Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শোকে স্তব্ধ গোটা নিউজিল্যান্ড চলছে নিখোঁজদের খুঁজে ফেরা

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গণহত্যা

ডেইলি মেল | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে অস্ট্রেলীয় খুনি ব্রেনটন ট্যারান্ট গুলি চালিয়ে ৪৯ জন মুসল্লিকে হত্যা করে। সারা নিউজিল্যান্ড এই ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনায় শোকস্তব্ধ। নিহতদের জন্য কান্না চলছে আর চলছে নিখোঁজদের খুঁজে ফেরা। প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নিহতদের দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেনঃ ১. মুসাদ ইবরাহিম (৩),২. আবদুল্লাহি দিরি (৪), ৩. সায়াদ মিলনি (১৪), ৪.
খালেদ মুস্তফা, ৫. তার ছেলে হামজা (১৬), ৬. নাইম রশিদ ৭. তার ছেলে তালহা (২১), ৮. আনসি কারিক্কাপুলাম আলিবাবা (২৫), ৯. আত্তা এলায়ান (৩৩), ১০. ড. হারুন মাহমুদ (৪০),১১. হুসনে আরা পারভিন (৪২), ১২. মোহাম্মদ ইমরান খান (৪৭), ১৩. আমজাদ হামিদ (৫৭), ১৪. লিন্ডা আর্মস্ট্রং (৬৫), ১৫. হাজি দাউদ নবি (৭১), ১৬. লিলিক আবদুল হামিদ ১৭. আশরাফ আলি।
এখনো নিখোঁজঃ ১. ভোরা রমিজ (২৮), ২. ফারহাজ আহসান (৩০), ৩. মোজাম্মেল হক (৩০), ৪. আবদেল ফাত্তাহ কাসেম (৫৯), ৫. আলি আল মাদানি (৬৬), ৬. সৈয়দ জাহানদাদ আলি (৩৪), ৭. হুসাইন আল উমার্ ি(৩৪), ৮. ওসামা আদনান (৩৭), ৯. কামেল দারবিশ (৩৯)।
৩ বছরের মুসাদ ইবরাহিম বাবা ও বড় ভাইয়ের সাথে জুমআর নামাজ পড়তে আল নূর মসজিদে গিয়েছিল। ঘাতক মসজিদে গুলি শুরু করার পর মুসাদ দৌড় দেয়। তার গায়ে গুলি লাগে। পরে সন্ধ্যায় বাবার কোলেই সে মারা যায়। আত্মীয় স্বজনরা এই শিশুর রূহের মাগফিরাত কামনা করছেন।
আমজাদ হামিদ ছিলেন একজন হৃদরোগ চিকিৎসক। ২৩ বছর আগে উন্নত জীবনের আশায় তিনি ও তার স্ত্রী নিউজিল্যান্ডে আসেন। শুক্রবারের হামলার পর থেতে তার খোঁজ নেই। পরিবারের ধারণা যে তিনি নিহত হয়েছেন। তার স্ত্রী হানান নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেন, কী দুর্ভাগ্য! আমরা নিজেদের ও সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যতের আশায় এসেছিলাম। তিনি তার ন্বামীকে অত্যন্ত দয়ালু মানুষ বলে উল্লেখ করেন। তাদের ২০ ও ২২ বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে।
হাজি দাউদ নবি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ১৯৭৭ সালে আফগানিস্তান থেকে নিউজিল্যান্ড আসেন। তিনি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম দিকের মুসলিমদের একজন। তার ৫ ছেলে। শনিবার তার ছেলে ওমর নবি (৪৩) ও ইয়ামা নবি (৪৫) কে আদালতে দেখা যায়। তারা তার ছবি বিলি করেন।
নাইম রশিদ, তার ২১ বছরের ছেলে তালহা মারা গেছেন। পাকিস্তানের এবোটাবাদ থেকে নিউজিল্যান্ডে এসেছিলেন নাইম রশিদ। তিনি সেখানে ব্যাংকে কাজ করতেন। নিউজিল্যান্ডে এসে শিক্ষকতা করতেন। তিনি অন্য মুসল্লিদের বাঁচাতে খুনির কাছ থেকে তার অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার জন্য ধ্বস্তাধ্বস্তি করেন। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান।
দুর্ভাগ্যক্রমে নাইম রশিদের ২১ বছর বয়স্ক পুত্রও গুলিতে নিহত হন। নইম রশিদের ভাই ডা. খুরশিদ আহমেদ ভাই ও ভাইয়ের ছেলের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন।
লিলিক আবদুল হামিদ ইন্দোনেশিয়া থেকে ক্রাইস্ট চার্চে এসেছিলেন। তার সন্ধান চেয়ে ফেসবুকে আবেদন করা হয়। পরে তার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করা হয়।
শনিবার ১৪ বছরের নিহত কিশোর সায়াদ মিলনির রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। সে ক্যাশমেয়ার হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। তবে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়নি। তার শোকার্ত বাবা জন মিলনি পুত্রের শোকে ভেঙ্গে পড়েছেন।
আশরাফ আলি ছিলেন আল নূর মসজিদের ইমাম। তিনি ফিজি থেকে নিউজিল্যান্ডে আসেন। তার বন্ধু আবদুল কাইয়ুম ডেইলি মে অস্ট্রেলিয়াকে বলেন, আমরা এক সাথে স্কুলে গিয়েছিাম। সেখান থেকে ফেরার পরই এ ঘটনা ঘটে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তিনি আমাকে দেখলে রসিকতা করে ‘লাস্ট কার্ড’ বলতেন। আমিও তার সাথে দেখা হলে তাই বলতাম।
হুসনে আরা পারভিন তার পঙ্গু স্বামী ফরিদ উদ্দিনকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হন। ফরিদ হুইল চেয়ারে করে নামাজ পড়তে এসেছিলেন। পারভিন ছিলেন মসজিদের মেয়েদের অংশে। গুলি শুরু হলে তিনি স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই নিহত হন। অন্যরা ফরিদকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলে তিনি বেঁচে যান। তাদের শুধু একটি মেয়ে আছে।
পাকিস্তান এসোসিয়েশন ইন নিউজিল্যান্ড ৩৪ বছর বয়স্ক সৈয়দ জাহানদাদ আলির মৃত্য্রুর খবর নিশ্চিত করেছে।
নিখোঁজদের একজন ভোরা রমিজ।
অন্য্য এক নিখোঁজ হলেন হুসাইন আল উমারি। তার বোন আয়া বলেন, তার লাশ পাওয়া যায়নি। ২২ বছর আগে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তিনি নিউজিল্যান্ডে আসেন।
ভারতের হায়দারাবাদ থেকে এসেছিলেন ফারহাজ আহসান। ভারতের রাজনীতিক আসাদউদ্দিন ওয়াইসি তার নিখোঁজ হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
এক ভিডিওতে হায়দারাবাদের আরেক ব্যক্তি আহমেদ জাহাঙ্গীর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দেখা গেছে। তার ভাই ইকবাল জাহাঙ্গির পরিবারের পক্ষ থেকে নিউজিল্যান্ড যেতে চায় বলে তিনি জানান।
ক্রাইস্টচার্চে হামলায় ১ জর্দানি নিহত ও ৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতের নাম খালেদ হাজি মুস্তফা। তার ভাই ও ভাইয়ের মেয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন।
আরেক জর্দানি ওয়াসিম আল সাতি আহত হয়েছেন। তার মেয়েও গুরুতর আহত। সাতি উন্নত জীবনের আশায় নিউজিল্যান্ড এসেছিলেন। তারা উভয়েই নেরে উঠছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিসের দারুল হিজরা মসজিদের ইসলাম প্রচারক আবদুল রহমান হাশি ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, তার শ্যালকের চার বছরের ছেলে নিহত হয়েছে। তার শ্যালক আদন ইবরাহিম দিরি আহত হয়েছেন। তিনি ৫ ছেলের সাথে নামাজ আদায় করছিলেন। ৪ ছেলে বেঁচে গেলেও ৪ বছর বয়সের সবার ছোটটি মারা যায়।
এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কামিল দারবিশ ও ক্যান্টারবেরি মুসলিম সমিতির সাবেক সম্পাদক আবদেল ফাত্তাহ কাসেম।
২ বছর ও ১৩ বছরের আরো দু’ শিশু আহত হয়েছে। ৪ বছরের এক বালিকা শিশুর অবস্থাও গুররুতর। তাকে অকলান্ডের স্টারশিপ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিউজিল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ