশম খাতের জন্য একটি তহবিল গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে তহবিলের আকার কত হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার। গতকালের আলাদা একটি সভায় বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদসহ অন্যরা। এদিকে আজ শনিবার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভা শেষ হওয়ার কথা। মরক্কোর মারাকেশ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে বসন্তকালীন সভা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।