Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকের জমজমাট ব্যবসা ওয়ারীতে

অভিযানের মধ্যেও গডফাদাররা বহাল তবিয়তে : বেড়েছে ছিনতাই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম

মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও রাজধানীর ওয়ারী থানা এলাকায় মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে। দিনে-রাতে প্রকাশ্যে চলছে মাদকের বেচাকেনা। আবার মাদকাসক্তরা ভোরে কিংবা সন্ধ্যার পর মাদকের টাকা জোগাড় করতে ছিনতাই করছে। এ নিয়ে ওয়ারী থানা এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাদক নির্মুলের জন্য পুলিশ মোটেও আন্তরিক নয়। মাদকের গডফাদারদের না ধরে মাঝে মধ্যে মাদকসেবিদের আটক করে পুলিশ তাদের দায়িত্ব শেষ করে। অথচ মাদকের চিহ্নিত স্পটগুলোর দিকে পুলিশের নজর নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের তালিকা অনুযায়ী ঢাকার সবগুলো থানা মিলে চিহ্নিত মাদকের স্পট আছে ৫শতাধিক। এর মধ্যে ডিএমপির বিভাগ অনুযায়ী রমনায় ৫৩টি, লালবাগে ৫৭টি, ওয়ারীতে ৭৭টি, মিরপুরে ৫৬টি, গুলশানে ২৫টি, উত্তরায় ৪০টি, মতিঝিলে ২২টি, তেজগাঁওয়ে ২৫টি চিহ্নিত মাদক স্পট রয়েছে। উল্লেখিত বিভাগগুলোর মধ্যে ওয়ারীতেই সর্বাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের মধ্যেও ডিএমপির তালিকাভুক্ত স্পটগুলো বন্ধ হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওয়ারীতে এখনও বহাল তবিয়তে আছে মাদকের চিহ্নিত গডফাদাররা। তারা টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে এসে পাইকারী বিক্রি করছে। এর মধ্যে কাপ্তান বাজারের শাহআলম, সবুরের ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। ওয়ারী থানা এলাকায় এরাই ইয়াবার বড় ডিলার। সূত্র জানায়, টেকনাফ থেকে এরা ইয়াবা সংগ্রহ করে মুরগির খাঁচার মধ্যে ঢাকায় নিয়ে আসে। কাপ্তানবাজারের মুরগির ব্যবসায়ী বলে পরিচিত শাহআলম ও সবুরের প্রকৃত পরিচয় পুলিশের অজানা নয়। এরাই ওয়ারীর টিকাটুলী, হাটখোলা, গোপীবাগ, দক্ষিণ মৈশুন্ডিসহ অভিজাত এলাকায় ইয়াবা সরবরাহ করে।
ওয়ারী থানা এলাকায় মাদকের আরেকটি বড় স্পট দয়াগঞ্জ আন্ত:জেলা ট্রাক টার্মিনাল। রাজধানী মার্কেটের পাশে এই ট্রাক টার্মিনালকে কেন্দ্র করে মাদকের বিশাল বাজার। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাক টার্মিনালে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গাঁজা। ট্রাকের চালক ও হেলপাররাই এর ক্রেতা। এখান থেকে গাঁজার বড় বড় চালান যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দয়াগঞ্জ ট্রাক টার্মিনালে বহুদিন ধরে মাদকের ব্যবসা করছে রাসেল ও ছাত্তার ড্রাইভার। নামের সাথে ড্রাইভার পদবি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এরা কখনও ট্রাক চালায় না। বরং মাদকের ব্যবসা করতে করতে এরা কয়েকটি ট্রাকের মালিক বনে গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ একবার এই ট্রাক টার্মিনাল থেকে ২১০ কেজি গাঁজা এবং পরের বার ১২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছিল।
স্থানীয়রা জানায়, দিনে-রাতে ট্রাক টার্মিনালে প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি হয়। এখান থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও সহজেই মাদক কিনে নিতে পারে। কে এম দাস লেনের এক বাসিন্দা বলেন, শুধু ট্রাক টার্মিনালে নয়, হুমায়ুন সাহেবের রেল গেইটেও দিনে রাতে প্রকাশ্যে মাদকের বেচাকেনা চলে। নির্বিঘেœ মাদক সংগ্রহ করতে পারায় অনেকের সন্তানই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকেই পরিবেশের কারণে এই এলাকা থেকে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
টিকাটুলির এক ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় ওয়ারী ছিল ঢাকার অভিজাত এলাকা। সেই আভিজাত্য এখন মাদকে গিলে ফেলেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে হুমায়ুন সাহেবের রেল গেইট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাদক ক্রয়ের জন্য উঠতি বয়সী তরুণরা মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির হচ্ছে রেল গেইটসংলগ্ন রাস্তায় সেখান থেকে মোবাইলে তারা মাদক বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে রেল লাইনের পাশ দিয়ে গেঁটে একটু আড়ালে গিয়ে মাদক সংগ্রহ করছে। স্থানীয় একজন জানান, দিনে রাতে এখানে সমানতালে মাদক বিক্রি হয়। রাতে রেললাইনের পাশেই বসে মাদকের আসর। তিনি বলেন, পুলিশ এদিকে আসে টাকা তোলার জন্য। টাকা তুলে আবার চলে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, শুধুমাত্র মাদকের কারণে কেএম দাস লেন, অভয় দাস লেন, হুমায়ুন রোড, স্বামীবাগ, আরকে মিশন রোড, বিসিসি রোড, মিতালী স্কুল রোডসহ পুরো এলাকায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম আগের মতোই আছে। বছর দেড়েক আগে এই এলাকাতেই ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিল স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র। ওই ঘটনার পর পুলিশ একটু তৎপর হলেও এখন আবার আগের অবস্থা ফিরে এসেছে।
এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ওয়ারী থানার দক্ষিণ মৈশুন্ডি এলাকার মাদকের গডফাদার ধরা পড়লেও পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। সূত্র জানায়, দক্ষিণ মৈশুন্ডি এলাকার মাদকের গডফাদার আমীর হোসেন ওরফে আল শাহরিয়ার রোকন এবং তার সহযোগীরা আগের মতোই মাদকের জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, মৈশুন্ডি এলাকার বহুতল ভবনগুলোতে রয়েছে মাদকের আখড়া। যেখান থেকে মাদক কেনা এবং সেবনও করা যায়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণ মাদকসেবিরা এসব ভবনে এসে মাদক সেবন করে চলে যায়। সামনা সামনি দেখে কেউই বুঝতে পারবে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওয়ারী থানা এলাকায় মাদকের বেচাকেনার নেপথ্যে রয়েছে থানা পুলিশের একজন এএসআই। তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হানিফ নামে এক সোর্স। মাদক ব্যবসায়ীরা জানায়, সোর্স হানিফকে টাকা না দিয়ে কেউই এই এলাকায় মাদক ব্যবসা করতে পারে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ