বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
এস. এম. মোশারেফ হোসেন মুশু
গত কয়েক দিন পূর্বে এক কর্মকর্তার সাথে ছুটির দিনে গাড়িতে করে উত্তরা যাচ্ছিলাম। কর্মকর্তা ও তার সহকারী পেছনের সিটে বসা, আমি ড্রাইভারের পাশে সামনের সিটে বসা। ড্রাইভার খাটো কালো, শরীরের গড়নের সাথে চোখের সামঞ্জস্য মেলালে নিগ্রোদের সাথে তুলনা করার মত। খুবই সহজ-সরল। কুড়িল ফ্লাইওভারের কাছাকাছি গিয়ে ড্রাইভারের সাথে হাসিঠাট্টার ছলে বলেছিলাম “আন্নের যে স্যার, হেতা তো আমীলীগ করে, তয় আন্নে ওতো আমীলীগ করেন? ড্রাইভার উত্তর দিল জ্বে না, আই আমীলীগ করি নো। আমি বললাম ওমা ইয়ান কিয়া কয়? হেতার স্যার আমীলীগ করে আর হেতায় অন্য হার্টি করে, হেতারে গ্রেফতার করন দরকার। হাসান আলী উঠে বলে? গ্রেফতার ক্যান, হাসি দিলেও আমীলীগ কইত্তাম না। আমি বললাম কেন কইত্তেন না। হাসান আলী : আই হনরো বছর অইল ভোট দিতাম হারিনা, একবার যদি সুযোগ হাই তাইলে ভোট দিয়্যুম। আই হনরো ভোটের মালিক অর্থাৎ শেষ কথাটি দ্বারা হাসান আলী বুঝাতে চেয়েছে যে, তার পরিবারে পনেরটি ভোট রয়েছে। এই কথাগুলো যখন বলাবলি করছিলাম তখন প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।”
এবার প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের একটি ইউনিয়নের ছোট একটি নমুনা উল্লেখ করি। ভোটের দিন আশি ঊর্ধ্ব এক বয়স্ক লোক ভোট কেন্দ্রে গেলেন ভোট দেয়ার জন্য। এমনিতে ভোট কেন্দ্রে লোকজন তেমন নেই। সরকারদলীয় লোকজন আর কর্মকর্তারা আছেন। দুঃখের বিষয় ঐ বয়স্ক লোক যে মেম্বার প্রার্থীকে ভোট দিতে গেছেন, সে ভোট কেন্দ্রে নেই, তার কোন এজেন্টও নেই। সেই সাথে ঐ লোকের সিরিয়ালের ব্যালট পেপারের ভোটও দেয়া হয়ে গেছে। তাকে এখন ভোট দিতে দিবে না উপস্থিত দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কিন্তু বয়স্ক লোক ফুটবল মার্কায় ভোট না দিয়া বাড়ি যাবে না বলে বসে পড়ল। অনেক কিছু বলেও তাকে বুথ থেকে বের করা গেল না। ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে তিনি বের হন না। টানা-হ্যাচড়া করা যাচ্ছে না আশির উপর বয়স। বাধ্য হয়ে তাকে ব্যালট পেপার দিল তিনি ফুটবলে ভোট দিলেন। বাসায় গেলেন, এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ ইউনিয়নে নির্বাচনের তিন দিন পূর্বেই ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল যে, প্রত্যেক ওয়ার্ডে তাদের সিলেকটিভ একজন মেম্বার প্রতিনিধি থাকবে। বাকিরা কোন এজেন্ট বা ভোট দিতে যেতে পারবে না। আর চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিষয়টি কি হতে পারে তা পাঠক বুঝে নিলেই ভাল।
এই লেখাটি যখন লেখছি তখন ৪র্থ দফার ইলেকশন সম্পন্ন হয়েছে। চার দফার ইলেকশনে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে মতপার্র্থক্য রয়েছে। কোন সংবাদপত্র বা মিডিয়ায় সত্তরের অধিক, কোনটায় আবার আশির অধিক, কোন সংবাদ মাধ্যমে এই সংখ্যা আবার শতের কাছাকাছি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সংখ্যার বিচার করতে চাই না, শুধু একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জে জেলার একটি ইউনিয়নে একটি স্কুল শিশুও নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। এই শিশু হত্যার দায় কার? যে শিশুটি এখনও পৃথিবী কি, সমাজ কি? রাষ্ট্র কি? অধিকার কি? বুঝতে শেখেনি। নির্বাচন নামক নগ্ন পৈশাচিকতার হিংস্র থাবায় তার জীবন প্রদীপ নিভে গেল নিজেকে নিজে চেনার আগেই। খালি হল অসহায় পিতা-মাতার বুক, ছড়িয়ে পড়ল আর্তনাদ। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের শিশু জীবন দিয়ে উপভোগ করলেন নির্বাচন। যে নির্বাচনে হওয়ার কথা ছিল উৎসবমুখর পরিবেশে। আমরা সংবিধান কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারের মুখে প্রত্যেকবার নির্বাচনের পরেই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যে, সঠিকভাবে পালন করেছেন সে বক্তব্য শুনেছি। কখনও বলেছেন দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, কখনও বলেছেন আগের ধাপের চেয়ে ভাল হযেছে ইত্যাদি কথাবার্তা। কিন্তু উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছে এ কথাটি বলেননি অথবা বলতে ভুলে গেছেন।
আমি বলব এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় যে উৎসব আপনারা দেখাতে পেরেছেন তা হল লাশের উৎসব। যেই লাশের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র অর্থাৎ ৮ বছরের শিশু থেকে শুরু করে শত বছরের বৃদ্ধ অথবা অবলা নারী বা কোন সন্তানের পিতা মাতা, ভাই বোন কেউ বাকি নেই। এটা আমার স্বাধীন দেশ। এটা আমাদের সংবিধান কর্তৃক নির্বাচন কমিশন। লেখাটা যখন লিখছি বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তখনও একটি চ্যানেলে দেখলাম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁওয়ের একজনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় আহতদের সংখ্যা অগণিত। আর কতজন এই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হবে তা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।
এবার একটু পেছনের দিক ফিরি- ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচন যেখানে ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম দফায় যখন দেখল বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচনে ভাল করেছে। দ্বিতীয় দফা থেকে কারো ভোট দেয়ারই প্রয়োজনই পড়লো না। সরকারদলীয় প্রার্থীরা নিজদলীয় কোন্দলের ভয়ে ঐ সময় অনেকে নিজেরা সিল বানিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর পৌরসভায় আরো একতরফা, ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে এজেন্টই ঢুকতে দেয়নি সরকারদলীয় ক্যাডাররা। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তাও কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপারে সিল মারা ইত্যাদি। সিটি নির্বাচনের ছোট একটি বিষয় উল্লেখ করি, উত্তর সিটি কর্পোরেশনে একটি ওয়ার্ডে আমার একজন আত্মীয় অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে লড়ছিলেন। যদিও তার পরিবারের লোকজন প্রায় সবাই আওয়ামী লীগার। বর্তমানে তার ছোট ভাই একটি থানার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, যাই হোক আত্মীয় হওয়ার সুবাধে ইলেকশনের পূর্বে কয়েকবার সেখানে গেলাম, জনসমর্থন যাচাই করার চেষ্টা করলাম। যা বুঝলাম বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আর আমাদের আত্মীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে। ভোটের দিন ঐ ওয়ার্ডে গেলাম, সকাল সাড়ে দশটার সময় থেকে বিএনপির এজেন্ট বের করে দিচ্ছে সব কেন্দ্র থেকে, সাড়ে এগারটার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টও বের করে দিল। প্রার্থী খবর পেয়ে একটি কেন্দ্রে গেল, গিয়ে দেখলো সরকারদলীয় এক ক্যাডার ব্যালট পেপারের পুরো মুড়ি/বান্ডিলসহ সিল মারছে। প্রার্থী নিজে হাতেনাতে ধরে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা বললেন এতক্ষণ ভালই চলছিল আপনি এসে ভেজাল লাগাইলেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসারকে টেলিফোনে জানালেন, দেখতেছি, দেখছি ইত্যাদি। কয়েকবার যোগাযোগ করার পর বললেন আমাদের কিছু করার নেই, বুঝেনই তো? সেদিন আমি মনে মনে বলেছিলাম- সবই বুঝেছি, বুঝি নাই শুধু এই রকম নির্বাচন কমিশন আর নির্বাচনের কি প্রয়োজন?
সবশেষ এখন দেখতেছি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সুজনের বদিউল আলম মজুমদার এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেছেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহাম্মদ এই নির্বাচনকে গুলিবিদ্ধ বলেছেন। অনেকেই নির্বাচন কমিশন বিশেষ করে সিইসিকে মেরুদ-হীন, আজ্ঞাবহ, নির্লজ্জ ইত্যাদি বলেছেন। হয়তবা আরও বেশি কিছু বলতে পারবেন তাতে লাভ কি? ফেরত আসবে কি? ঐ প্রাণগুলো যারা তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নেয়া কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঝরে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবন কি ফিরে পাবে যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছে। খুব সহসা কি নিজ ঘরবাড়িতে ফিরে যেতে পারবে যারা এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে বিশেষ করে বিএনপি ঘরানার লোকজন? কেউ কি নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে সামনের দুই ধাপে আর কোন প্রাণহানি ঘটবে না, কেউ পঙ্গুত্ববরণ করবে না, ভিন্ন মতাদর্শের লোকজনের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে না? এটা জানি এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। কারণ যারা রক্ষকের দায়িত্বে আছে তাদেরকেই ভক্ষকের ভূমিকায় দেখা গেছে। যারা অধিকার রক্ষার শপথ নিয়েছে তারাই যে অধিকার হরণ করেছে। তাহলে কে চাইবে প্রতিকার, কার কাছে?
এবার আসা যাক এর দায়ভার কার? পেছনে নির্বাচনকেন্দ্রিক যেসব হত্যাকা-, হানাহানি, সংঘর্ষ হয়েছে তার দায়ভার কার কিংবা সামনে দুই ধাপে যদি অনুরূপ ঘটনা ঘটে সেটাইবা কার উপর বর্তাবে? পেছনের হত্যাকা- এবং হানাহানি নিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে- এই দায়দায়িত্ব তারা নেবে না। তারা খুনের দায়ভার নিবে না মানলাম কিন্তু তারা এই ব্যাখ্যাটাও তো দেয়নি যে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা এলাকায় তিন হাজার ভোটারের স্থলে প্রায় ছয় হাজার ভোট কিভাবে কাস্ট হলো? অন্য আরেকটি জায়গায়ও প্রায় একই রকম অর্থাৎ যেখানে দুই হাজারের কাছাকাছি ভোটার সেখানে কাস্ট দেখানো হয়েছে প্রায় ছাব্বিশ শত ভোট। এই হলো আমাদের নির্বাচন কমিশন বা রকিব কমিশন। পাশাপাশি সরকারও বলছে হত্যা, সংঘর্ষ ইত্যাদির দায়ভার সরকারের নয়। দুপক্ষের কথা যদি আমরা মেনে নেই তাহলে এর দায়ভার কাকে দিব?
বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম ভাগের ১১৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : এই ভাগের অধীন নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেইরূপ কর্মচারী প্রয়োজন হইবে নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন। ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।
এখন আমরা যদি উপরোক্ত ১১৮(৪), ১২০ ও ১২৬ অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ করে দেখি তাহলে এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনের। কারণ ১১৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, ১২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলে রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী তাকে প্রয়োজনীয় লোকবল দিবেন এবং ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সাংবিধানিক কর্তব্য। এখন প্রশ্ন হলো পেছনে যে হতাহত হয়েছে, ভোট ডাকাতি হয়েছে, সংখ্যালঘু, ভিন্ন মতের মানুষের উপর আক্রমণ হয়েছে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে কি নির্বাহী বিভাগ সহায়তা করেনি? যদি না করে থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশন সংবিধানের রক্ষক মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হতে পারতেন। তারা কি সেটা করেছেন? আর যদি নির্বাহী বিভাগ সহযোগিতা করে থাকেন তাহলে এত হতাহতের ঘটনা ঘটল কিভাবে? তাহলে কি আমরা ধরে নেব রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়েছে বা কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। আসলে কোনটিই নয় বরং নির্বাচন কমিশন নির্লিপ্ত থেকেছে এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় একটি কথা আছে আইন ও নৈতিকতা। এ দুটি বিষয় পাশপাশি অবস্থান করে। যে ব্যবস্থায় আইন ও নৈতিকতা একসঙ্গে থাকে সে বিষয় বা ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গ বা জনকল্যাণকর অভিহিত করা হয়। তাই আজ প্রশ্ন উঠেছে প্রায় শত লাশের হিসাব হয়ত নির্বাচন কমিশন আইন দ্বারা জায়েজ করে নিতে পারবেন কিন্তু নৈতিকতা দিয়ে শুধুমাত্র তৃতীয় শ্রেণীর ঐ শিশুর লাশের হিসাবটি মেলাতে পারবেন? আইন দিয়ে ৮০ বৎসরের বৃদ্ধের দেয়া অন্যের সিরিয়াল নাম্বারের ব্যালট পেপারের ফুটবল মার্কায় ভোটকে আইওয়াশ হিসেবে দেখাতে পারবেন? কিন্তু তার নাতির সমবয়সী পছন্দের প্রার্থীর কেন্দ্রে অনুপস্থিতির আক্ষেপ কি আপনাদের নৈতিকতায় সমর্থন করে? গাড়ীর ড্রাইভার হাসন আলী পনের বছর ধরে ভোট দিতে পারে না অর্থাৎ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে যে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি এটা হাসন আলীরা কিভাবে যেন একটু আধটু হলেও বুঝে। হাসন আলী ভোট দিতে গেল কি না গেল তাতে নির্বাচন কমিশনকে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না বা হবে না, এই কারণে হাসন আলীরা ভোট দিতে যায় না বা যেতে পারে না এর যে নৈতিক দায়বদ্ধতা এটা কি কমিশন এড়াতে পারে? তাইতো হাসন আলীরা আক্ষেপ করে বলে, হাসি দিলেও আলীগকে ভোট দিয়্যুম না। যদি হাসন আলীরা বুঝতো নির্বাচন কমিশন কি? তাহলে হয়ত বলতো এই নির্বাচন কমিশন থাকাকালীন কোন দিন ভোট দিব না। কি লাভ হয়েছে এরকম নির্বাচন করে? শিশুর লাশ, বৃদ্ধের আকাক্সক্ষার মিথ্যে বাস্তবায়ন করে আর হাসন আলীদের আক্ষেপের মধ্যে দিয়ে দেশ, জাতির, সম্প্রীতির পরিবেশ একেবারে শেষ করে দেয়া হয়েছে। সত্যিকারের জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে পেশিশক্তি আর ক্ষমতা দ্বারা চাপানো ব্যক্তিবর্গের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে শাসক দলের ও সাময়িক লাভ হলেও অদূর ভবিষ্যতে ক্ষতিই হয়েছে। যেমন হয়েছিল স্বাধীনতাপূর্ব স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের। সর্বশেষ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর একটি কথা দিয়ে শেষ করতে চাই- দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে কোন এক জনসভায় পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে একটি উর্দ্দ শের বলেছিলেন যার অর্থ- “যে জমির ফসলে জনগণের খানাদানা হয় না, ঐ জমির শস্যকে জ্বালিয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও।” তাই আজ ৩০ লক্ষ (কমবেশি) প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণও বলতে চায়, “যে নির্বাচন কমিশন কিংবা শাসকগোষ্ঠী দ্বারা জনগণের সাংবিধানিক বা মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা হয় না। তোমরা বিদায় হও, বিদায় হও।”
য় লেখক : রাজনৈতিক কর্মী
সঁংযঁ৫৭৯৫@মসধরষ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।