পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম খেলাপি ঋণ। দীর্ঘদিন সুশাসন না থাকায় খেলাপি ঋণের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। খেলাপি ঋণের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা ডিসেম্বর’ ১৮ প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর’ ১৭ শেষে ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরপরই আ হ ম মুস্তফা কামাল খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর এর পরই টনক নড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও খেলাপি ঋণ কমাতে নতুন কৌশল খুঁজছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে প্রতিটি ব্যাংকে স্পেশাল অডিট (বিশেষ নিরীক্ষা) করা হবে। তিনি বলেন, যারা ঋণ নিয়েছে, তারা কারা? তারা যে ঋণপত্র খুলে মূলধনী যন্ত্র এনেছে, তা কোথায় বসিয়েছে আমরা তা দেখবো। তিনটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে আমরা কাজ শুরু করবো। আমরা এমন একটা অবস্থানে নিয়ে আসতে চাই, যেখানে শুধু সততার বিজয় হবে, সবাই সত্য জানবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা হবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, এটি একটি ক্রাইম, আমাদের এই ক্রাইম বন্ধ করতে হবে। এই ঋণ বাড়ার প্রবণতা আমাদের থামাতে হবে, জাতিকে খেলাপি ঋণ থেকে মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, কৃষকের টাকা, এই টাকাকে খেলাপিতে পরিণত করা যাবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়মে দেয়া ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠন করা ঋণ আবার খেলাপি হচ্ছে। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এতে করে জনগণের আমানত গ্রহণ করলেও তার সুরক্ষা দিতে পারছে না ব্যাংক। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে অডিট ফার্ম নিয়োগের বিষয়টি আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা তৈরিতে সাহায্য করবে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে খেলাপি ঋণ দূরীকরণে ব্যাংকগুলোতে বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার এ সম্পর্কিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র মতে, তিনটি অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অডিট ফার্ম নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে অডিট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে হয়েছে বলে সূত্র জানায়। তবে কোন তিন প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত করা হয়েছে-তা জানা যায়নি। অর্থমন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নির্দেশনা অনুযায়ি তিন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। যে কোন উপায়ে হোক খেলাপি ঋণ কমাতে সরকার বদ্ধ পরিকর।
অন্যদিকে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর দেশের ব্যাংক খাতকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে খেলাপি ঋণের নীতিমালায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিসহ মোট সাতটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো খেলাপি ঋণ কমাতে ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, অর্থঋণ আদালত আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, নিগোসিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট ও দেউলিয়া বিষয়ক আইন পর্যালোচনা করে আরো কঠোর করার সুপারিশ করবে। দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে মার্জার বা একীভূত করতে নীতিমালা চূড়ান্ত করবে।
আরো জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থা জানতে জনতা, এবি ও আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এসব ব্যাংকের শীর্ষ পাঁচ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান, শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের ঋণ অবলোপন সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনা করবে কমিটি।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে খেলাপি ঋণের নীতিমালায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি পর্যালোচনা করা, নিজ ব্যাংকের বাইরে অন্য ব্যাংক থেকে পরিচালকদের ঋণ নেয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখা, ঋণ বিতরণ ও তদারকিতে পরিষদের ভ‚মিকার মূল্যায়ন করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় সরকার। নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধান করে আর্থিক খাতকে উদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন জাল জালিয়াতি, খেলাপি ঋণের লাগামহীণ ঊর্ধ্বগতি, মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট এসব কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। এতে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। তারল্য সংকটের কারণে উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে নতুন ঋণও পাচ্ছে না। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ব্যাংক খাত থেকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর আগে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তাদের এক প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল অব্যাহত থাকলে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাবে। এতে করে বাজেটে চাপ বাড়বে। এজন্য আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে। খেলাপি ঋণের দিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ যাতে কমে আসে সে ব্যাপারে আমরা সবাই কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে নিজেদের মধ্যে বৈঠক হচ্ছে, অন্যদের সঙ্গেও বৈঠক হচ্ছে। আমরা নিজেরাও পর্যবেক্ষণ করছি, ব্যাংকাররাও করছেন। এদিকে ব্যাংকের এমডিরা বলছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন, অর্থঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়া আইনের কিছু বিষয় সংস্কার দরকার। কারণ অনেকেই ব্যাংকের দায় পরিশোধ না করে আদালতে চলে যাচ্ছেন। সেখান থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছেন।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ। এই খেলাপি ঋণের কারণেই নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার ও ব্যাংকাররা উভয়ে চাচ্ছেন খেলাপি ঋণ কমাতে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আইন কমিশন, আইন মন্ত্রণালয়, বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিয়ম অব্যবস্থাপনার ও রাজনৈতিক বিবেচনায় যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এ ঋণ আদায় হচ্ছে না। এছাড়া বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনর্গঠন করা খেলাপিগুলো নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে না। এসব কারণে মন্দ ঋণের পরিমান বাড়ছে। খেলাপিদের যদি যথাযথ শাস্তির আওতায় নিয়ে না আসা যায় তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। যারা বড় ঋণখেলাপি তাদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী। ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। তাই খেলাপি ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে সময়োচিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।