চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুসলিম হিসেবে আমাদের ঘরের বুক সেলফে কিছু বই সবসময় রাখা উচিত। যে বইগুলো পরিবারের সদস্যরা সবাই পড়বে। প্রতিটা মুসলিমের পড়া উচিত। আমাদের পড়ার অভ্যাস একদম চলে গেছে। কিন্তু ঠিকই প্রতিদিন ফেসবুকে এমন কিছু পড়ছি যা ঈমান দুর্বল করে দিচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে ইসলাম চর্চা বোরিং হয়ে যাচ্ছে, অন্য দিকে আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। সেজন্য আজকের এ পোস্টে কিছু বইয়ের লিস্ট দিচ্ছি, এগুলো পড়া উচিত। চাইলে অন্যকে গিফটও করতে পারবেন।
প্রতিটা বইয়ে ক্লিক করলে অনলাইনে অর্ডার করার লিংক পেয়ে যাবেন। সেই লিংকে গিয়ে অনলাইনে অর্ডার করে দেশের যেকোন প্রান্ত হতে ঘরে বসেই বই সংগ্রহ করা যায়।
ছোটবেলাতে ঘুমানোর সময় দাদা/দাদী, নানা/নানীরা নবী রাসূলদের অনেক গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো। এ ধরনের গল্পগুলো শুনতে যেমন চমৎকার, পড়তেও তেমনি সবারই অনেক আগ্রহ। কিন্তু এক সাথে গল্প খুজে পাইনা। বড়দের পাশাপাশি, আপনার ঘরের যে সন্তান বড় হচ্ছে, তার সেই বয়সটাতে এ বইগুলো পড়ানোর উচিত।
কাসাসূল কোরআন ১১জন নবী-রাসুলের জীবনী নিয়ে ১১টি বই বের করেছে। এ ১১খন্ডের বই প্রত্যেকটি মুসলিম পরিবারের বুকসেলফে অবশ্যই রাখা উচিত। বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মাদ (মূলঃ হিশাম আল আওয়াদি, রুপান্তরঃ মাসুদ শরীফ), বিশ্বনবী (গোলাম মোস্তফা), সীরাতে ইবনে হিশাম (মূলঃ ইবনে হিশাম, রুপান্তরঃ আকরাম ফারুক)
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে প্রতিদিন আমরা ইসলামী বিরোধী অনেক লেখা পড়ছি। প্রিয় নবী, এমনকি আল্লাহর বিরুদ্ধে খুব আজেবাজে লেখা পাওয়া যায় অনেক গ্রপে, যা প্রতিটা মুসলিমের কলিজাতে আঘাত করে। মনে জেগে উঠে জেদ। সেই জেদ থেকে অনেককে গালি দিতে দেখা যায়, যা আরেকটা বড় পাপ। নাস্তিকদের সেই সব লেখার জবাব দিতে হবে ঠান্ডাভাবে যুক্তি এবং রেফারেন্স দিয়ে। সেজন্য সেই বিষয়ের জবাবগুলো পড়া উচিত প্রতিটা মুসলিমদের। ঘরের সেলফেও রাখা উচিত। না হলে হয়ত, আপনার অজান্তেই নিজের ঘরে জন্ম হবে ইসলাম বিমুখ সন্তান।
সেই রকম কিছু বইয়ের নাম দিচ্ছি:
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ (আরিফ আজাদ), আরজ আলী সমীপে (আরিফ আজাদ), কষ্টিপাথর (ডা. শামসুল আরেফীন), জবানবন্দি -নাস্তিকের মুখোমুখি (নাইমুল ইসলাম), অবিশ্বাসী কাঠগড়ায় (রাফান আহমেদ), নাস্তিকের মনস্তত্ব (এস. এম. জাকির হুসাইন), বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান (মূলঃ ড. মরিস বুকাইলি, রুপান্তরঃ আখতার-উল-আলম )
দৈনন্দিন জীবনের আমলগুলো সবার জানা উচিত। সকল কাজকেই আমরা ইসলামের স্বীকৃত উপায়ে পালন করতে পারি। তাতে যেমন বরকত পাওয়া যাবে, সেই সাথে রয়েছে পাওয়া যাবে অনেক সওয়াব। মুসলিম হিসেবে দৈনন্দিন জীবনে অবশ্যই করনীয় কাজগুলো পালন না করলে একজন অমুসলিমের সাথে আপনার হয়ত কোন পার্থক্য পাওয়া যাবেনা। আবার এমন হতে পারে, জাহান্নামে জায়গাপ্রাপ্তদের তালিকাতে আপনিসহ আপনার পরিবারের লোকদের নাম চলে যাবে।
মাসলা মাসায়েল বিষয়ক কিছু বইয়ের নাম দিচ্ছি:
রাসুলুল্লাহ (সা:) এর নামায (আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)), জান্নাত লাভের সহজ আমল (মোহাম্মদ আবদুল কাদের), সালাত, দু’আ ও যিকর (ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর), কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিষয়ভিত্তিক দোয়া দরূদ ও আমল (মাওলানা মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম)
আমাদের দেশে শুধু আমাদের দেশে বললে ভুল হবে, এ উপমহাদেশেই বহু বছর ধরে কিছু হাদিস প্রচলিত রয়েছে, এবং সেই অনুযায়ি আমাদের বয়োজ্যোষ্ঠরা আমল করে আসছে। যেগুলো বর্তমানে গবেষণা করে প্রমাণিত যে, সেগুলো ছিলো জাল হাদিস। আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তির জন্য সঠিক হাদিস অনুযায়ি আমল করা জরুরী।
প্রচলিত জাল হাদীস নিয়ে বাংলাতে প্রকাশিত বই:
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ছালাত (মুযাফফর বিন মুহসিন), তাফসীরে কুরআনে জাল হাদীছ (মাওলানা নিযামুদ্দীন আসীর আদরবী), যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ (আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)), জাল হাদীস (মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম, আল্লামা গোলাম আহমাদ মোর্তজা)।
নিশ্চয়ই রাসূল (সা:) তাঁর জীবদ্দশায় যা যা পালন করেছেন, সেগুলোর সবকিছুই উম্মতের জন্য বরকতময়। রাসূল (সা:) নিজে অসুস্থ হলে কিংবা সেই সময় অন্যরা অসুস্থ হলে কিভাবে চিকিৎসা করতেন সেগুলো যদি আমরা এ যুগে এসেও অনুসরণ করি, তাহলে অবশ্যই আল্লাহর রহমতে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবো। রাসূল (সা:) হিজামার কথা বলেছেন, আবার বিভিন্ন সময় কোরআনের বিভিন্ন আয়াত পড়ে চিকিৎসা করতেন।
রাসূল (সাঃ) দেখিয়ে দেওয়া চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বাংলাতে লেখা বই:
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর স্বাস্থ্যবিধান ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান (মূলঃ মোহাম্মদ আনোয়ার ইবনে আখতার, রুপান্তরঃ আল্লামা গোলাম আহমাদ মোর্তজা), ইসলামী মনোবিজ্ঞান (মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন ইসলামী), সুন্নাত ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে মিসওয়াক (মাওলানা নাজমুছ ছলিহীন), হিজামা (রাসূল সাঃ এর চিকিৎসা পদ্ধতি) (ডা. মোঃ ফাইজুল হক), আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আল - কুরআন (ইঞ্জিনিয়ার শফি হায়দার সিদ্দিকি)
কুরআনকে ঘরে শুধু সাজিয়ে রাখার জন্য নাজিল করা হয়নি। নিয়মিত কোরআন তেলোওয়াতে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। আবার এ কোরআন যদি বুঝে পড়া যায়, তবে বরকত অবশ্যই আরও বেশি। কোরআন বুঝে পড়ার জন্য তাফসির পড়া উচিত। অর্থ, ব্যাখ্যা, এবং শানে নযুল পড়া জরুরী।
বাংলা ভাষাতে বিখ্যাত কয়েকটি তাফসির বিষয়ক বই:
তাফসীরে ইবনে কাছীর ১ম খণ্ড (আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ.), কোরান শরিফ : সরল বঙ্গানুবাদ (বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান), সহজ কুরআন ১ম খণ্ড (আসিফ সিবগাত ভূঞা), কালার কোডেড উচ্চারণ ও অনুবাদ সহ সহজ কোরআন (মুহাম্মদ ইব্রাহীম ইবনে আদম)
ইসলামী বিভিন্ন বীরত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে, গর্ব করার মত ইসলামীক অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে। যা মুসলমান হিসেবে সবার পড়া উচিত। তাহলে সেই সোনালী অতীতকে ফিরিয়ে আনতে অনুপ্রেরণা পাওয়া যাবে। এ ঘটনাগুলো বড়দের পাশাপাশি ঘরের কিশোর- কিশোরীদের পড়া আরও বেশি জরুরী। না হলে বর্তমানের মুসলমানদের দুর্বল অবস্থা দেখে বড় হবে।
ইসলামী ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিষয়ক বই:
আরাকানের মুসলমানদের ইতিহাস (ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ), স্পেনে মুসলমানদের ইতিহাস (এ. এইচ. এম. শামসুর রহমান), খলিফা হত্যাকাণ্ড -২০ জন খলিফার হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস (মূলঃ ড. কামেল কিলানি , খালিদ আস-সায়িদ, রুপান্তরঃ ইশতিয়াক আহমাদ), দ্য স্পিরিট অব ইসলাম (স্যার সৈয়দ আমীর আলী), তাতারীদের ইতিহাস (ড. রাগেব সারজানী), জিন ও ফেরেশতাদের বিস্ময়কর ইতিহাস (আল্লামা জালালউদ্দিন সুয়ূতী , আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ.), ইসলাম : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (মূলঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, রুপান্তরঃ শওকত হোসেন), সুলতান কাহিনি (তামীম রায়হান)
দৈনন্দিন জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে, অর্থনৈতিক কাজ কারবার। বর্তমান দুনিয়াতে প্রচলিত অর্থনৈতিক কাঠামো হারাম পদ্ধতিতে চলছে। শয়তান হারাম বিষয়টাকে অনেক আকর্ষনীয় করে আমাদের চোখে তুলে ধরে। আমাদের সবার অবশ্যই জেনে রাখা জরুরী, অর্থনীতির হালাল- হারাম বিষয়ক দিকগুলো। তাই এ সম্পর্কিত বইগুলো অবশ্যই ঘরে থাকা জরুরী।
ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ক কয়েকটি বইয়ের নাম এখানে যুক্ত করা হলো:
হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতা (মিরাজ রহমান), ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং (ইকবাল কবীর মোহন), ব্যবসা-বাণিজ্যের ফাযায়িল ও মাসায়িল (শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী), ইসলামে অর্থব্যবস্থা (ড. মোঃ ইব্রাহীম খলিল), বীমা-তাকাফুল -প্রচলিত পদ্ধতি ও শরয়ী রূপরেখা (জাস্টিস মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী), রিযিক নির্ধারিত উপার্জন আপনার দায়িত্ব (ড. আলী তানতাবী)
একটা বয়সে সবাই থ্রিলার বিষয়ক বই পড়াতে অতি আগ্রহী হয়ে উঠে। পাঠ্যপুস্তকের বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে নেশার মত এসব থ্রিলার বিষয়ক বই পড়তে দেখা যায়। আপনি কি খবর রাখছেন, এসব থ্রিলার বিষয়ক বইয়ের মাধ্যমে অশ্লীল কিংবা বিধর্মী অনেক কিছুই আমাদের সন্তানদের মগজদের ঢুকে যাচ্ছে কিনা? থ্রিলার বিষয়ক এসব বইয়ের নেশা যেহেতু দূর করা যাবে না, তাই তাদের হাতে তুলে দিন ইসলামী থ্রিলার বিষয়ক বই।
ইসলামী থ্রিলার বিষয়ক কিছু বইয়ের নাম সাজেস্ট করছি:
মিরাতুল মামালিক : দ্য অ্যাডমিরাল (মূলঃ সাইয়িদি আলি রইস, রুপান্তরঃ সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর), সুবোধ (আলী আব্দুল্লাহ) , আরব কন্যার আর্তনাদ (মূলঃ এনায়েতুল্লাহ আল্তামাশ, রুপান্তরঃ শহীদুল ইসলাম), স্পেনের ঈগল (নসীম হিজাযী)
স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান, আত্নীয় নিয়ে পরিবার। পরিবারের কার প্রতি কি দায়িত্ব পালন করবেন, কার কি হক, কিভাবে চলবে সংসার জীবন, সব বিষয়েই কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। রাসূল (সা:) জীবদ্দশাতে আল্লাহর নির্দেশমত তার আপন পরিবারের প্রতি কর্তব্যপালন করে দেখিয়েছেন। এ বিষয়গুলো আমরাও আমাদের সাংসারিক জীবনে পালন করলে সেই পরিবারের আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে, পরিবারে থাকবে শান্তি।
পারিবারিক জীবন বিষয়ক ইসলামী দিকনির্দেশনা মূলক বাংলা বইয়ের নাম:
বন্ধন (নুমান আলী খান), কুররাতু আইয়ুন: যে জীবন জুড়ায় নয়ন (ডা. শামসুল আরেফীন), বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর (মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ), লাভ ম্যারেজ (ড. আলী তানতাবী)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।