পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবার দেশের সব জেলায় স্বতন্ত্র দেউলিয়া আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দেউলিয়া আইন বাস্তবায়ন এবং এর উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় স্বতন্ত্র দেউলিয়া আদালত প্রতিষ্ঠা করা দরকার। ব্যাংক মনে করে, প্রতিটি জেলায় এ ধরনের আদালত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে। একই সঙ্গে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির সংখ্যাও কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। সম্প্রতি দেউলিয়া আইন যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে প্রতিবেদনটিসহ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে দেউলিয়া আইন ও অর্থঋণ আদালত আইনের সংশোধনেরও প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্রুত খেলাপি ঋণ আদায়ে দেউলিয়া আইনের সংস্কার এবং কার্যকর প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
এ বছরের জানুয়ারির শুরুতে পাঠানো ওই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে, এ ধরনের আদালতে দেউলিয়া সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনও মামলা চলবে না, সে বিধানও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। খেলাপি ঋণ দ্রুততার সঙ্গে আদায়ের জন্য দেউলিয়া বিষয়ক আইনের প্রয়োগ আরও কার্যকর করার পাশাপাশি আইনের সংস্কার করা দরকার। ব্যাংক মনে করে, পাওনাদারদের শেষ আশ্রয়স্থল হবে দেউলিয়া আদালত।
ব্যাংকের মতে, সব জেলায় গঠিত আদালতের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট জেলার খেলাপি গ্রাহকদেও ঋণ গ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষিত রাখাসহ বিশেষ মনিটরিংয়ের বিধান দেউলিয়া আইনে রাখা যেতে পারে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে এবং খেলাপি গ্রাহকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশে বর্তমানে ‘দেউলিয়া আইন ১৯৯৭’ কার্যকর রয়েছে। একইসঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায় এবং খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ‘অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩’ কার্যকর রয়েছে। বাস্তব ক্ষেত্রে অর্থঋণ আদালত আইনের প্রয়োগ ও কার্যকারিতা থাকলেও দেউলিয়া আইনের কার্যকারিতা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নানা কারণে বাংলাদেশে দেউলিয়া আইনের প্রয়োগ হয় না। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়, তারপরও নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে চায় না। ব্যক্তির পাশাপাশি কোনও ব্যাংক বা কোনও প্রতিষ্ঠান যত খারাপই হোক না কেন-দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় না। তার মতে, দেউলিয়া ঘোষণা করলে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও সমাজেও তাদেরকে খারাপ বলা হবে। এ কারণে দেউলিয়া আইন ও অর্থঋণ আদালত আইনের সংশোধন জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে বর্তমানে কার্যকর দেউলিয়া আইনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের জন্য এ ধরনের সুযোগ রাখা গেলে দেউলিয়া আদালত আইন আরও কার্যকর হবে বলে আশা করছে ব্যাংক। ব্যাংক বলছে, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাওনাদারদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে দেউলিয়া আইনের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। অর্থঋণ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের ৯০ দিনের মধ্যে দেনাদারকে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। যদি কোনও দেনাদার তা না করে, তখন ওই রায় দেউলিয়া আদালতে পাঠাবে অর্থঋণ আদালত। এরপর দেউলিয়া আদালত দেনাদারকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারবে। এ জন্য এই দুটি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন দরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি । ব্যাংক আরও নানা ধরনের কাজ করছে। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে ব্যাংকিং খাতকে বের করে আনতে খেলাপি আদায়ে। ব্যাংক আইনি বিষয়েও কাজ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, যারা ঋণের টাকা ফেরত দেয় না তাদেরকে আমরা ঘৃণা করি। এ কারণে দেউলিয়া আইনের যথাযথ কার্যকারিতা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চিঠিতে বলেছে, বর্তমানে আমেরিকায় একটি বিধান কার্যকর রয়েছে যে, কোনও প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার আগে তার পাওনাদারদের সঙ্গে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির সুযোগ নিতে পারে; এ সুবিধা নিয়ে আদালতের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে পুনর্গঠনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।
এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে স্থাপিত দেউলিয়া আদালতে ব্যাংকগুলো কয়েক হাজার মামলা করলেও এর নিষ্পত্তি হচ্ছে না বছরের পর বছর। যদিও দেউলিয়া আইন অনুযায়ী, দেউলিয়া ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য হওয়াসহ নাগরিক অধিকারও হারায়। আদালত কোনও প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া ঘোষণা করলে সেই প্রতিষ্ঠান কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও পায় না।
প্রসঙ্গত, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে ফেরত দেয় না, তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের অর্থ উদ্ধারে ১৯৯৭ সালে সরকার দেউলিয়া আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু ব্যাংকের অর্থ উদ্ধারে এই আইন কোনও ভ‚মিকা রাখতে পারেনি। ব্যাংকের তথ্য মতে, বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১১ শতাংশই উদ্ধার করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এছাড়া প্রতিবছরই ঋণের বড় একটা অংশ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরেই খেলাপি ঋণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এর সঙ্গে আর রাইট অফ (অবলোপন) করা খেলাপি ঋণ যোগ করলে যা দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি হবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।