Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংক খাতে আমূল সংস্কারে আসছে আইএমএফ

হাসান সোহেল আমেরিকার ওয়াশিংটন ডি সি থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

যুক্তরাষ্ট্্েরর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বসন্তকালীন সভার প্রথম দিনে অর্থনীতিবিদরা যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতি-কৌশল নিয়ে আলোচনা করছেন, সদর দপ্তরের সামনে তখন চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পরিবেশকর্মীরা বিক্ষোভ করছেন- কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে বিনিয়োগ বন্ধ করা হোক। বিশেষ করে জাপান সরকারের কাছে তাদের দাবি, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাপান সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে। পরিবেশের জন্য যা মারাত্মক হুমকি। এসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝড়, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ হচ্ছে ঘনঘন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফ্রেন্ডস ফর দ্যা আর্থ এর প্রতিনিধি ক্যাট দি অ্যাঞ্জেলিস বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক এরইমধ্যে সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করেছে। আমরা চাই, জাপান সরকার তারা যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রে অর্থায়ন না করে। অয়েল চেঞ্জ এর সিনিয়র ক্যাম্পেইনার অ্যালেক্স দোকাস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। সেখানে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ চলছে। যেসব প্রকল্পে জাপান ভারতসহ কয়েকটি দেশ অর্থায়ন করছে। আমরা চাই, পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য এসব বিনিয়োগ বন্ধ হোক।
এদিকে গতকাল বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন সভার প্রথম দিনে ব্যস্ত দিন পার করেছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ প্রতিনিধি দলের অন্যরা। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে ভ্যাটের একক হার বসাতে আইএমএফের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ বাস্তবায়ন কঠিন। বিষয়টি আমরা আইএমএফকে জানিয়েছি, এক স্তর হার ভ্যাট বসালে তা কার্যকর করা কঠিন হবে। আমরা তিন স্তর বিশিষ্ট ভ্যাটের হার করতে যাচ্ছি। যা হবে ৫ শতাংশ, সাড়ে সাত শতাংশ এবং দশ শতাংশ। আমাদের যুক্তি আইএমএফ মেনে নিয়েছে। আমরা আইএমএফকে বলেছি, এক স্তর বিশিষ্ট ভ্যাট কেবল উন্নত বিশ্বে বাস্তবায়ন সম্ভব। আমাদের মতো উদীয়মান দেশগুলোতে এখনই বাস্তবায়ন করা যাবে না। জনগণ এই হার মানবে না। আমাদের কথা শোনার পর আইএমএফ জানিয়েছে, আমাদের প্রস্তাবে তারা রাজি। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে যে ভ্যাট আইনটি করা হয়েছিল, সেটি আইএমএফের তৈরি করে দেওয়া।
সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। এই দুর্বলতা কাটাতে আমরা আইএমএফের সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাদের ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। তারা একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠাবে। এছাড়া এবছর আইএমএফের সভাপতি বাংলাদেশ সফরে যাবে বলে আমাকে জানিয়েছে। তারা আমাদের ব্যাংক খাতের যেসব সমস্যা আছে, সেসব সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। মানব সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যাংকের আধুনিকায়নে কোন জায়গা থেকে সফটওয়্যার নেব, তারা তা বলে দেবে। সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষ জনবল তৈরিতে তারা সহযোগিতা করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি অনলাইনে চলে গেলে অপরাধ অনেক কমে যাবে। এক জায়গায় বসে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যারা ঋণখেলাপি তাদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকবে না। তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যারা ঠিকমতো পরিশোধ করেন, ভালো ব্যবসায়ী তারা সব ব্যাংক থেকেই ঋণ নিতে পারবে। ব্যাংকিং খাত অটোমেশনে গেলে এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এতে করে ব্যাংকিং খাতে অপরাধ কমে যাবে। খেলাপি ঋণের হারও কমে যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সিঙ্গেল ক্লাইন্ট এক্সপোজার থাকবে না’।
এদিকে গতকাল বাংলাদেশের সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যন্স টিমার। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে সেইভাবে রপ্তানি হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান অবকাঠামোতেই দুই-তৃতীয়াংশ রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। হ্যান্স টিমার বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কত শতাংশ হলো, সেদিকে নজর না দিয়ে বরং প্রবৃদ্ধির উৎসের দিকে নজর দেওয়া দরকার। বিশেষ করে টেকসই প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। হ্যান্স টিমার রফতানি খাতকে বেশি গুরুত্ব দেন। তার মতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে হলে রপ্তানির বৃদ্ধির প্রতি জোর দিতে হবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হলে বৈশ্বিক প্রতিযোগীতার বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে, মুদ্রার মান কমে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ফলে প্রবৃদ্ধিকে টেকসই ভাবে ধরে রাখা কঠিন হবে। প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে নানা বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, অনুমান সবসময় মিলবে এমনটি নয়। প্রবৃদ্ধি আট না সাত শতাংশ হলো সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো এই প্রবৃদ্ধি কী ভাবে অর্জন হচ্ছে। তার মতে, বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
দেশের রফতানি বাড়াতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য উদারীকরণ, বাজার ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার প্রবর্তন, বাণিজ্যের কর হার কমিয়ে আনতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়া (বেক্সিট) এবং চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কী প্রভাব ফেলতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের কিছু সুবিধা পেলেও দীর্ঘমেয়াদে এই ধরণের আন্তর্জাতিক সমস্যায় শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিন এশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বল্পমেয়াদে উন্নত দেশগুলো বিকল্প বাজার হিসেবে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রতি ঝুকলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা নিজেদেও দেশেই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ফলে রপ্তানির সুবিধা সে সময় আরো কঠিন হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ