পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’-এই প্রতিপাদ্য নিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকাসহ সরাদেশে দিবসটি উপলক্ষে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। অনুষ্ঠানে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ৫ জন জয়িতাকে পুরষ্কৃত করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সমাবেশের আয়োজন করে ‘আমরাই পারি’ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট। গতকাল শুক্রবার প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে আমাদের আঁধার ভাঙার এ শপথে সকলের সংহতি প্রত্যাশা করে সংগঠনটি। গতকাল ৬৭টি নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি বেলা আড়াইটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ৫৮টি জেলা শহরে সহযোগী সংগঠন ও নারী সংগঠনসমূহের নেটওয়ার্ক ‘দুর্বার’ এর মাধ্যমে দিবসটি পালন করছে নারীপক্ষ। তাদের এবারের প্রতিপাদ্য ‘নারীর নাগরিক অধিকার।’ গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় নারীপক্ষ কার্যালয়ের সামনে থেকে রোডশো শুরু হয়ে সকাল ১০টায় মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে।
মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে রোডশো কালশী পর্যন্ত গিয়ে ফের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে এবং রোডশোটি আশুলিয়ায় গিয়ে আরো একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করে। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবে বিকাল ৫টায় এক সাংবাদিক সম্মাননা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা ও বিকাল ৩টায় আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানেরও প্রধান অতিথি ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। দিবসটি উপলক্ষে ড্যান কেক এক কনসার্টের আয়োজন করে। গতকাল বিকাল ৪টায় রবীন্দ্র সরোবরে কনসার্টি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। এ সমস্ত অনুষ্ঠান থেকে বক্তারা নারীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। কয়েক হাজার নারী শ্রমিক এই অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন নারী শ্রমিকরা। তারা বলছেন, দেশের অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র এখনও নারীবান্ধব নয়। ফলে কর্মক্ষেত্রে এখনও নারীরা যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রকে নারীদের কাজ করার উপযোগী করে তোলার দাবি জানান তারা।
বক্তারা বলেন, দেশের অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র নারীবান্ধব নয়। যৌন হয়রানির ঘটনা ছাড়াও পুরুষ সহকর্মীদের মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শ্রমজীবী নারীদের নানা ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। দেশের অনেক শিল্প কলকারখানার পরিবেশ এমন, টানা কয়েক বছর কাজ করলে নারী শ্রমকিদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। কারখানা পর্যায়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কিডনিসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় নারী শ্রমকিরা।
বক্তারা আরও বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে সন্তানসম্ভবা নারী শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা হয়। তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় বেতন-ভাতা-বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয়। নারীদের প্রতি এ ধরনের বৈষম্যের মধ্যে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
শ্রমিক নেতারা বলেন, বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে শ্রম আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই। গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষা ও কল্যাণ, সর্বোপরি তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, নির্যাতন, সহিংসতা বন্ধ এবং ন্যায্য মজুরি, ক্ষতিপূরণ ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইন করার দাবি জানানো হয়।
নারী দিবসে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিবাদ সমাবেশ
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরে বৈষম্যের প্রতিবাদে কালো পতাকা প্রদর্শন ও সমাবেশ করেছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শ্রমিক নেতা আমিরুল হক আমিন।
সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব শ্রমিক নেতা সালাউদ্দিন স্বপন, একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা কামরুল হাসান ও গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা বাচ্চু মিয়া প্রমুখ।
নির্যাতিত নারীদের ভাতা দেয়ার দাবি
নির্যাতিত নারীদের সরকারিভাবে ভাতা দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধন ও শোভাযাত্রা থেকে এ দাবি জানায় কমিশন। মানববন্ধনে কমিশনের সভাপতি মিনার নাহার লিপা, ভারপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি জেসমিন আরা কবির, সানজিদা সুলতানা, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবা বেগম লিলি, সহকারি সাধারণ সম্পাদক সুফিয়া প্রসারী পারুলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, নারীরাই সভ্যতার অগ্রদূত। কিন্তু আজ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীরাই সমাজের প্রতি ধাপে ধাপে নির্যাতনের শিকার। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন পাশ হলেও তা কেবল কাগজে রয়েছে। এর প্রতিফলন জীবনের কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় না। নারীরা বিচার পাচ্ছে না। এমনকি বিচার চাইতে গিয়েও নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
চাঁদনী ধর্ষণ ও হত্যার চার বছরে বিচার হয়নি
চাঁদনীসহ দেশের সকল নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছে নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ। গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চাঁদনী ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের চার বছর হওয়া সত্তে¡ও বিচার না হওয়ায় প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ২০১৫ সালের ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনাকে (১৩) কতিপয় নরপিশাচরা ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। চাঁদনীর বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলেও গত চার বছরেও তদন্তের নামে চলতে থাকে প্রহসন।
বক্তারা বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, মামলারবাদী, চাঁদনীর হতভাগা বাবা, সন্তানের হত্যাকান্ডের বিচার না পেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন। কতটা লজ্জার বিষয় স্বাধীন দেশের একজন পিতা সন্তানের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আমরা এই সংস্কৃতির অবসান চাই। আমরা চাই এই শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের মূল হোতাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
এদিকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দিবসটি উপলক্ষে গতকাল ও আজ দেশের সব জেলা শহরে নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনী, মেলা এবং জনসচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন। দিবসটির প্রতিপাদ্য তুলে ধরে প্রদর্শন করা হচ্ছে বিল বোর্ড, ফেস্টুন ও পোস্টার। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৮ মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। দিবসটি উদযাপনের পেছনে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ে সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিলেন তৎকালীন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। পরে, ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১০ সালে ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত নারীদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। জাতিসংঘ দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায়। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই এই দিনটি নারী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
বিমান বাহিনী মহিলা কল্যাণ সমিতির
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন
বিমান বাহিনী মহিলা কল্যাণ সমিতি (বাফওয়ার) শুক্রবার বিএএফ শাহীন হলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে। বাফওয়ার সভানেত্রী ইয়াসমিন জামানের নির্দেশনায় এ দিবসটি পালিত হয়। একই সময়ে একই কর্মসূচীর আওতায় বিমান বাহিনীর সকল ঘাঁটিতে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তি এসব বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিমান বাহিনী পরিবারের মধ্য থেকে কর্মজীবি কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা ও বিমানসেনা সহধর্মিনীদের অভিজ্ঞতা বিনিময় পর্ব। এ পর্বে তারা পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা, অবস্থান ও কর্মধারা সকলের সামনে তুলে ধরেন।-আইএসপিআর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।