পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে শুক্রবারের জুম্মা নামাজের সময় সন্ত্রাসীদের বন্দুক হামলায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ৪৯ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্রাইস্টচার্চের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ডিন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত আল নূর মসজিদে অধিকাংশ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর তিন কিলোমিটারের মধ্যে লিনউড মসজিদটিও একই সময়ে বন্দুক হামলার শিকার হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত দুইজন বাংলাদেশী নাগরিকের তথ্য পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা কিছুটা দেরিতে সেই মসজিদে হাজির হওয়ার কারণে আক্রমনের হাত থেকে বেঁচে গেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রিকেটারদের তাৎক্ষনিক পোষ্ট থেকে জানা গেছে। তবে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ তৃতীয় টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচটি বাতিল করে ক্রিকেটারদের যথাশীঘ্র দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিসিবি ম্যানেজমেন্ট। কালো পোশাক ও ক্যাপ পরিহিত বন্দুকধারী সন্ত্রাসীদের মধ্যে চারজনকে পাকড়াও করেছে নিউজিল্যান্ড পুলিশ। এদের মধ্যে একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিক রয়েছে বলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং নিউজিল্যান্ড পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ নিশ্চিত করেছেন। নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডেন্ট ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী বন্দুক হামলার ঘটনাকে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন আখ্যায়িত করেছেন। নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিউজিল্যান্ডের শান্তি, সহাবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পাদপীঠ, শান্তির দেশ, নিরাপত্তার দেশ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গত কয়েক দশকের মধ্যে এ ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে হেইটক্রাইম বেড়ে যাওয়ার জন্য মুসলিম বিদ্বেষ ও বর্ণবাদী রাজনীতিকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্বের প্রধান বহুজাতিক - গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটিতে সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদী উগ্রতা ও অসহিষ্ণুতা বেড়ে চলেছে। বিশেষত ইসলামোফোবিক এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়া পশ্চিমা বর্ণবাদী ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রোপাগান্ডায় একশ্রেনীর বিভ্রান্ত উগ্রপন্থী মানুষ পরমতের প্রতি ও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলায় লিপ্ত হচ্ছে। একইভাবে মুসলিম যুবকদের বিভ্রান্ত করেও নানা ধরনের জঙ্গিবাদী সংগঠন গড়ে তুলে আত্মঘাতি হামলা ও জঙ্গিবাদী প্রচারণায় মদদ দেয়ার পেছনেও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়। এসব হামলার দায় ঢালাওভাবে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী ও অভিভাসন বিরোধী কঠোর আইন করতে বাধ্য করছে নেপথ্যের অনুঘটকরা। নিউজিল্যান্ড মসজিদে শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলার আগে অন্তত একজন হামলাকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় ৮৭ পৃষ্ঠার অভিবাসন বিরোধী ও মুসলিম বিদ্বেষী মেনিফেস্টো প্রকাশ করে বলে নিউজিল্যান্ড পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে, এই সন্ত্রাসী হামলাকারীরা ইসলামোফোবিয়ার দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত এবং এরা পশ্চিমা মাল্টি-কালচারালিজম, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মুক্ত সমাজ ও সহাবস্থানের সংস্কৃতির ঘোর বিরোধী। তারা বিশ্বকে একটি অসহিষ্ণু, বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িক বিরোধের মধ্যে ঠেলে দিতে চায়। পশ্চিমাদের ইসলামোফোবিয়ার রেশ এখন বিশ্বের সব প্রান্তেই ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো একক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মুসলমানের বসবাস হলেও হিন্দুত্ববাদী বিজেপির শাসনে সেখানে হিন্দু-মুসলমানের হাজার বছর ধরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। হাজার বছরের ইতিহাসে ভারতের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিনির্মান ও উত্থানের পেছনে যেমন মুসলমানদের অগ্রণী ভ‚মিকা রয়েছে, একইভাবে ইউরোপ-আমেরিকার সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিবর্তন ও বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠার পেছনেও মুসলমান বিশাল অবদান রয়েছে। এখন যারা এসব রাষ্ট্রে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী প্রোপাগান্ডার বিষবাস্প ছড়াচ্ছে তারা কারা, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী তা কারোই অবিদিত নেই। পশ্চিমা নেতাদের এ বিষয়ে সম্যকভাবে অনুধাবন করেই সন্ত্রাস বিরোধী অবস্থান নিতে হবে। নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলাকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছে নিউজিল্যান্ডের পুলিশ। এই হামলার পেছনে যেমন বহুজাতিক সন্ত্রাসীরা জড়িত তেমনি আক্রান্ত ও নিহতদের মধ্যেইও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা রয়েছেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়াসহ হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে দুই বাংলাদেশী সহ নিহতদের পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে। এ ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে ইসলাম বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদী প্রোপাগান্ডা বন্ধে বহুত্ববাদী ও শান্তিকামী বিশ্বসম্প্রদায়কে একটি ঐক্যবদ্ধ ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।