পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিরোধপূর্ণ কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভীষণ উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত পারমাণবিক যুদ্ধ হলে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হতে পারে। আঞ্চলিক উত্তেজনা এমনিতেই যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি গ্রুপ জইশ-ই-মোহাম্মদ এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। ভারত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়ে তার জবাব দেয়। মোটামুটি ৫০ বছরের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এটি তার প্রথম বিমান হামলা। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান জানায়, তারা তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী ২টি ভারতীয় জঙ্গি বিমান ভ‚পাতিত ও একজন পাইলটকে আটক করেছে। এর মধ্যে আবার আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, দু দেশের যে কেউ যদি তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের অংশমাত্রও ব্যবহার করে তাহলে বিশ্ব পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয়ের রূপ নিতে পারে।
দু দেশের কাছে ১৪০ থেকে ১৫০টি করে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। একটি পারমাণবিক যুদ্ধ হবে এমন নয়, তবে পাকিস্তানি নেতারা বলেছেন, তাদের সামরিক বাহিনী সব কিছুর জন্য প্রস্তুত। পাকিস্তানের পারমাণবিক আক্রমণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী গ্রুপের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার বেন রোডস ২৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে বলেন, এটি বিশে^র প্রধান পারমাণবিক সঙ্ঘাতস্থল। এ কারণে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা একটি মডেল তৈরি করেছেন যাতে দেখানো হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হলে, যাকে সীমিত আঞ্চলিক যুদ্ধ নামে আখ্যায়িত করা হয়, সারা পৃথিবীর উপরই প্রভাব ফেলবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যদিও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটবে স্থানীয় পর্যায়ে, কিন্তু তার প্রভাব বিস্তৃত হবে সারাবিশে^। ওজোন স্তর পঙ্গু হয়ে যেতে পারে এবং বিশে^র আবহাওয়া কয়েক বছর শীতল থাকতে পারে যাতে ফসল ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হতে পারে। যার পরিণতিকে গবেষকরা ‘বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক দুর্ভিক্ষ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমস্ফোরিক রিসার্চ-এ গবেষক মাইকেল মিলস বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, উভয় দেশের নীতি নির্ধারক ও জনসাধারণের কাছেই পারমাণবিক শৈত্যের বিপদ প্রায় উপলব্ধ হয়নি বা কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। এ বিপদ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আমরা দেখছি, বৈশি্বক প্রভাব বিবেচনায় পারমাণবিক অস্ত্র একবারেই অ-ব্যবহারযোগ্য।
ক্ষুদ্র পারমাণবিক যুদ্ধ পৃথিবী ধ্বংস করতে পারে
যখন একটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্ফোরিত হয় তখন তার ক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় কাঠামো-ধ্বংসকারী বিস্ফোরক ঢেউ, চোখ অন্ধ করে দেয়া অগ্নিগোলক ও ব্যাঙের ছাতার মত মেঘ। উদাহরণ স্বরূপ, পারমাণবিক বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয় জঞ্জাল শত শত মাইল জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এর ভয়াবহ উত্তাপ আশপাশের মাইলের পর মাইল কাঠামো জ্বালিয়ে দিতে পারে। যদি শিল্প এলাকা বা ঘনবসতি সম্পন্ন নগরে এ অগ্নিকান্ড ঘটে তবে তা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যাকে আগুনঝড় বলা হয়।
মিলস বলেন, এই আগুনঝড় পারমাণবিক অস্ত্রের মধ্যকার সঞ্চিত শক্তির বহুগুণ বেশি শক্তির প্রকাশ ঘটায়। আর তা মূলত নিজস্ব একটি আবহাওয়া সৃষ্টি করে যা সব কিছুকে তার দিকে টেনে এনে ভস্মীভূত করে।
মিলস ২০১৪ সালের এক গবেষণায় পাক-ভারত পারমাণবিক যুদ্ধের পরিণতির একটি মডেল প্রণয়নে সাহায্য করেন। এতে দেখা যায়, প্রতিটি দেশই ৫০টি করে অস্ত্র নিক্ষেপ করেছে যা তাদের অস্ত্রভান্ডারের অর্ধেক। প্রতিটি অস্ত্রই হিরোশিমা ধরনের প্রায় ১৫ কিলোটন টিএনটির সমপরিমাণ বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।
মডেলে বলা হয়, এসব বিস্ফোরণ বাতাসে প্রায় ৫০ লাখ টন ধোঁয়া ছড়াবে যা কয়েক দশক দীর্ঘ পারমাণবিক শৈত্য সৃষ্টি করবে। এ পারমাণবিক যুদ্ধের প্রভাব জনবহুল এলাকার উপরের ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ওজোনস্তর বিলীন করবে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমপক্ষে এক হাজার বছর ধরে যে রকম ছিল তার চেয়েও বেশি শীতল হবে।
গবেষকরা তাদের গবেষণায় যেসব বোমার কথা বলেছেন, তা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমা লিটল বয়-এর মত শক্তিশালী। একটি নগর ধ্বংসে তা যথেষ্ট। তবে এখনকার পারমাণবিক বোমার তুলনায় সেগুলো অনেক দুর্বল। উত্তর কোরিয়া সর্বশেষ যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তা‘ লিটল বয়ে’র চেয়ে কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী বলে ধারণা। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এর চেয়ে হাজারগুণ বেশি শক্তিশালী বোমা রয়েছে।
আগুন ঝড় কীভাবে আবহাওয়া ধ্বংস করতে পারে
গবেষকরা বলেন, পারমাণবিক বিস্ফোরণে সৃষ্টি হবে আগুনঝড়। আর এ আগুনঝড় ভবনসমূহ, যানবাহন, তেলের ডিপো, গাছপালাসহ অন্যান্য সব ভস্মীভ‚ত করবে। ট্রপোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে (পৃথিবীর অব্যবহিত উপরিভাগ) ধোঁয়া উত্থিত হবে এবং বিক্ষিপ্ত বস্তুকণা গিয়ে জমা হবে এর উপরের স্তর স্ট্রাটোস্ফিয়ারে।
স্ট্রাটোস্ফিয়ারে সূ² কুয়াশার স্তর সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছতে বাধা দেবে। গবেষকরা হিসেব করেছেন যে, পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরের পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পাবে।
উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মত জনবহুল অঞ্চলগুলোতে পরিবর্তনের ধাক্কা হবে মারাত্মক। এসব অঞ্চলে শীত প্রায় ২.৫ ডিগ্রি বেশি ঠান্ডা হবে এবং গ্রীষ্মগুলোর তাপমাত্রা ১ থেকে ৪ ডিগ্রি শীতল হবে। বরফে সূর্যালোক প্রতিফলিত হয়ে দূরে সরে যাওয়ার ফলে প্রসারিত সমুদ্র বরফ হিমকরণ প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করবে।
রোবোক বলেন, এতে ভ‚পৃষ্ঠ শীতল, অন্ধকার ও শুষ্ক হবে, আর তাতে উদ্ভিদের ক্ষতি হবে। এটা এমন এক বিষয় যার সম্ভাব্য বৈশি^ক প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সমীক্ষার লেখকরা বলেছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রায় পরিবর্তন সামুদ্রিক প্রাণিকুল ও বিশ্বের অধিকাংশ অংশের মানুষ যার উপর নির্ভরশীল সেই মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে দিতে পারে। খাদ্য সরবরাহের প্রতি এ ধরনের আকস্মিক আঘাত এবং ঘনায়মান আতঙ্ক ‘বৈশি^ক পারমাণবিক দুর্ভিক্ষ’র কারণ হতে পারে। তাপমাত্রা ২৫ বছরেরও বেশি সময়ে স্বাভাবিক হবে না।
চিন্তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হতে পারে
রোবোক পারমাণবিক শৈত্য দৃশ্যপটের নয়া মডেল বিষয়ে কাজ করছেন। তার টিম এ কাজ করার জন্য ওপেন ফিলানথ্রপি প্রজেক্ট থেকে প্রায় ৩০ লাখ ডলার মঞ্জুরি পেয়েছে।
তিনি বলেন, আপনি মনে করছেন যে, প্রতিরক্ষা দফতর ও হোমলান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা এ গবেষণায় অর্থ দিয়েছে। কিন্তু তারা কোনো অর্থ দেয়নি এবং তাদের কোনো আগ্রহও নেই।
তার আগের মডেলিং কাজের সময় থেকেই রোবোক বলে আসছেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাব্য ফলাফল হবে ভয়াবহ। এর কারণ, তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়ছে এবং নগরগুলো বেড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, আমরা আগে যেমনটি হিসেব করেছিলাম, তার চেয়ে অবস্থা পাঁচগুণ বেশি খারাপ হতে পারে।
সম্ভাব্য পরিণতি বিষয়ে গভীর জ্ঞানের কারণে রোবোক বিশ^ব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার হ্রাসের আহবান জানান। তিনি বলেন, তিনি মনে করেন যে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে। তাদের উভয়েরই প্রায় ৭ হাজার করে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
তিনি বলেন, কেন তারা প্রত্যেকে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্য ২শ’তে নামিয়ে আনছে না? এটা প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে চান তাহলে তাকে সদাসতর্ক অবস্থায় থাকা ভ‚মিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কারণ, সেগুলো আমাদের প্রয়োজন নেই। তাহলেই তিনি শান্তি পুরস্কার পাবেন, অন্য যে কারো চেয়ে আমাদের বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।