চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
শেষ
উনিশ শতকের শেষে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশের খৃস্টান মিশনারীদের ইসলাম বিরোধী তৎপরতা বেড়ে গেলে তা প্রতিহত করার লক্ষ্যে মুন্সি আব্দুর রহিম (১৮৫৯-১৯৩১) ও মুহাম্মদ রিয়াজ উদ্দীন আহমদ (১৮৬২-১৯৩৩) প্রমুখ মুসলিম পন্ডিত আবু মুহাম্মদ আবদুল হক হক্কানী কৃত উর্দ‚ তাফসিরের ভ‚মিকা অংশের বঙ্গানুবাদ করে ‘ইসলামতত্ব’ নামক সাময়িকপত্রে প্রকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীকালে সূফী মধুমিয়া ওরফে ময়েজ উদ্দীনের (মৃ.১৯২০) মাসিক ‘প্রচারক’ পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ১৯৩০ খৃস্টাব্দে শামসুদ্দীন আহমদের ‘বেদ ও কুরআন’ প্রবন্ধ ‘শরীয়তে এসলাম’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৬ খৃস্টাব্দে মুহাম্মদ আবদুল কাদের বখতেয়ারীর ‘কুরআনের বৈশিষ্ট্য’ প্রবন্ধ ‘শরিয়াতে এসলাম’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ খৃস্টাব্দে মুহাম্মদ নূরূল হকের ‘কুরআনের উপদেশ’ প্রবন্ধ ‘আল-ইসলাম’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৩৯ খৃস্টাব্দে খান বাহাদুর কামরূদ্দিন আহমদের ‘কুরআনে মানবের স্থান ও অর্থনীতি’ প্রবন্ধ ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে আবদুল মজিদ সাহিত্য রতে্নর ‘কুরআনের শিক্ষা’ প্রবন্ধ ‘আল-ইসলাহ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ খৃস্টাব্দে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (রহ.)-র ‘শবে কদর ও কুরআন অবতরণের তারীখ’ প্রবন্ধটি ‘মা.দিলরূবা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এবং ১৯৪৭ খৃস্টাব্দে মিজানুর রহমানের ‘কালামুল্লাহ’ প্রবন্ধটি ‘আল-ইসলাহ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
সারকথা হলো, বাংলা ভাষায় কুরআন চর্চা পরোক্ষ সূচনা হয় বাংলা সাহিত্যেও মধ্যযুগে (১২০২-১৮০০ খৃ.)। আর এ জাতীয় চর্চার প্রত্যক্ষ কার্যক্রম শুরু হয় আধুনিক যুগে অর্থাৎ উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। এ শতকের সত্তর এর দশক পর্যন্ত কতিপয় মুসলিম পন্ডিত ও কবি-সাহিত্যিক পবিত্র কুরআনের খন্ডিত অনুবাদ করে প্রকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তবে এগুলোর অধিকাংশই ছিল বাংলা পঁথি সাহিত্যের ভাষায়। ঊনবিংশ শতাব্দির শুরুলগ্নে সর্ব প্রথম মাওলানা আমির উদ্দীন বাসুনিয়া ১৮০৮/১৮০৯ খৃস্টাব্দে কুরআনের আংশিক অনুবাদ করেন। এরপর গিরিশ চন্দ্রসেন পবিত্র কুরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ বঙ্গানুবাদ করেন। অতঃপর পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকপত্রে বিক্ষিপ্ত ভাবে এবং গ্রন্থকারে পবিত্র কুরআনের খন্ডিত অনুবাদ ও ভাষ্যের প্রকাশনা পরিলক্ষিত হয়।
পূর্ণকথা হলো উল্লিখিত বাংলার এই প্রথিতযশা বিজ্ঞ পন্ডিতদের “বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআন চর্চা” ধর্মীয় শিক্ষা ও শিল্প সাহিত্যের ধার উন্মক্ত করেছে। বাংলা ভাষা ভাষী সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ কুরআনের অমিয় বাণী হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছে। এবং কুরআন চর্চার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে কৃষক-চাষী, জেলে-মুজুর, কামার কুমার তাঁতীসহ নিম্নবিত্ত অক্ষর জ্ঞানহীন জনসাধারণও অবহিত হয়েছে।
[ইসলামী বিশ্ববিদ্যালের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল অদুদ বিরচিত “বাংলা ভাষায় কুরআন চর্চা: উৎপত্তি ও ক্রমবিকাম” নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহিত]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।