Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পদ গ্রাসে দশের কৌশল, উত্তরাধিকারকে হত্যার হুমকি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ২:২৭ পিএম

নালা, ডোবা, ভিটে-বাড়ি, সব মিলিয়ে জমির পরিমাণ ১০৫ শতাংশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে কোটি টাকা মূল্যের এই সম্পত্তির দিকে চোখ পড়েছে দশের (নেতৃস্থানীয় লোকজন)। সুকুমার দাশ, হরিকমল দাশ, শৈলেন্দ্র চন্দ্র দাশ, উপেন্দ্র সরকার, নারায়ণ সরকার ও সুকেশসহ আরও কয়েকজন। নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া গ্রামের ওই দশের বিরুদ্ধে উঠেছে হীরনবালার সম্পদ হাতিয়ে নিতে নানা ফন্দির ফিকিরে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ। একের পর এক মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার মনোরঞ্জন মল্লিককে। মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে তাঁকে। তাঁর মা হিরনবালার মৃত্যুর পর থেকেই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে একেক বার একেক দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা।
অভিযোগ মিলেছে হিরনবালার মৃত্যুর দু’দিন পর গ্রাম ছাড়া করা হয় মনোরঞ্জনকে। ফাঁকা বাড়িতে চালানো হয় লুটপাট। চারটি গরু, গোলায় থাকা ৫০ মণ ধান, দুইভরি স্বর্ণালংকার ও দুইভরি রূপার অলংকার লুটে নেয় গ্রামের ওই দলটি। তার আগে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গ্রাম ছাড়া করা হয় মনোরঞ্জনকে। হীরনবালার সম্পদ মগের মুল্লুকের মতো হয়ে উঠে দশের কাছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিলপাড়া গ্রামের মোহনবাসী মল্লিকের স্ত্রী হিরনবালা সরকার নিঃসন্তান অবস্থায় ২০১৫ সালের ২৬ মে মারা যান। এর ১০ বছর আগে স্বামী মোহনবাসী মারা যায়। হিরনবালার মৃত্যুতে হিন্দু দায়ভাগ আইনে বিমাতা পুত্র মনোরঞ্জন মল্লিক সকল সম্পদের মালিক হন। তাঁর নামেই ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারী সম্পত্তির নাম খারিজ হয়।
মনোরঞ্জন মল্লিক জানান, সম্পদের উত্তরাধিকার হওয়ায় আমি গ্রামের দশের চোখে পড়ি। মা জীবিতকালে ওই বাড়িতে গিয়ে প্রায়ই বসবাস এবং দেখাশুনা করতাম। গ্রামে পেলে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে। প্রথমে সম্পদ নাম খারিজ করতে গেলে বাধা সৃষ্টি করে তারা। স্থানীয় গৌর মন্দিরকে হীরনবালা জায়গা দিয়েছে বলে দাবী করে আমার খারিজ বাতিলের আবেদন করে মন্দির কমিটির উপেন্দ্র সরকার। কিন্তু কোন কাগজ দেখাতে না পারায় ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী শুনানি শেষে নাসিরনগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমার নামেই খারিজ বহাল রাখে। নারায়ণ সরকার নামক একজন আদালতে ১৪৪ ধারা মামলা করলে সেটিও খারিজ হয়।
হীরনবালা জায়গাটি মৌখিকভাবে মন্দিরকে দিয়েছেন এই দাবিতে নাসিরনগর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারী প্রবেট মামলা করেন মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক হরি কমল সরকার। চলতি বছরের ২৮ মার্চ এই মামলাটি আদালত খারিজ করে দেয়। এরপর নারায়ণ সরকারকে এই সম্পদ উইল করে দিয়ে গেছে দাবি করে ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর আরেকটি মামলা করে।
মনোরঞ্জন আরও জানান, নারায়ণ তাঁর মায়ের একজন গৃহপরিচারক ছিলেন। তাঁকে ২০১৩ সালে ১৫ শতাংশ জমি দান করেছিলেন হীরনবালা। কিন্তু নারায়ণ প্রতারণা করে হীরনবালার সব সম্পত্তির উইল তাঁর নামে করে ফেলেন। এটি জানতে পেরে হীরনবালা ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর উইলটি রহিত করেন। এ নিয়ে গ্রামে নারায়ণের বিচারও হয়।
সরেজমিনে তিলপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হীরনবালার ঘর-দোয়ার ভোগ করছে উপেন্দ্র সরকারের পরিবার। বাড়ি সংলগ্ন জমির কোণায় একটি টিনের চালা করে পরিত্যক্ত কয়েকটি মূর্তি রাখা রয়েছে।
উপেন্দ্র’র পুত্রবধু অমিতা সরকার জানান, বাড়িটির বিনিময়ে গ্রামের দশে টাকা নিয়েছে। তবে লিখে দেয়নি। দখল করে খাচ্ছি।
গ্রামের জয়নাল আবেদীন খন্দকার জানান, মন্দিরের নামে জায়গাটি দিয়ে দেয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। গৌর মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিকমল সরকার বলেন, আমার জানা মতে মন্দিরের জন্য এই জায়গা দিয়ে যাওয়ার লিখিত কোনো ডকুমেন্ট নাই। তবে মৌখিকভাবে দান করে গেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রাহ্মণবাড়িয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ