চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
খ্যাতিমান আলেম মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাহেবের মাগফেরাত কামনা করে গত ১১ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে উলামা মাশায়েখ ও স্কলার ইউনিটি বাংলাদেশের উদ্যেগে এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা উবায়দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে আলেম উলামা ও স্কলাররা আলোচনায় অংশ নেন। তাদের অনেককেই মুফতি আব্দুল্লাহ সাহেবের ছাত্র। বর্তমানে সমাজের নানা অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। আলোচকবৃন্দ মুফতি আব্দুল্লাহ সাহেবের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করেন। উল্লেখ্য যে, দেশের স্বনামধন্য আলেম হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুল্লাহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় সম্প্রতি ইন্তেকাল করেন। ময়মনসিংহের গফরগাঁও তললি গ্রামের প্রখ্যাত আলেম, উস্তাদুল উলামা হযরত মাওলানা শামসুদ্দীন রহ. এর পুত্র মুফতী আব্দুল্লাহ দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ফারেগ হয়ে প্রথমে কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়া ও পরে মাওনা চৌরাস্তাসহ গাজীপুরের বিভিন্ন মাদরাসায় হাদীস ও ইফতার খেদমত করেন। কিছুদিন আগে মুখমণ্ডলে রোগ দেখা দিলে প্রথমে ঢাকায় ও পরে কলকাতায় চিকিৎসা করান। বেশ কিছুদিন সুস্থ থাকার পর পুনরায় কিছুদিন আগে রোগ বৃদ্ধি পেলে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। সবশেষে কলকাতায় চিকিৎসা চলাকালীন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও সচেতন অবস্থায় সন্তানদের বলেন, সম্ভবত আমার হায়াত আর বেশি নেই। তোমরা আমাকে দেশে নিয়ে চলো। এর আগে তিনি সমস্ত ঋণ পরিশোধ করেন। স্ত্রী পুত্রকে নসীহত করেন। এরপর খৃষ্টান হসপিটাল ত্যাগ করে মওতের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। দেশে আনার সময় সন্ধ্যা হয়ে গেলে বেনাপোল বর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি বলেন, সারাজগতই তো আল্লাহর। তোমরা আমার পাশে সূরা ইয়াসীন পড়তে থাক। এমতাবস্থায় ভোর হওয়ার অপেক্ষায় তার দুই পুত্র পিতাকে নিয়ে সূরা কালাম পড়তে থাকেন। রাত ১১টার দিকে তওবা ও ঈমানের সাথে মুফতী আব্দুল্লাহ সাহেব আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। ভোরে তার লাশ দেশে আনা হয় এবং তাঁর বড় ভাই জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহাদ্দিস ও হযরত হারদুঈ এবং মাওলানা মসীহুল্লাহ খান রহ. এর খলীফা হযরত মাওলানা ইমদাদুল্লাহ সাহেবের তত্ত¡াবধানে নিজ গ্রাম তললিতে জানাযা শেষে পিতা-মাতার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১। তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্র ছাড়াও অসংখ্যা ছাত্র, ভক্ত, বন্ধু, সহকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষী রেখে গিয়েছেন। অত্যন্ত সদালাপী, সামাজিক ও সংগঠকমনা একজন প্রাজ্ঞ ফিকহবিদ এবং শাইখুল হাদীস হিসাবে তিনি ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়। সারা দেশে তাঁর অগণিত ছাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শেষ দিকে তিনি গাজীপুর মাওনা এলাকায় একটি দারুল ইফতা ও উচ্চতর হাদীস অধ্যয়নকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। মুফতী আব্দুল্লাহ রহ. এর মাগফেরাত ও রফয়ে দারাজাতের জন্য তাঁর পরিবার সকলের কাছে দুআপ্রার্থী। মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা ও দোয়ায় অংশ নেন প্রফেসর ড. আল্লামা খলীলুর রহমান খান আল আযহারী, মাওলানা একেএম আশরাফুল হক, প্রফেসর সাইফুল্লাহ, মুফতি হানিফ আল হাদী, মাওলানা নুরুজ্জামান, মাওলানা কবির আহমাদ, মাওলানা জাকারিয়া, মাওলানা ইসমাঈল, মাওলানা উসমান গণি, মাওলানা মেহদী মারুফ, মাওলানা রাকিবুল ইসলাম, মাওলানা ফরহাদ ফারুকী, মাওলানা ইলিয়াস হাসান, মাওলানা তোফাজ্জল হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আলাউদ্দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।