Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিউজিল্যান্ডের আল নুর মসজিদে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৯, ১০:৩৫ এএম

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলায় অর্ধশত মুসল্লি নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার আল নুর মসজিদটি মেরামতের পর প্রথম নামাজ আদায় হয়েছে। এতে হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।


নিউজিল্যান্ডের জনগণকে ধন্যবাদ। আপনাদের চোখের পানির জন্য কৃতজ্ঞতা। আপনাদের হাকা নৃত্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের ফুলের জন্য কৃতজ্ঞতা। আপনাদের ভালোবাসা ও সহানুভূতির জন্য কৃতজ্ঞতা। ক্রাইস্টচার্চের হাগলি পার্কে উপস্থিত জনগণের সামনে এভাবেই বলছিলেন ইমাম ফাওদা। যেখানে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিদা আরডার্নসহ দেশটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

আপনাদের ভালবাসা ও সহানুভূতির জন্য কৃতজ্ঞতা। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ তার নেতৃত্বের জন্য যা বিশ্বনেতাদের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকল।

যারা আমাদের ভুলে যাননি তাদের সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ ধন্যবাদ যাদের কাছে নিজেদের জীবনের চেয়ে আমাদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ। আর সকল প্রতিবেশীদের অশেষ কৃতজ্ঞতা যারা হামলার সময় দরজা খুলে আমাদের আশ্রয় দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন।

দুই মসজিদে নিহতদের স্মরণে দুপুর ১.৩০ মিনিটে দুই মিনিটের নিরবতা পালন করা হয়। গত এক সপ্তাহ আগে নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় পুরো নিউজিল্যান্ড যেন মাথা নত করেছে। আর ইমাম ফাওদার ভাষণ সকলের মনকে ভালবাসায় পরিপূর্ণ করে দিয়েছে।

গত শুক্রবার আমি এ মসজিদটিতে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন এক সন্ত্রাসীর চোখেমুখে ঘৃণা ও ক্ষোভ দেখেছি। এতে অর্ধশত মুসল্লি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪২ জন।

আজ একই স্থানে দাঁড়িয়ে যখন চারপাশে তাকিয়েছি, তখন নিউজিল্যান্ড ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের চোখে ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখতে পেয়েছি। এতে আরও লাখ লাখ মানুষের হৃদয় ভরে গেছে, যারা আমাদের সঙ্গে এখানে শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু আত্মীকভাবে আছেন।

সন্ত্রাসী আমাদের দেশকে শয়তানি মতাদর্শ দিয়ে ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছে, যা বিশ্ববাসীকে হতাশ করে দিয়েছে। কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে নিউজিল্যান্ড হচ্ছে একেবারে অবিচ্ছেদ্য। বিশ্ব ভালোবাসা ও ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখতে পারে।

আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে কাউকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেব না।

শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদের শয়তানি মতাদর্শ এই প্রথম আমাদের আঘাত হানেনি। এ ঘটনা আমাদের কঠিন আঘাত দিয়েছে। এতগুলো লোককে হত্যা সাধারণ কিছু নয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সংহতি অসাধারণ।

হতাহতদের পরিবারগুলোকে আপনাদের ভালোবাসা, তাদের মৃত্যুকে বিফলে যেতে দেয়নি। তাদের রক্ত আশার বীজে পানি ঢেলে দিয়েছে। তাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী ইসলামের সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছেন। আর আমাদের ঐক্যের সৌন্দর্যও।

আমাদের মধ্য থেকে সর্বোত্তম মানুষগুলো সবচেয়ে ভালো দিনে, সেরা স্থানে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলেন। তারা কেবল ইসলামের শহীদ নন, তারা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন।

আপনাদের হারিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ঐক্য ও তেজ জোরদার হয়েছে। আপনাদের চলে যাওয়া কেবল নিউজিল্যান্ডকেই সজাগ করেনি, বিশ্ব মানবতাকেও জাগিয়ে তুলেছে।

এখানে এ জমায়েতে বৈচিত্র্যের এই ছায়াগুলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ মানবিতার ইচ্ছারই প্রকাশ। একটি উদ্দেশে হাজার হাজার মুসল্লি এখানে জমায়েত হয়েছেন, তা হচ্ছে- ঘৃণামুক্ত থাকা। কেবল ভালোবাসাই আমাদের উদ্ধার করতে পারে।



 

Show all comments
  • Md. Salauddin Sarker ২২ মার্চ, ২০১৯, ১১:২৯ এএম says : 0
    অসাধারন। অসাধারন লেখনি। অনেক ভাল লেগেছে। যাযাকাল্লাহ। লেখকের নাম থাকলে ভাল হত। বক্তব্যটি কার স্পষ্ট বুঝা যায়নি। সেখানকার জুমার খুতবার ইমাম সাহেবের কিনা তাও স্পষ্ট নয়, যাহোক চমৎকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিউজিল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ