Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অগ্নি নিরাপত্তা : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকান্ড ও ব্যাপক হতাহতের ঘটনা জনমনে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডে তিরিশজনের বেশি মানুষের মৃত্যু ও শতাধিক মানুষের ঝলসে যাওয়ার শোক ও অপূরণীয় ক্ষতির শোক না কাটতেই গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটে আগুন লেগে আবারো ভস্মিভূত হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে ২০১৭ সালেও এই মাকের্টে আগুন লেগে ব্যবসায়ীরা সর্বস্ব হারিয়েছিল। সে সময় আগুন লাগার পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের নাশকতার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছিল। সে সময়কার তদন্ত রিপোর্টে কী ছিল, তদন্তের সুপারিশমালা বাস্তবায়নে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা’ আমাদের জানা নেই। তবে নানা ইস্যুতে দেখা গেছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও যথাযথভাবে মানা হয়নি। গত কয়েক বছরে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে ২০১৮ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ও নির্দেশনাও বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষার্থী শিশুদের দেশ কাঁপানো এমন একটি আন্দোলনের পরও নিরাপদ সড়কের দাবি পূরণ হয়নি। গত ৮ মাসে সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চালনার শিকার হয়ে যাত্রী ও পথচারীদের মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক জরিপ রিপোর্টে দেখা যায়, গত ৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু এবং ২ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এ সংখ্যা আগের দুই বছরের একই সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
সড়কে দুর্ঘটনার হার এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যাওয়ার পেছনে সড়ক পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকর অবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষিত হওয়াকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। একেকটি মমার্ন্তিক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার বিব্রত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং অবস্থার উন্নয়নে দাবি পূরণের পাশাপাশি নতুন নতুন নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়নের আদৌ কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। এ কারণেই সড়কে নৈরাজ্য, দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বহুতল ভবন নির্মাণের বিল্ডিং কোড মানা হয় না, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশনা শুধুই কাগজে কলমে, বাস্তবায়নের কোনো আগ্রহ বা নিশ্চয়তা দেখা যায় না। একেকটি দুর্ঘটনার পর ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়, গণপরিবহনের সংকটে অফিসযাত্রী ও কর্মজীবী মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়েই ট্রাফিক পুলিশের অভিযান শিথিল করতে হয়। আবারো রাস্তায় দাবড়ে বেড়ায় ফিটনেস বিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন বেপরোয়া গাড়ি চালক। সড়কে, মার্কেটে ও বহুতল ভবনে মৃত্যুর ফাঁদ ও জিম্মিদশা থেকে মুক্তির কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ দেখতে চায় দেশের মানুষ।
রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকান্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অগ্নি নিরাপত্তায় একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বহুতল ভবনে অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে হাইরাইজ ভবন নির্মাণ করতে হবে, অগ্নি দুর্ঘটনা এড়ানোর পরামর্শগুলো মানা হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, ভবনগুলোর অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা সম্পর্কিত ক্লিয়ারেন্স প্রতি বছর নবায়ন করতে হবে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক সব ভবনের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। অগ্নিকান্ডের সময় ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় জলাধার নির্মাণ এবং রাজধানীর ভেতরে ও আশপাশের জলাধার ও লেকগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সেই সাথে জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা রাখা এবং স্কুল-হাসপাতালের মতো স্থাপনাসমুহে প্রশস্ত বারান্দা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা নিঃসন্দেহে জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। কিন্তু শুধু নির্দেশনাই শেষ কথা নয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরসমূহকে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও জাতীয় নীতিমালা উপেক্ষিত হওয়ার বাস্তবতা বদলাতে হবে। এ ক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে রাজউকের প্রায় ২৪টি টিম মাঠে নেমেছে বলে জানা যায়। এই টিম যেন প্রভাবশালী মহলের দ্বারা বা অন্য ে কোনভাবে ম্যানেজড হয়ে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের উদ্যোগ ব্যর্থ না হয়ে যায় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। ভবিষ্যতের বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলতে সুপরিকল্পিত পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি লক্ষ্য রেখে সব পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন