Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাব্য সঙ্কটে লালপুরের চার নদী

লালপুর (নাটোর) থেকে আশিকুর রহমান টুটুল | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

অবৈধ দখল, দূষণ, অপরিকল্পিত স্লুইচগেট, বাঁধ, ব্রীজ নির্মান ও নদীর তলদেশ খনন নাকরায় নাটোরের লালপুর উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল, ইছামতি, খলিসাডাঙ্গ ও চন্দনা নদী নাব্যতা হারিয়ে আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষাকালে নদী গুলিতে হাঁটু জলও থাকেনা। ভরা বর্ষা মৌসুমের কিছু দিন বড়াল ও খলিসাডাঙ্গায় হাটু জল থাকলেও বছরের বাঁকি সময় নদীর বুক জুড়ে কৃষিকাজ করা হয়। পানির প্রবাহ না থাকায় এই অঞ্চলের কৃষি কাজ যেমন ব্যহত হচ্ছে অপরদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছ এই অঞ্চল থেকে আজ বিলুপ্তপ্রায় ।

বড়ালের চারঘাট ও আটঘরিয়া নামক স্থানে দুইটি অপরিকল্পিত স্লুইচগেট ও কয়েকটি ব্রীজ নির্মান করায় নদীতে পানি প্রবাহ নেই ফলে নদীর তলদেশ ভরটহয়ে বর্তমানে খরস্রোতা বড়ালটি এখন মৃত। খলিসাডাঙ্গ, চন্দনা ও ইছামতিতে দখল, ধূষনের মহাউৎসব চলছে। নদীতে পানি না থাকায় নদীর দখল করে কৃষিকাজ ও অবৈধস্থাপনা গড়ে তুলেছে প্রভাবশালীরা।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, রাজশাহীর চারঘাটের পদ্মানদী থেকে বড়ালের উৎপত্তি। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার হাঁপানিয়া হয়ে বাগাতিপাড়া-লালপুরে দিয়ে সিরাজগঞ্জের যমুনায় পতিত হয়েছে। নদীর নাটোর অংশের প্রায় ৬২ কিলোমিটার এখন মৃত।
লালপুরের বোয়ালীপাড়া বিল থেকে চন্দনা নদীর উৎপত্তি হয়ে খলিসাডাঙ্গা নদীতে পতিত্ত হয়েছে। বর্তমানে নদীটি নাব্যতা হারিয়ে এখন মরা খাল। নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল এলাকার চন্দনা নদী থেকে ইছামতি নদীর উৎপত্তি হয়ে খলিসাডাঙ্গায় পতিত্ত হয়েছে। প্রায় ১৩ কিলোমিটার ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীটি এখন মৃত।
বোয়ালীপাড়া বিল থেকে খলিসাডাঙ্গা নদীর উৎপত্তি হয়ে বড়াইগ্রামের চিকনায় নদীতে পতিত্ত হয়েছে। নদীর প্রায় ৬০কিলোমিটার মরে গেছে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার উপজেলার চারটি নদী ঘুরে দেখা গেছে, চার নদীর একটিতেও পানির দেখা নেই। নাব্যতা না থাকায় নদীগুলি বর্তমানে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। এইদিক দিয়ে নদী ছিলো তাও বুঝার উপায় নেই। সবটুকু প্রভাবশালীদের দখলে। পুরো নদীর বুক জুরে চলছে কৃষি কাজ।
এসময় বড়াল তীরবর্তী রিপোন আহম্মেদ, চন্দনা তীরবর্তী নজরুল ইসলাম, খলিসাডাঙ্গা তীরবর্তী হারুনর রুশিদ, ইছামতি তীরবর্তী আবুল কালামের সঙ্গে কথা হয় তারা বলেন, ‘এই নদী দিয়ে এক সময় বড়-বড় লঞ্চ, স্টিমার চলতো। নদীর খরস্রোতায় পলি মাটির কারণে দু’পাশের কৃষকরা অধিক ফসল ফলাতো। বেশি বেশি দেশীয় মাছ জন্মাতো। বর্তমানে এ নদী মরে যাওয়ায় এখন নৌকাও চলছে না। তীরবর্তী অনেক গ্রামে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে এছাড়াও এসব এলাকা থেকে দেশীয় মাছও হারিয়ে গেছে।’ ‘বর্তমানে নদী মরে যাওয়া এই এলাকার কৃষিতে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। জমিতে আগের মতো ফসল হয়না।’
এ প্রসঙ্গে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান ইনকিলাব কে বলেন, ‘খরস্রোতা বড়ালের উপরে একটি স্টাডি চলমান রয়েছে ঐটার সুপারিশ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইছামতি খননের উদ্যোগ নিচ্ছি ইতিমধ্যে একটি কারিগরি কমিটিও করা হয়েছে, চন্দনা খালটির কিছু অংশ খননের জন্য অলরেডি টেন্ডার করা হয়েছে। সম্ভব হলে খালিসাডাঙ্গ নদীটাও ইছামতি খনন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
নদীতে আগের যৌবন ফিরিয়ে আনতে ও কৃষি উন্নয়নে দ্রুত নদীগুলি খননের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন নদীর তীরবর্তী হাজারও কৃষক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ