পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ ও প্রশ্ন আগে থেকেই ছিল। ব্রিটেন এক সময় তার কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল অনিরাপত্তার অভিযোগে। পরে ব্রিটেনেরই একটি প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তার বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়ার প্রেক্ষাপটে কর্র্তৃপক্ষীয় তরফে দাবি করা হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ব্রিটেন পুনরায় তার কার্গো ফ্লাইট চালু করে। বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার যে বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি, সেটা বুঝা যায়, সম্প্রতিক বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টায়। এখন বলা হচ্ছে, ছিনতাই চেষ্টাকারী ব্যক্তির পিস্তল ছিল খেলনা পিস্তল। প্রশ্ন ওঠে, খেলনা পিস্তল নিয়েই বা ওই ব্যক্তি বিমানে উঠতে পারলো কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর শোনার আগেই আরো কয়েকটি ঘটনা পর পর ঘটেছে। খেলানা নয়, আসল পিস্তল নিয়েই তিনবার তিন জন বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় প্রবেশ করেছে। স্কেনার মেশিনে ওই পিস্তল থাকার বিষয়টি ধরা পড়েনি। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও চোখে পড়েনি। বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে যে প্রশ্ন দেখা যায়, পরবর্তী ঘটনাগুলো সেই প্রশ্নকে আরো বড় করেছে। দেশের এক নম্বর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই বেহাল শুধু দু:খজনক নয়, উদ্বেগজনকও বটে। এর সঙ্গে বিমান বন্দর এবং দেশের ভাবমর্যাদার প্রশ্ন জড়িত।
শুধু নিরাপত্তাই নয়, এই বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা নিয়েও প্রশ্নের অবধি নেই। যাত্রীসেবা বলতে যা বুঝায়, তার কোনো কিছুই এখানে ঠিকমত পাওয়া যায় না। নানাভাবে যাত্রীদের হয়রানি ও ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। দৈনিক ইনকিলাবের গতকালের একটি রিপোর্টে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অনেকের মতে, এ বিমানবন্দরে নিরাপত্তাসহ কাঙ্খিত সেবা প্রদানের জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করা হয়, তা বিশ্বের যে কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়ে বেশি। অথচ বাস্তবে যাত্রীসাধারণকে নিরাপত্তা ও সেবার বদলে অপরিসীম হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এই বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পার হয়ে যায়; অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যেখানে লাগে কয়েক মিনিট মাত্র। কেবল ইমিগ্রেশন নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই রকম হয়রানি ও ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। এক সময় লাগেজ নিয়ে যাত্রীদের নানা সমস্যায় পড়তে হতো। লাগেজ হারিয়ে যাওয়া কিংবা তা খুলে মালপত্র বের করে নেয়ার অভিযোগও ছিল। লাগেজ হারানো বা মালামাল খোয়ানোর ঘটনা কিছুটা কমলেও লাগেজ স্বল্প সময়ে হাতে পাওয়ার সমস্যা এখনো প্রায় আগের মতোই আছে। বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপটেন আবদুল্লাহ আল ফারুক এ সম্পর্কে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, লাগেজ চুরি বা লাগেজ কেটে মালামাল লোপাটের ঘটনা এখন নেই বললেই চলে। যাত্রীদের হয়রানির যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। আমাদের মন্ত্রী বিমানবন্দরের সার্বিক বিষয় অবহিত আছেন। যাত্রী সেবার মান আরো কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে মন্ত্রী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে যারা যাতায়াত করেন তাদের মধ্যে বিদেশী যেমন আছেন, তেমনি আছেন দেশী যাত্রীও। তাদের সকলের যথাযথা নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানের দায়িত্ব বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। নিরাপত্তাসহ বিমানবন্দরের আবশ্যকীয় কাজকর্ম সম্পাদনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ দায়িত্বশীল, সৎ ও দক্ষ হলে বিমানবন্দরের পরিস্থিতি এমন নাজুক হওয়ার কথা নয়। ইনকিলাবের রিপোর্টেই উল্লেখ করা হয়েছে, নিরাপত্তা ও সেবার বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক, আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এখানে অব্যবস্থা আছে, দুর্নীতি আছে, অদক্ষতা আছে, আছে দায়িত্বে অবহেলা। আর সবচেয়ে বেশি আছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। এগুলো আমলে নিতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া যাবে না। আমরা আশা করবো, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এগুলো বিবেচনায় নিয়ে ও মাথায় রেখে উপযুক্ত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।