Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে মাইকিং

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

আজ দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। কিন্তু নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেয়া এবং আস্থা সংকট ও অনাগ্রহের কারণে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে রয়েছে নানা শঙ্কা। বিগত প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র উপ-নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে আজ ভোটারদের কেন্দ্র পর্যন্ত ভোট দিতে নিয়ে যাওয়াটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে প্রার্থীদের জন্য।
নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে মাত্র ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন প্রথম ধাপে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র উপ-নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩১.০৫ শতাংশ। এই সংখ্যার সঠিকতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন অফিসাররা বাদাম খেয়ে ভোটারদের অপেক্ষায় সময় পার করছেন। প্রার্থীদের পোলিং অজেন্টারা ঘুমিয়ে সময় পার করেছেন। এছাড়া সাংবাদিকরাও ভোটারদের জন্য কেন্দ্রে অপেক্ষায় বসেছিলেন কিন্তু ভোটারদের দেখা পাননি। নিজ এলাকার ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে না পারায় বিগত নির্বাচনে নিশ্চিত জয়েও অনেকে ফেল করেছেন। প্রার্থীরা নানাভাবে ভোটারদের আশ্বস্ত করেও কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেন নি।
এমনাবস্থায় ভোটারদের শঙ্কা দূর করতে পারছে না প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী প্রার্থীরা যারা সকলেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা। প্রার্থীরা নানাভাবে ভোটারদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, কোন ধরণের ভোট চুরি বা, আগের রাতে জাল ভোট দেয়া হবে না। ভোটাররা সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারবেন।
এ নিয়ে ভোটারদের আস্থা ফেরাতে রীতিমত ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। মাইকিং করে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার কথা বলছেন এবং জাল ভোট, ভোট কেন্দ্রে মারামারি হবে না বলে আশ্বস্ত করছেন।
গতকাল এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের এমন একটি ক্যাম্পেইন ভাইরাল হয়। যা ছিল নওগা জেলা পুলিশের। এতে একজন অতিরিক্ত এসপিকে একটি বাজারে মাইকিং করতে দেখা যায়। তাতে তিনি বলেন, ১৮ তারিখের নির্বাচনে আপনারা সবাই ভোট দিতে যাবেন। আপনাদের কোন ভয় বা শঙ্কা নেই। আপনাদের মধ্যে অনেক কৌতুহল আছে। ভোট আগের মত হবে, না পরের মত হবে, এমন হবে কিনা, তেমন হবে কিনা। কিন্তু সকল কৌতুহল দূর করতে হবে, সকল ভয়ভীতি দূর করতে হবে। কোন ধরণের অনিয়ম হবে না। এখানে আমরা যারা আছি সরকারি চাকরি করি; আমরা কি ভোট দিতে পারবো? যদি কোন অনিয়ম হয়, জাল ভোট দিতে আসে তাহলে পুলিশ গুলি করতেও দ্বিধা করবে না।
তিনি আরো বলেন, এ নির্দেশনা সরকারের উপর মহলের। পাশেই গাড়িতে এসপি স্যার আছেন। এসি ল্যান্ড, র‌্যাব, বিজিবির অফিসার আছেন। তারা সবাই আপনাদের আশ্বস্ত করছেন। এখানে সবাই ভাল মানুষ। তবে দুষ্টু লোক যে নেই তা বলবো না; কিছু আছেন। তবে কোন অনিয়ম হলে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।
এমনাবস্থাতেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা তেমন একটা চিন্তিত নন। ১৩ মার্চ সিলেটে এক মতবিনিময় সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, কত শতাংশ ভোট হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, এর কোনো মাপকাঠি নেই। সবচেয়ে বেশি ভোট যিনি পাবেন, তিনিই নির্বাচিত হবেন। কত ভোট পড়ল তা কমিশনের দেখার বিষয় না। এ নিয়ে ইসির কিছু করার নেই। যারা ভোট দিতে যাবেন, তাদের ভোট নেওয়া হবে। তাদের ভোটে যারা নির্বাচিত হবেন, তারাই হবেন জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রভাব এর পরের সব নির্বাচনের ওপরে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যত যাই কিছু বলা হোক না কেন নির্বাচনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ধারাবাহিকভাবে কমছে।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে গণতন্ত্র ও খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। ভোট ও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। কারণ ভোট এখন আর মানুষকে দিতে হয় না। নির্বাচনের পুরো বিষয়েই কারসাজি বিদ্যমান। এসব কারণে ভোট নিয়ে মানুষের মনে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ