Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দারিদ্র্য বিমোচনে ড. ইউসুফ আল কারযাভীর মতামত

শাহ আবদুল হান্নান | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দারিদ্র্য সমস্যা সবার। পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র কেউ এর সমাধান দিতে পারেনি। ইসলামের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, প্রথম শতকেই ইসলাম এর সমাধান দিয়েছে। তাই এই সমস্যার ইসলাম কীভাবে করেছে তা’ সবার জানা প্রয়োজন।
আমি অনেক দিন ধরে ড. ইউসুফ আল কারযাভীর বই দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম (আল মাসালাতুল ফাকর ওয়া ইয়াযাতুহা ফিল ইসলাম) পড়েছিলাম। এই বইয়ে ড. ইউসুফ আল কারযাভী দারিদ্র্য সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের বিবরণ দিয়েছেন। কোনো কোনো ধর্ম বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর মতে, দারিদ্র্য একটি আশীর্বাদ। ড. ইউসুফ এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জাবারিয়া চিন্তাবিদ্গণ মনে করতেন, দারিদ্র্য বা স্বচ্চছলতা আল্লাহর দান, তাই এর প্রতিরোধ করা যায় না। এই ধারণার বিপরীতে তিনি বলেছেন, আল্লাহ আমাদের ব্যবসা বা কাজ করার জন্য বলেছেন এবং নিজের অবস্থার উন্নয়ন করতে বলেছেন। পুঁজিবাদীরা মনে করে, দারিদ্র্য হলো, ব্যক্তির দোষের কারণে সৃষ্ট। ড. ইউসুফ এই মতও অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই দারিদ্র্যের জন্ম দেয়।। সমাজতন্ত্রীদের মতবাদ বিপ্লবের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের ধারণাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। অতঃপর তিনি দারিদ্র্যের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। ইসলাম এই ধারণা অনুমোদন করে না যে, দারিদ্র্য একটি আশীর্বাদ। তিনি বলেন, ইসলাম মনে করে দারিদ্র্য ইমানকে দুর্বল করে দেয়, নৈতিক আচরণ, পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বিধ্বস্ত করে।
এর পর তিনি ইসলামের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা হয়। প্রথম পদক্ষেপ হলো কাজ করা, কর্ম খুঁজে নেওয়া, নিজের মাঠে কাজ করা ও আত্মকর্মসংস্থান করা। রাষ্ট্র তার উন্নয়ন কর্মকান্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ব্যাপারে সুযোগ বৃদ্ধি করতে পারে। ইসলামে দ্বিতীয় যে সুযোগটি করা হয়েছে তা হলো, নিকটাত্মীয়রা তাদের প্রতিবদ্ধী বা অস্থায়ীভাবে বেকার হয়ে পড়া আত্মীয়দের দেখাশোনা করবে। তৃতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক পর্যায়ে জাকাত ব্যবস্থাপনা করা হবে। জাকাতের মাধ্যমে জনগণকে আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত করে তোলা হবে। জাকাত প্রদানের সর্বোত্তম পন্থা হলো, কাউকে এমনভাবে সক্ষম করে তোলা যেন সে আর কখনো জাকাতের জন্য আবেদন জানাতে না আসে। পৃথিবীর সর্বপ্রথম সামাজিক ইন্স্যুরেন্স স্কিম হচ্ছে জাকাত। চতুর্থ কৌশল হলো, রাষ্ট্র তার রাজস্ব আয় থেকে বাদবাকী দারিদ্র্যকে বিমোচনের জন্য যা অর্থায়ণ প্রয়োজন তা’ করবে। পঞ্চমত স্বেচ্ছা প্রণোদিত সাদাকাহ ও ওয়াকফ-এর আয় থেকে এই কাজে ব্যবহার করা হবে।
ড. ইউসুফ আল কারযাভী এরপর ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাদির ফলে কীভাবে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমরের আমলে ইয়েমেন থেকে দারিদ্র্য পুরোপুরি নির্মূল হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে ইয়েমেনের গভর্নর অতিরিক্ত জাকাত মদীনায় ফেরত পাঠিয়েছিলেন। উমাইয়া খলীফা ওমর ইবনে আবদুল আযিযের আমলে আফ্রিকার মুসলিম এলাকায় এবং কার্যতঃ পুরো মুসলিম দুনিয়া থেকে দারিদ্র্য নির্বাসিত হয়ে গিয়েছিল। ঐ সময় এমন কাউকে পাওয়া যায়নি যে জাকাতের বা দানের প্রত্যাশী ছিল।
লেখক: সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন