বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত কয়েক আলোচনায় আমরা জান্নাতের আরাম-আয়েশ, সুখ-সমৃদ্ধি ও জাহান্নামের ভয়াবহতা ও কষ্টদায়ক শাস্তির কথা আলোচনা করেছি। আজ আমরা জান্নাত ও জাহান্নামের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ করতে চেষ্টা করব।
জান্নাতে যাওয়ার পর বান্দার অনুভ‚তি কেমন হবে সে সম্পর্কেও কোরআন আমাদের বলে দিচ্ছে। সূরা ফাতিরে ইরশাদ হয়েছে, জান্নাতবাসীরা জান্নাতে পৌঁছে নিজেদের ওপর আল্লাহতায়ালার রহমত আশীর্বাদের সীমাহীন বর্ষণ দেখে কৃতজ্ঞাতিশয্যে নিবেদন করবে: ‘আল্লাহতায়ালার লাখো কোটি শুকরিয়া, যিনি আমাদের চিন্তা দূর করে দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে আমাদের পরওয়ারদেগার অত্যন্ত ক্ষমাশীল, বড়ই মূল্যয়ানকারী, যিনি স্বীয় করুণা ও দয়ায় আমাদের স্থায়ী এ স্থানে (জান্নাতে) এনে হাজির করেছেন, যেখানে কখনও কোনো রকম কষ্ট ও অবসাদ স্পর্শ করবে না।’ (সূরা ফাতির : আয়াত ৩৪-৩৫)।
জাহান্নাম সম্পর্কে যা কিছু কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে তার পর্যালোচনা বা বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয়, যেসব দুঃখকষ্ট থেকে মানুষ এ পার্থিব জগতে বাঁচতে চায় এবং যা থেকে বাঁচা তাদের প্রকৃতির চাহিদা, জাহান্নামের মাঝে সেসব দুঃখকষ্ট এ জগৎ অপেক্ষা লক্ষ লক্ষ গুণ অধিক পরিমাণে সন্নিবেশ করা হয়েছে।
এ বর্ণনার মাধ্যমে কোরআন মাজীদের উদ্দেশ্য হলো এই যে, যে লোক এ জগত-সংসারে এক দিনের জন্যও এ দুঃখকষ্ট সহ্য করতে রাজি নয়, তার উচিত খোদাদ্রোহিতা ও নাফরমানির সে পথ থেকে বেঁচে থাকা, যেটি মানুষকে এ জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। যেখানে যাবার পর মানুষ অনন্তকাল ধরে এ দুঃখ-কষ্টে নিপতিত থাকবে।
তেমনিভাবে জান্নাত সম্পর্কে কোরআন মাজীদে যেসব বিবরণ দেয়া হয়েছে, তারও মুখ্য উদ্দেশ্য এই যে, মানব প্রকৃতিতে যেসমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অভিলাষ ও চাহিদা রয়েছে, জান্নাতে সে সমুদয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পরিপূর্ণ মাত্রায় সন্নিবিষ্ট রয়েছে।
সুতরাং মানুষের কর্তব্য, তারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী ও সৎকর্মের সে পথ অবলম্বন করবে যা তাকে সে জান্নাতে পৌঁছায়, যাতে মানুষের যাবতীয় প্রাকৃতিক কামনা-বাসনা ও আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের অবলম্বন পরিপূর্ণ মাত্রায় মজুদ রয়েছে এবং সেখানে যারা পৌঁছাবে তারা সেখানকার সুখ-স্বাচ্ছন্য অনন্তকাল ধরে উপভোগ করতে থাকবে।
আমরা জান্নাত জাহান্নামের বর্ণনা এখানেই শেষ করছি এবং জান্নাত ও জাহান্নামের সৃষ্টিকর্তা ও অধিপতির কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছি, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া নায়ুদুবিকা মিন গাদাবিকা ওয়ান্নার।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছে তোমার সন্তুষ্টি ও জান্নাত কামনা করছি এবং তোমার গজব ও জাহান্নাম থেকে তোমার আশ্রয় প্রর্থনা করছি। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।