পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
স্টাফ রিপোর্টার : বিধিবহির্ভূভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। গতকাল বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ক্যাবের পক্ষে রিটটি করা হয়। এদিকে বারবার গণশুনানির নামে গ্যাসের দাম বাড়ানো জনগণের সাথে বড় ধরনের প্রতারণা বলে মনে করে বিএনপি। অন্যদিকে তিতাস গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবকে আপত্তি জানিয়েছে বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে বাংলাদেশ জাতীয় দল আয়োজিত ‘তারেক রহমানের ১৩তম কারাবন্দি দিবস ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল উৎপাটনের ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
সাবেক মন্ত্রী বলেন, গ্যাসের দাম বাড়াতে বারবার গণশুনানি হচ্ছে। গণশুনানির নামে গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর থেকে বড় প্রতারণা আর কী হতে পারে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও প্রকৃত ইনকাম কমে গেছে। তার ওপরে আপনারা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছেন। দরিদ্র, নিম্ন-আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেহেতু তাদের জবাবদিহি নেই, তাই তারা (সরকার) সবকিছু উপেক্ষা করে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের দুই শতাংশ বা কয়েক শতাংশ মানুষের কাছে সব সম্পদ পুঞ্জীভূত। এরা হাজার কোটি, লাখ কোটি টাকার মালিক। এদের জন্য সরকারের সব নীতিমালা প্রণয়ন হচ্ছে। এদের মাধ্যমেই সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এটা হচ্ছে নিম্নগামী যাত্রা।’ রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর জন্য একটি প্রক্রিয়া চলছে। এর বিরুদ্ধেই রিটটি করা হয়েছে। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গ্যাসের দাম আরেক দফায় বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাদের প্রস্তাব গ্রাহকপর্যায়ে ১ বার্নারের গ্যাসের চুলা ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা, ২ বার্নারের চুলা ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং মিটারযুক্ত চুলার ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা ৬৫ পয়সা করা হোক। কোম্পানিগুলোর এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানি শুরু করেছে। গত ১১ মার্চ থেকে এ গণশুনানি শুরু হয়। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) অডিটরিয়ামে শুরু হওয়া এ গণশুনানি চলবে আজ পর্যন্ত।
বিটিএমএ’র থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাবে শিল্প খাতে ব্যয় বাড়ছে। এর মাঝে আবার দাম বাড়ানো হলে শিল্প খাতের বিকাশ রুদ্ধ হবে। তিতাস গ্যাসের সার্ভিস চার্জ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে কোনো প্রস্তাবার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তার বাস্তবায়ন সম্পর্কিত যে কোনো উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি রয়েছে বিটিএমএ’র। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, টেক্সটাইল সেক্টরকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে এ খাতটির নায্য স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পূর্বে তিতাস কর্তৃক গ্যাসের সুষ্ঠু সরবরাহে ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে মিলগুলোতে সৃষ্ট ক্ষতির যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দেয়া পর্যন্ত ক্যাপটিভ খাতে গ্যাসের মূল্য কোনো ক্রমেই বৃদ্ধি করা যাবে না।
গণশুনানিতে বিটিএমএ’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন সরকার কর্তৃক উৎসাহিত হয়েই বিটিএমএ’র বৃহদাকার মিলগুলো ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং এ লক্ষে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামো তৈরি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জেনারেটর আমদানিসহ অন্যান্য স্থাপনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেন। তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকে এ পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়। বিগত ৫ বৎসর যাবত গ্যাস সরবরাহ
পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। গ্যাসের দাম শতভাগেরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব আরও দুই কোম্পানির গ্যাসের দাম বাড়ানোর গণশুনানি নিয়ে হাইকোর্ট থেকে রাজপথে সক্রিয় ভোক্তারা। এরইমধ্যে গতকাল বুধবার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের শুনানিতে একটি কোম্পানি ১০৩ এবং আরেকটি ১৩৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশ হাউজ অ্যান্ড ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আপনারা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে পারবেন না। তাহলে দাম বাড়াবেন কেন? দুর্নীতি ছাড়া গ্যাসের কোনও কাজ হয় না। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এখনই কোম্পানিগুলো লাভজনক জায়গায় আছে। দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে গ্যাসের দাম না বাড়িয়েই আরও লাভ করতে পারবে কোম্পানিগুলো। সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্শন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নুর বলেন, অন্য কোনও জ্বালানিকে প্রনোদনা দেওয়ার জন্য যেন সিএনজি’র দাম বাড়ানো না হয়। এতে হলে শুধু সিএনজি খাতেরই ক্ষতি হবে না, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হবে। এদিকে শুনানিতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আবাসিকে এক চুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাক থেকে বাড়িয়ে ১৩শ’ ৫০ টাকা, দুই চুলা ৮শ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪শ’ ৪০ টাকা, প্রি-পেইড মিটারে ৯.১০ (ঘনমিটার) টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬.৪১ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।
বাখরাবাদের গ্যাস কোম্পনির পক্ষে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং জেনারেল ম্যানেজার ( অর্থ) নারায়ন চন্দ্র পাল বক্তব্য রাখেন। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, ডিভিডেন্ড দিতে হয়। কারণ কোম্পানি আইনে ডিভিডেন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তিনটা কোম্পানি বোর্ড ডিভিডেন্ড ঠিক করে দেয়। তিনি বলেন, আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দ্রæততার সঙ্গে কাজ শুরু হবে। তবে চলতি অর্থবছর সমাপ্তির পর প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে তিতাসের বিতরণ চার্জ বাড়ানো যৌক্তিক হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।