Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি

| প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

অ্যান্টিবায়োটেক ঠিকমত কাজ না করায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ মৃত্যু বরণ করছে। এটা এখন বড় ধরনের বৈশ্বিক উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। প্রায় একশ বছর ধরে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে অ্যান্টিবায়োটিক অব্যর্থ ও অপরিহার্য প্রতিষেবক হিসাবে ভূমিকা রাখলেও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর আগের মত কাজ করছে না। গবেষকদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে তা এখন আর প্রত্যাশিত সুফল দিচ্ছে না। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট ও ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। নানা কারণে দেহে এই ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট ও ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। অ্যান্টিবায়োটিক ক্রমশ অকার্যকর হয়ে পড়ায় এসব রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ও ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও রক্তের সংক্রমণের জন্য দায়ী সাতটি আলাদা ধরনের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়, যাতে বলা হয়েছে, বিশ্বের কয়েকটি দেশের রোগীদের ওপর দুটি প্রধান অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এগুলো আর কাজ করছেনা। এদের একটি কার্বাপেনেস। নিউমোনিয়া, রক্তে প্রদাহ ও নবজাতকদের দেহে প্রদাহের মতো রোগ নিরাময়ে এটি ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ না হওয়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, চিকিৎসকরা এ ধরনের ওষুধ বেশি ব্যবহার করায় এবং রোগীরা ওষুধ ঠিকমত না খাওয়ায় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। মূত্রতন্ত্রের প্রদাহের জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে গত শতকের আশির দশক থেকে, তা এখন একেবারেই কাজ করছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়া তার ডিএনএকে সামান্য পরিবর্তন করে টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়িয়েছে। একে বলা হয় ‘সুপারবাগস’। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বহুদিন ধরে সর্তক করে যাচ্ছে যে, এই সুপারবাগস দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক যদি কাজ না করে এবং নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের উদ্ভব না হয়, তাহলে অনেক রোগই আগের মতো প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে। তেমন অবস্থায় বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর মিছিল শুরু হবে। দলে দলে মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যর্থতা পদে পদে প্রমানিত হচ্ছে এবং মানুষ ব্যাকটোরিয়া, প্যারাসাইট ও ভাইরাসজনিত রোগে ক্রমবর্ধমান হারে মৃত্যু বরণ করছে। অন্যান্য দেশে এ ব্যাপারে দ্রুত সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে। সর্বাগ্রে ডাক্তার ও রোগীর সচেতনতা প্রয়োজন। অভিযোগ রয়েছে, আমাদের দেশের অধিকাংশ ডাক্তার বাছ-বিচার না করে প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেন। অনেক সময় দ্রুত নিরাময়ের জন্য উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকও দেয়া হয়। উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কারণে পরে অনুরূপ রোগের ক্ষেত্রে স্বল্পমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করেনা। আবার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ব্যপারে রোগীদের গাফিলতিও লক্ষ্য করা যায়। তারা রোগ একটু উপশম হলেই আর অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পন্ন করেনা। আরেকটি প্রবণতাও লক্ষ্যযোগ্য। যে যেমন ইচ্ছে ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায়। উন্নত দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক কেন, কোনো ওষুধই বিশেষজ্ঞ ও রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রী হয় না। এমতাবস্থায়, আমাদের দেশের মানুষ কতটা শংকা ও ঝুঁকির মধ্যে আছে, সহজেই অনুমেয়।
সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা, প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও ব্যবস্থা এই শংকা ও ঝুঁকি থেকে আমাদের অনেকটাই রেহাই দিতে পারে। দেহে যাতে ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট ও ভাইরাসে সংক্রমণ না হতে পারে, সে ব্যাপারে সকলেরই সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যকর ফল দিতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট ও ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ব্যাপারে হাসপাতালের দায়িত্বশীল ডাক্তারসহ সকল ডাক্তারের সচেতন হতে হবে। যে রোগীর জন্য যে মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন, তাই দিতে হবে। রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ব্যাপারে সর্তক হতে হবে। হাতুড়ে ডাক্তার কিংবা ফার্মেসির মালিক-কর্মচারীর পরামর্শে নয়, রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে এবং ফোর্স শেষ করতে হবে। কোনোক্রমেই রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। বিক্রীও করা যাবে না। এ ব্যাপারে শক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ফার্মেসির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতার দু:খজনক অভাব রয়েছে, কাজেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে কোথায় কি ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, অকার্যকর অ্যান্টিবায়োটির বিকল্প কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক কোথায় উদ্ভাবিত হচ্ছে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। রোগ-ব্যাধি ও তাতে মৃত্যুর বিষয়টি এবং বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বা হচ্ছে , তা থেকে সরকার চোখ ফিরিয়ে রাখতে পারে না। আমরা এদিকে সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করি।



 

Show all comments
  • Md moshiur rahman ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম says : 0
    right
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন