বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চরম অবহেলার শিকারে পরিণত হয়েছে উলিপুর চরাঞ্চলের ২৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত এক যুগ ধরে এ সমস্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ক্লাস চলছে ১ জন অথবা ২ জন শিক্ষক দিয়ে। জোড়া তালি দিয়ে চলছে এখানকার পাঠদান কার্যক্রম। কোন কারণে শিক্ষক না আসলে বন্ধ থাকে স্কুল গুলো। ফলে চরের প্রায় ১৫ হাজার শিশু শিক্ষার্থী শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যুগের পর যুগ।
চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ের শূন্য পদ নিয়ে ডেপুটেশন অথবা বদলীর নামে কর্তৃপক্ষের অর্থ বাণিজ্যের কারণে বিদ্যালয় গুলো শিক্ষক শূন্য হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। আর শূন্যপদ পূরণে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা এখন অনীহার কাতারে। কর্তৃপক্ষের এমন বিমাতা সুলভ আচরণে চরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। স¤প্রতি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুখেরবাতীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আকস্মিক পরির্দশনে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে ৪ দিন ধরে অনুপস্থিত দেখতে পান এবং তাকে সাময়িক বরখাস্তসহ ৪ দিনের বেতন কর্তন করেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসলেও শিক্ষক উপস্থিতি ও শূন্য পদ পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, মশালের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষক শূন্য হওয়ায় দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। গত কয়েক দিন আগে অন্য ২স্কুল থেকে মোহাম্মদ আলী ও আল মামনুর রশিদকে আপাতত এনে স্কুলটি চালু করা হয়েছে। চর বাগুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে ৫ ক্লাসের শিক্ষার্থীদের এক রুমে বসিয়ে ক্লাস করছেন সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকসহ ৪ শিক্ষকের পদ গত এক যুগ ধরে শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক শামছুন্নাহার শিখাকে ডেপুটেশনে এবং ২০১৭ সালে সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বিপিএড প্রশিক্ষণে চলে গেলে অপর সহকারী শিক্ষক শাহাজাদী বেগমকে বদলী করলে শিক্ষক শূন্য হয়ে স্কুলটি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকে। প্রশিক্ষণ শেষে আনোয়ারুল ইসলাম ফিরে এসে স্কুল চালু করেন এবং গত ৫ বছর ধরে একাই স্কুলটি চালাচ্ছেন। যেদিন বিদ্যালয়ে আসতে পারেন না সেদিন বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকে বলে জানান তিনি। শিক্ষার্থী সাকিব হাসান, ফরহাদ রেজা, রহিমা বেগম ও শামছুন্নাহার জানান, স্যার না আসলে স্কুল বন্ধ থাকে। এ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে আসবাব পত্র, বসার বেঞ্চ, খাবার পানি নলকূপ ও পায়খানার ব্যবস্থা নাই বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
নামাজের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন হাজারী চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গুজিমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন গুজিমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দই খাওয়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাডোবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চেরাগীর আলগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় একজন করে শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। একি চিত্র চরের প্রতিটি স্কুলে। উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়, উপজেলার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫৩৮টি এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ ২৬৯টি, সহকারী শিক্ষক ১১৫৬টি। ২২ জন প্রধান শিক্ষকসহ ১৩৭ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ শূন্যপদ নদী বেষ্টিত ২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চরাঞ্চলে ২৭ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৩৭টি। কর্মরত শিক্ষক রয়েছে ৩৬ জন। ১১ জন প্রধান শিক্ষকসহ ৮৮ জন শিক্ষকের পদ প্রায় কয়েক বছর ধরে শূন্য রয়েছে। কর্মরত ৩৬ জনের মধ্যে কয়েক জন শিক্ষক ডেপুটেশনে রয়েছেন। এছাড়া নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলে কেউ চরের স্কুলে যেতে চান না। ২/১ জনকে চরাঞ্চলে পোস্টিং দিলে অদৃশ্য তদবিরের কারণে তাও সম্ভব হয় না। ফলে বছরের পর বছর চরের স্কুল গুলোতে শিক্ষক শূন্যতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সুখেরবাতী চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডির সভাপতি আব্দুস সবুর জানান, চরের শিক্ষকদের জন্য চর ইনসেন্টিভসহ বিদ্যালয় ভবনের সাথে শিক্ষক কোয়াটার নির্মাণ করলে চরে শিক্ষক সঙ্কট থাকবে না। চর বাগুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডির সভাপতি লিয়াকত আলী অভিযোগ করে বলেন, চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ে প্রতি কর্তৃপক্ষের এমন নিষ্ঠুর ও বিমাতা সুলভ আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোজাম্মেল হক শাহ চরাঞ্চলে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক সঙ্কটে পড়েছে স্বীকার করে বলেন, শিক্ষকের অভাবে মশালের চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তিনি শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি চালু করেছেন। দ্রুত শিক্ষক সঙ্কট সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।