চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
এক
পবিত্র মিরাজ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর অন্যতম মোজেজা। আল্লাহতালার সাথে প্রিয় নবী সা. এর মিলনক্ষণ। বর্ণনামতে পবিত্র মিরাজে হাজার বছরের পথ চোখের পলকে শেষ হয় এবং পবিত্র মিরাজে রাসুলে করিম সা. এর ২৭ বছর কেটে যায়। আর দুনিয়াবাসীর মনে হল রাতের সামান্য সময়। এটাই আল্লাহতালার কুদরত ও রাসুলে পাক সা. এর মোজেজা।
পবিত্র মিরাজ বিশ্বাস করীরা হল হযরত আবু বকর (রাঃ) এর মতো ঈমানদারদের দলে। নবূয়ত প্রকাশের ১১ বৎসর ৫ মাস ১৫ দিনে রজব চাঁদের ২৭ তারিখ সোমবার পূর্ব রাত্রের শেষাংশে মিরাজ সংঘঠিত হয়। নবী করিম সা. বায়তুল্লায় অবস্থিত বিবি উম্মে হানী (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করছিলেন। হযরত জিবরাইল (আঃ) তশরীফ আনলেন ঘরে। দেখতে পেলেন রাসুলে পাক সা. বিশ্রাম নিচ্ছেন। তিনি ভাবতে লাগলেন কিভাবে রাসুলে করিম সা. কে জাগ্রত করবেন। এমন সময় আল্লাহতালা বললেন, হে জিবরাইল তুমি আমার হাবিবের পা মোবারকে চুমো খাও। হযরত জিব্রাইল (আঃ) সাথে সাথে রাসুলে করিম সা. এর পা মোবরকে চুমো খেলেন। রাসুলে করিম সা. জাগ্রত হলেন। জিব্রাইর (আঃ) আরজ করলেন আল্লাহ পাক আপনাকে সালাম জানালেন এবং মিলিত হওয়ার ইচ্ছে জানালেন। রাসুলে করিম সা. এর সম্মতি পেয়ে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বোরাক সম্মুখে আনলেন। খচ্চরের চেয়ে নিচু গাধার চেয়ে উঁচু এ বোরাক। যার গতি ছিল দৃষ্টি সীমান্তের এক কদম। রাসুলে করিম সা. যখন বোরাকে সওয়ার হতে চাইলেন, বোরাক নাচতে লাগল। জিব্রাইল (আঃ) বললেন তোমার পিঠে সৃষ্টির সেরা নবী করিম সা. সওয়ার হচ্ছেন তুমি স্থির হও। বোরাক বলল, কাল হাশরের দিন নবী করিম সা. আমার জন্য শাফায়াত করবেন বলে ওয়াদা করলে আমি স্থির হবো। নবী করিম সা. কথা দিলেন। বোরাক স্থির হলো। নবী করিম সা. বোরাকে সওয়ার হলেন, জিব্রাইল (আ:) সামনের লাগাম ধরে, মিকাইল (আঃ) রিকাব ধরে এবং ইস্রাফিল পিছনে পিছনে সত্তর হাজার ফেরেস্তার বহর নিয়ে অগ্রসর হলেন। মক্কা শরীফ থেকে রওনা দিয়ে পথিমধ্যে মদিনার রওজা মোবারকের স্থানে গিয়ে বোরাক থামল। সেখানে জিব্রাইল (আঃ) এর ইশারায় দু’রাকাত নামাজ আদায় করলেন। এভাবে হযরত ইসা (আঃ) এর জন্ম স্থান বায়তুল লাহাম এবং হযরত ওয়াইব (আঃ) এর গৃহের কাছে মাদইয়ান নামক স্থানে বোরাক থেকে নেমে রাসুলে করিম সা. দু’রাকাত করে নামাজ আদায় করলেন। উক্ত বরকতময় স্থান গুলোতে নামাজ আদায় করা নবীজীর সুন্নত। এরপর জিব্রাইল (আঃ) বায়তুল মোকাদ্দস মসজিদের সামনে বোরাক থামালেন এবং বোরাককে সাখরা নামক পবিত্র পাথরের সাথে বাঁধলেন। এরপর আজান দিলেন পূর্বে থেকে উপস্থিত সকল নবী নামাজের জন্য দাড়ালেন। হজরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুলে করিম সা. কে নামাজের ইমামতি করার অনুরোধ করলেন। রাসুলে করিম সা. সমস্ত আম্বিয়া ক্বেরাম ও সত্তর হাজার ফেরস্তাগণদের নিয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করলেন। বায়তুল মোকাদ্দস থেকে শুরু হয় উর্ধ্ব জগত গমন। প্রথম আসমানে গিয়ে হযরত জিব্রাইল (আঃ) দায়িত্বরত ফেরস্তাকে ডাক দিলেন। পরিচয় জানতে চাইলেন তিনি। রাসুলে করিম সা. এর নাম শোনা মাত্র দরজা খুলে দিলেন। প্রথমেই সাক্ষাত হলো হযরত আদম (আঃ) এর সাথে। দ্বিতীয় আসমানে দেখা হল হজরত ইসা (আঃ), হযরত যাকারিয়া (আঃ) ও হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) এবং অন্যান্য নবী ও ফেরস্তাগণদের সাথে। তৃতীয় আকাশে হযরত ইউসুফ (আঃ) এ নেতৃত্বে অন্যান্য নবীগণ ও ফেরাস্তাগন। চতুর্থ আসমানে হযরত ইদরিস (আঃ) ,পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন (আঃ) ৬ষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা (আ:) সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সাথে সাক্ষাত হয়। রাসুলে করিম সা. আসমানে ভ্রমনের সময় বেহেস্ত দোযখ প্রত্যক্ষ করেন। এবং কোন পাপের কি রকম শাস্তি তা জেনে নেন। সপ্ত আকাশে ভ্রমন শেষে জিব্রাইল (আঃ) হযরত মুহাম্মদ সা. কে সিদরাতুল মুনতাহা বা সীমান্তের বটবৃক্ষের নিকট নিয়ে যান। সেখানে জিব্রাইল (আঃ) বিদায় গ্রহণ করতে চাইলেন এবং রাসুলে করিম সা. এর প্রশ্নের উত্তরে বললেন, সিদরাতুল মুনতাহা থেকে এক আঙ্গুল বা এক চুল পরিমান অগ্রসর হলে আমার নূরের ছয়শত পাখা নূরের তজল্লীতে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। সিদরাতুল মুনতাহা থেকে মিরাজের মূল সফর। এমন সময় আল্লাহতাল তার হাবীব রাসুলে করিম সা. এর জন্য রফরফ নামক এক বাহন প্রেরন করলেন। রাসুলে করিম তার উপর সওয়ার হয়ে নূরের জগত আল্লাহতালার সকল পাক নামের স্তর অতিক্রম শেষ করলেন। শুরু হল মূল সফর। এভাবে তিনি সত্তর হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে পৌঁছেন পবিত্র আরশ মকামে কাউসাইন এ পৌঁছেন। যার জন্য স্রষ্টা সকল কিছু সৃষ্টি করল তাঁর পদদূলিতে আরশ ধন্য হল।
আল্লাহতালা ইরশাদ করেন, তঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন এবং আগে অগ্রসর হলেন। অতঃপর (এত কাছে গেলেন) কেবল দু ধনুকের ব্যবধান বাকী রইল অথবা তারচেয়েও কম।
আল্লাহতালা তার প্রিয় হাবীবকে সান্নিধ্য দিলেন। হাবীব ও মাহাবুব নূরী জাতে মিশে একাকার হলেন। নব্বই হাজার প্রেম আলাপন করলেন। ফেরার সময় আল্লাহতালা তার প্রিয় হাবীবকে তার উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ উপহার দিলেন। তা নিয়ে ফেরার পথে ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা (আঃ) জিজ্ঞাস করেন, হে আল্লাহর রাসুল আল্লাহতালা আপনাকে উম্মতের জন্য কি উপহার দিলেন। উত্তরে তিনি বললেন, দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তিনি অনুরোধ সহকারে বললেন আমার মনে হয় আপনার উম্মত তা আদায় করতে পারবেনা। রাসুলে করিম সা. এ পরামর্শ গ্রহণ করে পুনরায় আল্লাহর দরবারে গিয়ে আরজ করলেন, আল্লাহতালা পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। ফেরার পথে পুনরায় হযরত মুসা (আঃ) জিজ্ঞেস করে আবার অনুরোধ করলেন। রাসুলে করিম সা. পুনরায় আল্লাহর দরবারে গিয়ে আরজ করে পাঁচ ওয়াক্ত কমালেন। এভাবে হযরত মুসা (আঃ) এর অনুরোধে রাসুলে করিম সা. আল্লাহতালার কাছ থেকে ৪৫ ওয়াক্ত কমিয়ে ৫ ওয়াক্তে আনলেন। এবার রাসুলে করিম সা. বললেন, আমার আর কমাতে লজ্জা লাগছে। আল্লাহতালা বললেন হে আমার হাবীব আমি তো আপনার অনুরোধে পয়তাল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দিলাম কিন্তু আপনার উম্মত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামজের সওয়াব প্রদান করব। সুবহান আল্লাহ। বর্ণনামতে পবিত্র মিরাজে হাজার বছরের পথ চোখের পলকে শেষ হয় এবং পবিত্র মিরাজে রাসুলে করিম সা. এর ২৭ বছর কেটে যায়। আর দুনিয়াবাসীর মনে হল রাতের সামন্য সময়। এটাই আল্লাহতালার কুদরত ও রাসুলে পাক সা. এর মোজেজা। রাসুলে করিম সা. ইন্তেকালের সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) বলেন বাহির জগতে রাসুলে পাক সা. এর হায়াত ৬৩ বছর হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁর হায়াত ৯০ বছর। উল্লেখ্য রাসুলে পাক সা. যখন দুনিয়া থেকে উর্দ্ধ আকাশে তশরীফ নিলেন তখন দুনিয়ার প্রাণ চলে যায়। দুনিয়ার সকল কিছু স্থির হয়ে পড়ে গাছের পাতা নড়ে না, জলে ঢেউ পড়েনা। সময় চলেনা। এক কথায় এ দুনিয়া প্রাণহীন হয়ে পড়ে। রাসুলে পাক সা. যখন দুনিয়াতে পুনরায় তশরীফ আনলেন আবার সকল কিছ স্বাভাবিক হয়ে উঠল। দুনিয়ার প্রাণ ফিরে এল। তাই দুনিয়াবাসীর জন্য কিছু সময়।
রাসুলে পাক সা. যখন মিরাজের কথা বর্ণনা করতে লাগল তখন অবিশ্বাসি কাফেররা উঠে পড়ে লাগে রাসুলে করিম সা. কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য। পথিমধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর সাথে আবু জেহেলের দেখা হলে আবু জেহেল বলল কেউ যদি দাবী করে রাতের সামন্য সময়ে বায়তুল মোকাদ্দেসে গেল অতঃপর সাত আসমান আরশ আজীম সফর করে আবার ফিরে এল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।