Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাস সঙ্কট তবুও মূল্য বৃদ্ধির গণশুনানি আজ

আন্দোলনের হুমকি বিএনপি ও বাম জোটের

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গ্যাস অপরিহার্য পণ্য। গ্যাসের মূল্য বাড়লেই সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। মানুষের যাপিত জীবনে ফেলে নেতিবাচক প্রভাব। ২০১৭ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার পর আবারো গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া শুরু করছে সরকার। গ্যাসের দাম পুননিধারণের লক্ষ্যে আজ সোমবার গণশুনানি শুরু হচ্ছে। সব শ্রেণির গ্যাসের দাম গড়ে ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিতরণ সংস্থাগুলো একটি প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা সে অনুযায়ী গণশুনানির আয়োজন করেছি। গ্যাসের দাম বাড়বে কি না, সেটি গণশুনানিতে আলোচনা শেষে বিইআরসি তার পদ্ধতি অনুযায়ী ঘোষণা দেবে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, আইন অনুযায়ী একবার মূল্যবৃদ্ধির ১২ মাসের মধ্যে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে পারে না সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। তবে অযৌক্তিক ভাবে দাম বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
নতুন প্রস্তাবে রান্নার ব্যবহৃত দুই চুলার গ্যাসের বিদ্যমান দাম ৮৫০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা এবং সিএনজির দাম বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্যাসের দাম পুননিধারণের লক্ষ্যে সোমবার গণশুনানি শুরু হচ্ছে। রাজধানীর কাওরান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে এ গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে পেট্রোবাংলা, জিটিসিএল এবং বিতরণকারী কোম্পানি গুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ গণশুনানি আয়োজন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে। জনস্বার্থের চেয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধ্যান্য দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে বিএনপি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসি যে গণশুনানি করে, তা লোক দেখানো। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিটি জিনিসের মুল্য বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।
বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ স্থানে দিনের বেলা চুলায় গ্যাস থাকে না, মিটারবিহীন চুলায় গ্রাহকরা কম গ্যাস ব্যবহার করে বেশি দাম দিচ্ছে। আর সারাদেশে সাধারণ মানুষ বেশি দাম দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হচ্ছে। গ্যাসের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে যা ভারত যে দামে আমদানি করে তার থেকে দেড়গুণ বেশি দামে। বক্তারা শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করে দেশের স্থলভাগ ও সমুদ্র বক্ষের গ্যাস উত্তোলনে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিইআরসি সূত্র জানায়, সব শ্রেণির গ্যাসের দাম গড়ে ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত দুই চুলার গ্যাসের বিদ্যমান দাম ৮৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে চায় তারা। সিএনজির দামবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি হতে পারে। গণশুনানির প্রথম দিন আজ সোমবার সকালে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবো বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন(পেট্রোবাংলা)।
রাজধানীর কাওরান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে এ গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে শুনানি গ্রহণ করেছিল বিইআরসি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বর্ধিত মূল্যহার অনুযায়ী গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নির্বাচনের বছরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তখন বর্ধিত মূল্যহার ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল বিইআরসি। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে শুনানী বন্ধ করা হয়।
মূলত আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) কারণে এ খাতের ব্যয় বেড়েছে। গত বছর পেট্রোবাংলা-এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি পাইপলাইনে যুক্ত হয়েছে। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সামিটের এলএনজিও পাইপলাইনে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সমতুল্য এলএনজি গ্রিডে আসবে, যা বর্তমানে দেশে উত্পাদিত গ্যাসের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। ব্যয়বহুল এ তরলীকৃত গ্যাসের দাম সমন্বয়ের জন্যই গৃাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গ্রাহক পর্যায়ের পাশাপাশি যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) দাম প্রতি ইউনিট (প্রতি ঘনমিটার) ৩২ টাকা থেকে ৪০ টাকা, শিল্পকারখানার বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র) সরবরাহ করা গ্যাস (প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা ৭০ পয়সা) এবং সরকারি- বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম (প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ৭ টাকা ৬৬ পয়সা) বৃদ্ধির প্রস্তাব পেয়েছে বিইআরসি। বিইআরসিতে দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন করে গ্যাসের দাম না বাড়ালেও চলতি অর্থবছরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ৫৫০ কোটি টাকা মুনাফা করবে।
তিতাসের প্রস্তাবে বলা হয়, গ্যাসের দাম না বাড়ালে মুনাফা কম হবে, সে কারণে লভ্যাংশ দেওয়া (শেয়ার গ্রহীতাদের) সম্ভব হবে না। একইভাবে জালালাবাদ (বার্ষিক মুনাফা ১০০ কোটি টাকা), পশ্চিমাঞ্চল (বার্ষিক মুনাফা ৫১ কোটি টাকা), কর্ণফুলী (বার্ষিক মুনাফা ২৪৭ কোটি টাকা)। বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লাভ লোকসানের পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিইআরসিকে দেওয়া প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এর বাইরে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লোকসানে রয়েছে। অন্যতম কারণ হলো কুষ্টিয়া–ঢাকা পাইপলাইন স্থাপন।এটি স্থাপনে কোম্পানিটি ৫৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আর গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএলের বার্ষিক মুনাফা ১৬ কোটি টাকা।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে বছরের মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর করার কথা ছিল। আদালতের রায়ের কারণে প্রথম ধাপের দামবৃদ্ধি কার্যকর হলেও দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ