পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সবক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে নেই বিচার বিভাগেও। ক্রমেই বেড়েই চলছে নারী বিচারকদের সংখ্যা। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ৯৯ জন। তাদের মধ্যে ৭ জন নারী বিচারপতি। যা শতকরা প্রায় ৭ ভাগের মতো। নিম্ন আদালতে ১ হাজার ৮১৯ জন বিচারক কমর্রত আছেন। এর মধ্যে ৫৩৮ জন নারী বিচারক। যা শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ। উচ্চ ও নিন্ম আদালতে বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি ১০০ জনের ৩৫ জন নারী বিচারক। তুলনামূলক উচ্চ আদালতের চেয়ে নিম্ন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বেশি। বিচার বিভাগে নারী অংশ গ্রহণের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। তারা মনে করেন, এ সংখ্যা ইউরোপ আমেরিকাসহ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, অধিকাংশ নারী বিচারক তাদের দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট সবসময় নারী পুরুষের সমতা ও জন-জীবনের সর্বস্তরে নারীর সম অংশ গ্রহণের নীতিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে। তিনি আরো বলেন, নারীর সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার রক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ, অন্যান্য পেশার মতই লক্ষণীয় হারে বাড়ছে। নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য নারী বিচারকদের আরো আন্তরিক হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী
সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সিদ্ধান্তে ১৯৭৪ সনে প্রথমবারেরমত বিচার বিভাগে নারীদের যোগ দেয়ার বাধা বিলুপ্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালে শুরু হয় নিম্ন আদালতে নারী বিচারকগণের পথচলা। এরপর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০১১ সালে আপিল বিভাগে সর্বপ্রথম নারী বিচারপতি নিয়োগ দেন। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিচার বিভাগে মোট নারী বিচারকের সংখ্যা ৫৪২ জন। এর মধ্যে আপিল বিভাগে একজন ও হাইকোর্ট বিভাগে ৭ জন বিচারপতি রয়েছেন। এ ছাড়া নিন্ম আদালতে রয়েছেন ৫৩৮ জন নারী বিচারক। সর্বশেষ ১১তম বিজিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৫৩ জন নারীর বিচার বিভাগে যোগদানের পর বর্তমানে মোট বিচারকের শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ নারী বিচারক। দেশের নিন্ম আদালতে বর্তমানে ১ হাজার ৮১৯ জন বিচারক কমর্রত আছেন। সংখ্যার অনুপাতে নিন্ম আদালতের বিচারকদের এক-চতুর্থাংশই নারী। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা এখন ৯৯ জন। আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। হাইকোর্ট বিভাগ এবং নিন্ম আদালতেও প্রথম নারী বিচারক তিনি। ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে দেশের প্রথম নারী বিচারক হিসেবে যোগ দেন নাজমুন আরা সুলতানা। পরে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি পদে নিয়োগ পান তিনি। এরপর ২০১১ সালে আপিল বিভাগেও তিনি বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালের ৬ জুলাই অবসরে যান তিনি।
উচ্চ আদালতে ৭ নারী বিচারপতি:
দেশের উচ্চ আদালতে নিজেদের মেধা, প্রজ্ঞা দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে বিচারপতি জিনাত আরা আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি ৬ জন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি। হাইকোর্ট বিভাগে দায়িত্ব পালন করা নারী বিচারপতিদের মধ্যে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ছাড়া বাকিরা পাঁচজন নিজ নিজ বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি। এর মধ্যে বিচারপতি কাশেফা হোসেন একক বেঞ্চে আছেন। বিচারপতি জিনাত আরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি হার্ভার্ড ল স্কুল ও ক্যামব্রিজ থেকে সার্টিফিকেট কোর্স করেন। বিচারপতি জিনাত আরা ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর বিচার বিভাগে মুনসেফ হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে তিনি পদোন্নতি পান। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ পান। এরপর আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দেন প্রেসিডন্ট। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর ১৯৮১ সালের ২২ আগস্ট তিনি ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৬ সালের আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৪ সালের তিনি স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাসের পর ১৯৯২ সালে জেলা আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টে এবং ২০০২ সালের আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৬ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। বিচারপতি নাইমা হায়দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন। এছাড়া কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অক্্রফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কেল বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী এবং ২০০৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১১ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এছাড়াও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে লেখাপড়া সম্পন্ন করার পর মুনসেফ হিসেবে ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। আর বিচারপতি কাশেফা হোসেন ইংরেজি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এ ছাড়া লন্ডনেও একই বিষয়ে পড়াশুনা করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন। পরে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান কাশেফা হোসেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।