দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর: দা‘ওয়াত: ‘দা‘ওয়াত’ আরবী শব্দটির অর্থ হচ্ছে, ডাক, আহবান ও প্রচার। ‘তাবলীগ’ শব্দটিও আরবী। এর মানে হচ্ছে, প্রচার, ঘোষণা বা পৌঁছে দেওয়া, ‘দ্বীনী দা‘ওয়াত’ তথা ধর্মের বাণী প্রচার করা বা পৌঁছে দেওয়া। সুতরাং সহজবোধ্যভাবে আমরা বলতে পারি, ‘দা‘ওয়াত ও তাবলীগ’ মানে ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসার এবং ইসলামের বাণী –পয়গাম, আমল ও আদর্শ সারা বিশে^ পৌঁছে দেওয়া, ছড়িয়ে দেওয়া।’
দা‘ওয়াত কার জন্য?
আরেকটি অনিবার্য প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্মের দা‘ওয়াত কাকে দেওয়া হবে? বাস্তবতার নিরীখে তার জবাব হচ্ছে, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিষেশে সকলের প্রতি ধর্মের আহŸান পৌঁছে দিতে হবে। অমুসলিমদের প্রতি দা‘ওয়াত দিতে হবে, মূলধর্ম গ্রহণের তথা ঈমান গ্রহণের এবং মুসলিমদের প্রতি দা‘ওয়াত হবে, গৃহীত ধর্ম ও ঈমানের দাবী তথা মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (স)-এর সঙ্গে কৃত চুক্তি অনুযায়ী নেক আমল করার এবং তা শিক্ষাদীক্ষা ও অনুশীলনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার।
উল্লেখ্য, ‘কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পাঠ করা মানেই হচ্ছে, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (স)-এর সঙ্গে এমন চুক্তি বা কনাট্রাক্ট করা যে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় বিধি-বিধান মুহাম্মদ (স)-এর আদর্শ অনুযায়ী মেনে চলবো।
এ ক্ষেত্রে সমকালীন বিজ্ঞ গবেষক মুফতী(Ñযাঁর বহুমুখী তাহকীক-গবেষণা এ যুগের বিজ্ঞ মুফতিদের কাছে গৃহীত হয়ে আসছেÑ) হযরত শায়খ রশীদ আহমদ লুধিয়ানী (র) ‘ফরযে কিফায়া’ ‘দা‘ওয়াত বা তাবলীগ সম্পর্কে বলেন:
“দা‘ওয়াত ও তাবলীগ-এর দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে ‘ফরযে কিফায়া’। তার অর্থ হচ্ছে, পৃথিবীতে যদি এমন কোনো স্থান পাওয়া যায়, যার অধিবাসীদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বোঝা যায় যে, ‘ইসলাম’ ধর্ম সম্পর্কে তাদের জানা নেই। তেমন ক্ষেত্রে/স্থানে, সকল মুসলমানের জন্য ফরয তারা এমন কিছুসংখ্যক মুসলমানকে তাদের কাছে পাঠাবে যারা তাদেরকে ‘ইসলাম’ এর দা‘ওয়াত দিয়ে মুসলমান বানাবে এবং তারপর তাদেরকে ইসলামের বিধি-বিধান ও আবশ্যকীয় বিষয়াদি শিক্ষা দেবে। মুসলমানদের মাঝে যদি কেউ এ ফরয আদায় না করে, তা হলে সকলেই গোনাহগার হবে। আর যদি শুধু একজন মুসলমানও এ দায়িত্ব পালন করে, তা হলে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে।
বর্তমান সময়ে পুরো পৃথিবীর কোনো দেশেরই এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ইসলামের দা‘ওয়াত পৌঁছানো মুসলমানদের ওপর ‘ফরয কিফায়া’ হতে পারে। তার কারণ, এ যুগে ‘ইসলাম’-এর খ্যাতি-প্রসিদ্ধি নিজেই ‘দা‘ওয়াত’ হয়ে পুরো পৃথিবীর আনাচে-কানাচে বিস্তৃত, প্রসারিত হয়ে আছে। বিশ^জগতের প্রতিটি মানুষই ‘ইসলাম’ নামে যে-একটি ধর্ম আছে তা জানে। যে-কারণে বর্তমানে উক্ত ফরয ও দায়িত্ব খোদ তাদের ওপরই বর্তায় যে, বিভিন্ন ধর্মের অনুসন্ধান করে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝে, সত্য-সঠিক ধর্মটি গ্রহণ, অনুসরণ করবে। তেমন চিন্তা ও পার্থক্যজ্ঞান মহান আল্লাহ্ প্রত্যেকটি মানুষকেই দান করেছেন। যে-কারণে শরীয়তের বিধান হচ্ছে,
‘কোনো মানুষ যদি এমন স্থানে জন্ম নেয় যেখানে অন্য কোনো মানুষের বাস নেই; তা হলে সাবালক হওয়ার পর তারও ফরয দায়িত্ব হবে, সে আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা করে তাঁর সত্তার প্রতি বিশ^াস স্থাপন করবে’।”(আহসানুল ফাতাওয়া: খ-৯, পৃ-১১৩)
বিজ্ঞ গ্রন্থকার অতপর লিখেছেন,“একইভাবে যেসব লোক জন্মগতভাবে মুসলমান, মুসলমানের গৃহে লালিত-পালিত হয়ে বড় হচ্ছে, সাবালক হচ্ছে; উক্ত ফরয ও দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায় যে, তারা নিজেরাই ইসলাম-এর আদেশ, নিষেধ ও বিধি-বিধান জেনে নিয়ে সে-মোতাবেক আমল করবে। অন্য মুসলমানদের ওপর এটা ফরয ও দায়িত্বভুক্ত নয় যে, তারা দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদেরকে ইসলাম-এর বিধি-বিধান শিক্ষা দেবে! কোনো ব্যক্তির ‘মুসলমান’ হওয়া মানেই হচ্ছে,“সে ‘ইসলাম’-এর যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে নিয়েছে। যে-কারণে সে কোনো কাজই ‘ইসলামী আইন’Ñপরিপন্থী করবে না।”
ইসলাম-এর আইন-বিধান কি কি? তা জেনে নিয়ে সে মোতাবেক কাজ,আমল করা তার নিজের ফরয দায়িত্ব; অন্য কারও নয়। একই কারণে কেউ আইন-বিধান পরিপন্থী কোনো কিছু করে, এমনটি বলে শাস্তি থেকে বাঁচতে পারে না যে, “আমার উক্ত আইন-বিধান বা মাসআলা জানা ছিল না।”(প্রাগুক্ত:পৃ-১১৪)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।