Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসরায়েল মানবতাবিরোধী অপরাধ করে থাকতে পারে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ৭:৫৪ পিএম

বিক্ষোভ দমনের নামে ২০১৮ সালে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ মনে করে, এসব ফিলিস্তিনিকে হত্যার দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা যেতে পারে। এমন অনেককে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করেছে যারা স্পষ্টতই সহিংসতায় জড়িত নয়। এদের মধ্যে যেমন রয়েছে শিশু, তেমন রয়েছেন চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিক। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি ৩০০ জনেরও বেশি ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার এবং ড্রোনের ভিডিও ফুটেজসহ প্রায় আট হাজার প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
গাজাতে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস। এদের বেশিরভাগই ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ওই স্থান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া মানুষদের উত্তরসূরী। ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ও ইসরায়েলে থাকা পূর্বপুরুষদের ঘর-বাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবিতে ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ থেকে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ কর্মসূচি শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। এর অংশ হিসেবে ইসরায়েল সীমান্তে প্রতি সপ্তাহে আয়োজিত হতে থাকে বিক্ষোভ কর্মসূচি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কারণে এমন অনেক ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছে বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে যাদেরকে গুলি করার সময় তারা কারওর নিশ্চিত মৃত্যুর বা কাউকে গুরুতরভাবে আহত করার ঝুঁকি তৈরি করছিল না বা সরাসরি সহিংসতায় যুক্ত ছিল না।’ ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছে ১৮৯ জন ফিলিস্তিনি। এদের মধ্যে ১৮৩ জনের মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী দায়ি। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছয় হাজার ১০৬ জন সরাসরি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অপর তিন হাজার ৯৮ জন রাবারের আবরণযুক্ত ধাতব গুলি, টিয়ার শেল ও গুলিবর্ষণের কারণে ছিটকে আসা টুকরোর আঘাতে আহত হয়ে হয়েছে।
প্রতিবেদনের ভাষ্য, ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্নে’ নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৩৫ জন শিশু। আরও রয়েছে তিন জন চিকিৎসাকর্মী ও দুইজন সাংবাদিক, যারা প্রত্যেকে তাদের পেশাগত পরিচয়সূচক পোশাক পরা অবস্থায় ছিলেন। তদন্ত কমিটি মনে করে, ইসরায়েলি স্নাইপাররা সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী, শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করেছে এমনটা মনে করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে। কারণ এরা যে সরাসরি সহিংসতায় জড়িত নয় তা সহজেই আলাদাভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচসিআর) সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির সভাপতি সান্তিয়াগো ক্যান্টন বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দ্বারা ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার এবং মানবাধিকার আইন ভঙ্গ হওয়ার অভিযোগ বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে। মানবাধিকার আইন ভঙ্গের এসব ঘটনার মধ্যে কিছু ঘটনা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। ইসরায়েলের উচিত এসব অভিযোগের বিষয়ে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করা।’
ইসরায়েল দাবি করে, সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিগুলো বিক্ষোভের আড়ালে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দলগুলোর ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’ ইউএনএইচআরসিকে ইসরায়েল ‘উদ্ভট কথার মঞ্চ’ (থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ড) আখ্যা দিয়েছে। দেশটির ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ মন্তব্য করছেন, জাতিসংঘ ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও একটি শত্রুভাবাপন্ন, অসত্য ও পক্ষপাতমূলক’ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
অন্যদিকে, ইউএনএইচআরসি মন্তব্য করেছে, ইসরায়েল ও গাজার বিষয়ে বারবার তথ্য চাওয়া হলেও দেশটির কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করে গেছে। এমন কি গাজাতে প্রবেশাধিকারের অনুরোধেও তারা সাড়া দেয়নি। ইসরায়েল বলপ্রয়োগের যুক্তি হিসেবে বারবার ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ ও গাজা সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত শহরগুলোতে রকেট হামলার কারণ দেখিয়ে আসছে।
ক্যান্টন বলেছেন, ‘দায়িদের শাস্তি নিশ্চিতের লক্ষ্য নিয়ে বিক্ষোভ সংক্রান্ত প্রতিটি হতাহতের ঘটনার দ্রুত, পক্ষপাতহীন, স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে তদন্ত করাটা এখন ইসরায়েলের দায়িত্ব। তদন্ত করে দেখতে হবে, যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কি না। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলের উচিত, তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সামনে হাজির করা।’
ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি দাহ্য পদার্থযুক্ত ঘুড়ি ও বেলুন ব্যবহার করে হামলা চালানোর জন্য হামাসের নিন্দা করেছে। এই ধরনের হামলার কারণে দক্ষিণ ইসরায়েলে সম্পত্তির বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে সঞ্চার হয়েছে ভীতির। তদন্ত কমিটি বলেছে, ‘আমরা একই সঙ্গে গ্রেট মার্চ অব রিটার্নের উদ্যোক্তা, অংশগ্রহণকারী এবং গাজা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন কর্মসূচিটি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরায়েল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ