পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডুবতে বসেছে ড. কামাল হোসেনের উদীয়মান সূর্য। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল দেশ-বিদেশে নির্লোভ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে সমাদৃত। বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে রয়েছে তার সুনাম যশ খ্যাতি। কিন্তু এমপির সুযোগ-সুবিধার ‘লোভ’ সংবরণ করতে না পেরে দলের দুইজন নেতা শপথ গ্রহণ করায় মূলত তার পরিচ্ছন্ন ইমেজে টান ধরে। বিএনপির প্রবীণ নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন ‘কেন শহীদ জিয়ার আদর্শের বাইরের এই সুবিধাবাদীদের’ নেতা মানা হচ্ছে? ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব:) অলি আহমদ ঐক্যফ্রন্টে সরকারের এজেন্ট রয়েছে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘ড. কামালের সঙ্গে যারা আছেন তাদের অনেকে সরকারের কাছ থেকে পয়সা নিয়েছেন। কোন বাসায় পয়সা নিয়েছেন, কে নিগোসিয়েট করেছেন এ তথ্যগুলো আমার কাছে আছে।’ জাঁদরেল এই দুই নেতার বক্তব্য বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের চিন্তার রেখায় ভাঁজ টেনে দিয়েছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ড. কামাল হোসেন এখন কোন পথে হাঁটবেন?
বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১০৭২ সালের ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ড. কামাল হোসেন। জাতিসংঘের হয়ে বিশ্বের দেশে দেশে নানা দায়িত্ব পালন করায় দেশের আমজনতার কাছে তার মর্যাদা অন্য রকম। বিশেষ করে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি চর্চার কারণে তিনি বরেণ্য। কিন্তু সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের লোভে ডুবতে বসেছে গণফোরামের উদীয়মান সূর্য। সংবিধান প্রণেতা কামাল হোসেনের সামনে এখন একমাত্র পথ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ। তিনি কি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়া দুই নেতার বিরুদ্ধে সেটা ব্যবহার করে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বিএনপি এবং দেশের মানুষের কাছে নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে পারবেন? ডুবন্ত সূর্যকে জাগিয়ে তুলতে পারবেন? অবশ্য শপথ নেয়ার পর মোকাব্বির খান এমপি গতকাল বৃহস্পতিবার মতিঝিলের চেম্বারে এলে কামাল হোসেন রাগে-ক্ষোভে তার মুখ দর্শন না করে কর্মীদের দিয়ে বের করে দেন। প্রশ্ন হলো যারা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা-মোনাফেক-বেঈমানী করতে পারেন; তাদের তিনি প্রার্থী করার প্রেসক্রিপশন দিলেন কেন? যিনি মানুষ চিনতে পারেন না তিনি কেমন নেতা?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের প্রেসক্রিপশনে ঐক্যফ্রন্টের নমিনেশন দেয়া হয় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর মৌলভীবাজার-২ (ধানের শীষ) ও মোকাব্বির খান সিলেট-২ (উদীয়মান সূর্য)। নির্বাচিত হওয়ার পর এমপির সুবিধার লোভ সংবরণ করতে না পেরে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা শপথ নেন। শীর্ষ নেতা হিসেবে কামাল হোসেন পড়ে যান বিব্রতকর অবস্থায়। বিএনপি এবং গণফোরামের নেতারা শপথ নেয়া দুই নেতাকে ‘বেঈমান’ ‘মোনাফেক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এমনকি একজনের বিরুদ্ধে দলীয় প্যাড চুরির অভিযোগও তোলা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হিসেবে শপথ নেয়াই মূলত শীর্ষ নেতা ড. কামালকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের কোনো দল নেই। ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারেই ড. কামালের কথায় বিএনপি তাকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী করে। আর উদীয়মান সূর্য নিয়ে প্রার্থী হন লন্ডন প্রবাসী মোকাব্বির খান। মনোনয়ন দাখিল করে মোকাব্বির খান লন্ডন চলে যান। সিলেট-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা হাইকোর্টে বাতিল করলে ড. কামাল হোসেন ফোন করে লন্ডন থেকে মোকাব্বিরকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। এমপি হওয়ার পর তারা দু’জনই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেন। বর্তমান অবস্থায় একজন এমপি বিপুল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্লট-ফ্ল্যাট-ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি পান। অন্যদিকে সব মিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকা সম্মানী পান। সেই টাকার লোভ সংবরণ করতে না পারায় মূলত দুইজন ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি ধুলায় মিশিয়ে দেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীসহ দলের নেতারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী দুই এমপিকে বিশ্বাসঘাতক, মোনাফেক, বেঈমান হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ধানের শীষ নিয়ে এমপি হওয়া সুলতান মনসুর শপথ নেয়ার আগে গণফোরামের নেতাদের বলেন, ‘আমি কমিটেড’ শপথ নিতেই হচ্ছে। কার কাছে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এমপি হওয়া সুলতান মনসুর ‘কমিটেড’ তা কি ড. কামাল জানতে চেয়েছেন? মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধে দলীয় প্যাড চুরির অভিযোগ তুলেছেন দলের নির্বাহী সভাপতি সব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু। দলের প্যাড যে চুরি করতে পারেন তাকে ড. কামালের মতো বিজ্ঞজন নমিনেশন দিলেন কেন?
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে আইন শাস্ত্রের সব ডিগ্রি নেয়া ড. কামাল হোসেন ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছিলেন কর্মী। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় ১৯৭১ সালে ৩০ মার্চ পাকিস্তান বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেশে ফিরে হন আইনমন্ত্রী। দেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করায় তিনি ‘সংবিধান প্রণেতা’ হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে ভূমিকা রাখা কামাল হোসেন ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। ১৯৮৩ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে কারাবরণ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর শেখ হাসিনা নির্বাচনে ‘সূ² কারচুপির’ অভিযোগ তুললে ড. কামাল দ্বিমত পোষণ করেন। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বিতর্কের মুখে পড়েও নিজের অবস্থান অটুক রাখেন। তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দেয়া হলে তিনি নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করে অরাজনৈতিক সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ফোরাম’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ‘তান্ত্রিক’ শব্দটি বাদ দিয়ে গঠন করেন গণফোরাম। ড. কামাল দীর্ঘদিন থেকে দুর্নীতিমুক্ত পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ক্যাম্পেইন করছেন। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠন করেন। অতঃপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন। পরবর্তী ঘটনা সবার জানা। বিএনপির নেতারা বলছেন, সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের এলাকায় যা অবস্থা তাতে এমপি দূরের কথা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদে প্রার্থী হয়েও বিজয়ী হতে পারবেন না। মৌলভীবাজার-২ ও সিলেট-২ আসনের অন্য নেতাদের বঞ্চিত করে এমন দু’জন সুবিধাবাদীকে প্রার্থী করায় তারা নির্বাচিত হয়ে ড. কামাল, মির্জা ফখরুলদের মুখে কালি লেপন করেছেন। বিতর্কিত দুই নেতার কারণে বর্তমানে জিয়ার আদর্শের বাইরে যারা ঐক্যফ্রন্টে রয়েছেন তাদের নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ক্যাম্পেইনার ড. কামাল হোসেন সংবিধান প্রণেতা। তার প্রণীত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি- (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে’। প্রশ্ন হলোÑ ড. কামাল হোসেন এখন কি করবেন? নিজের প্রণীত সংবিধান ব্যবহার করে কি তিনি দুই লোভাতুর এমপির আসন শূন্য করার আইনি লড়াইয়ে নামবেন? নাকি নীরব থাকবেন? সারা দেশের বিএনপি, গণফোরাম, ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের শরিক সব দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির হোসেনের শপথ নেয়াকে ঐক্যফ্রন্টের পিঠে ছুরি মারার নামান্তর বলছেন। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় দুই এমপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। ড. কামাল হোসেন কি ঐক্যফ্রন্টের ইমেজ রক্ষায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী দুই এমপির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কর্ম করতে না পারে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়া দুই এমপির সদস্যপদ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী থাকবে কি থাকবে না সে প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন ভিন্ন মত দিচ্ছেন। ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মনে করেন, দুই কারণে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হতে পারে। ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য যদি ফ্লোর ক্রসিং করেন; অথবা ৯০ দিনের মধ্যে যদি শপথ না নেন তাহলে সদস্য পদ যাবে। তবে দল বহিষ্কার করলেও সদস্যপদ থাকবে। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। সরকারি দলের এমপিরা কোনো ইস্যুতে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তখন ৭০ অনুচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাবে। তাদের সদস্যপদ থাকবে না। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে তাদের সদস্যপদ যাবে না।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, গণফোরামের দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দুই এমপি শপথ নেয়ায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ তাদের আটকাবে। গণফোরাম এনডোর্স না করলে তাদের সংসদ সদস্যপদ থাকবে না। এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার প্রশ্নে দেশে এ ধরনের সঙ্কট আগে কখনো হয়নি। এটির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। ৭০ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য হলো এমপিরা যাতে দলবদল করতে না পারেন। সেদিক থেকে দুইজনের সদস্যপদ আটকে যাওয়ার কথা। তবে স্পিকার যদি মনে করেন ৭০ অনুচ্ছেদ ভঙ্গ হয়েছে তখন তিনি বিষয়টি শুনানির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাবেন। কমিশনের শুনানিতে সন্তুষ্ট না হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন।
এর আগে দলের বিরুদ্ধে যাওয়ায় বিভিন্ন সময়ে সংবিধানের ৭০ অনুসারে অনেক এমপির সদস্যপদ গেছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বহিষ্কারের সূত্র ধরে সদস্যপদ হারান আওয়ামী লীগের এমপি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ২০০২ সালে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করায় অষ্টম সংসদে বিএনপির মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান সদস্যপদ হারান। সপ্তম সংসদে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় যোগদান করায় রাজশাহীর ডা. মো. আলাউদ্দিন ও সিরাজগঞ্জের হাসিবুর রহমান স্বপনের সদস্যপদ চলে যায়। তারও আগে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদানের কারণে মেজর জেনারেল (অব:) মাহমুদুল হাসানসহ কয়েকজন সদস্যপদ হারান। আবার জাতীয় পার্টি দ্বিখÐিত হওয়ায় কয়েকজন এমপির সদস্যপদ নিয়ে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলে। এখন কামাল হোসেন ডুবন্ত সূর্য রক্ষায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে লড়াই করবেন; নাকি নীরব থাকবেন সেটা দেখতেই মুখিয়ে আছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।