মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
একটি মাত্র সিদ্ধান্ত। তাতেই নাটকীয় মোড় নিয়েছে কাশ্মীর ইস্যু। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার উত্তেজনার বরফ গলতে শুরু করেছে। এই সিদ্ধান্ত একজনকে রাতারাতি হিরোর আসনে বসিয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসছে অভিনন্দনের বার্তা। অন্যজনের দিকে ধেঁয়ে যাচ্ছে একরাশ প্রশ্নের তীর। নিজ দেশেই তাকে সইতে হচ্ছে সমালোচনা। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে আর আসন্ন নির্বাচনের ভোট বাগাতে যুদ্ধের রাজনীতির অভিযোগও আনা হচ্ছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার যুদ্ধাবস্থায় বৃহস্পতিবার আটক পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে ছেড়ে দেয়ার কথা জানান পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এরই মধ্যে তার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রশংসা বার্তা দিয়েছেন খোদ ভারতেরই অনেক রাজনীতিক থেকে শুরু করে বিশিষ্টজন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও তাকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে।
অবশ্য শুরু থেকেই ইমরান খান কাশ্মীর ইস্যুতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে পদক্ষেপ নিয়েছেন। সর্বশেষ শুক্রবার যে তিনি ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দিচ্ছেন, সেটিকেও ‘শান্তির আকাঙ্ক্ষা’র পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এরপরই ইমরান খানকে ‘সত্যিকার রাষ্ট্রনায়ক’ বলে পাক সংসদে বিরোধীদল থেকে শুরু করে সবাই প্রশংসা করেছেন।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও রাজনীতিক নভোজিৎ সিং সিধু ইমরানের প্রশংসা করে টুইট করেছেন। তিনি লেখেন, ‘প্রত্যেক মহৎ কাজই তার নিজের জন্যই একটি রাস্তা বাতলে দেয়। ইমরান খান, তোমার শুভেচ্ছার নির্দশন (পাইলটের মুক্তি) কোটি জনতার জন্য ‘এক কাপ জয়’, একটি জাতির আনন্দ। আমি তার মা-বাবার জন্য আনন্দিত এবং তোমার (ইমরান খান) প্রতি ভালবাসা।’
আটক পাইলটকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়ে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং বলেছেন, ‘দ্রুত তাকে (পাইলট) ছেড়ে দেয়ার পদক্ষেপে আমি খুবই খুশি। এই যে মঙ্গল পদক্ষেপ নেয়া হলো, এটা যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়।’
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রসিদ্ধ সাবেক বিচারক মারকান্দে কাটজু টুইটে করেছেন, ‘এমন উত্তেজনার মুহূর্তেও শুরু থেকেই বিজ্ঞ এবং সংযত বক্তব্য দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সর্বশেষ পাইলটকে ছেড়ে দেয়ার ঘোষণার মাধ্যমে সত্যিই তিনি মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন। আশা করছি, দু’দেশের মধ্যকার উত্তেজনা এই পদক্ষেপের মাধ্যমেই চিরচরে শেষ হবে।’
ভারতের ফটোসাংবাদিক স্মিতা শর্মা পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দেয়ার ঘোষণায় ইমরান খানের প্রশংসা করে টুইট করেছেন। তিনি লেখেন, ‘চারপাশের সব শব্দই যেন শান্ত, কবির বাণী হয়ে ফুটছে, যখন অভিনন্দন ভারতাম্যানের ফিরে আসার সংবাদ শুনলাম। ধন্যবাদ ইমরান খান।’
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাবেক কর্নেল আজাজ শুক্লা পাকিস্তানের এই পদক্ষেপে দেশটিরই বিজয় হয়েছে বলে প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইমরানের খানের ঘোষণার পরই ভারতের সেনাবাহিনী তাদের ব্রিফিং পিছিয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধে কি হতো জানি না! কিন্তু, আপাতত অংশীদারিত্বের এই রণে সম্পূর্ণভাবে বিজয়ী হয়েছে ইসলামাবাদ। প্রত্যেক পদক্ষেপে দেশটির জনসংযোগ দপ্তর আমাদের চেয়ে এগিয়ে থেকেছে।’
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ভারতীয় পাইলটের মুক্তির ঘোষণায় ‘প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। টুইটে তিনি লেখেন, ‘পাক প্রধানমন্ত্রী আজ সত্যিকার রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকা নিয়েছেন। এখন আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বর্তমান সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসা উচিত। জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ অকল্পনীয় গারদে বসবাস করছে। আমরা আর কত নির্যাতন সইব?’
ভারতের নোবেল বিজয়ী কৃষাণ পার্থিব সিং বলেছেন, ‘প্রতিপক্ষ ভারতের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জয়লাভ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ভারতের বিপক্ষে আগে কখনো কোনো পাক প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে জিততে দেখিনি।’
পাকিস্তানের ভেতরেও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভূয়সী প্রমংসা করা হচ্ছে। লেখক ও আঁততায়ীর গুলিতে নিহত দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ভাতিজি ফাতিমা ভুট্টো টুইটে ইমরানের সিদ্ধান্তকে সাহসী এবং মানবিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতও ইমরান খানের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে।
বিপরীতে পাক ভূখণ্ডে বিমান হামলার পর যেভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাহবা দেয়া হচ্ছিল, এখন তা একেবারেই উবে গেছে। সে হামলার ফুটেজ যে একটি ভিডিও গেমসের, তা জানাজানি হওয়ার পরই অনেকে মোদিকে তোপ দাগছেন।
সভাপতি রাহুল গান্ধীর নির্দেশে বিরোধীদল কংগ্রেস তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়, ‘মেরা জওয়ান সবসে মজবুত’। দলের নেতারা বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি বলতেন, দল থেকে দেশ বড়। বিমানসেনা অফিসার এখনও পাকিস্তানের কব্জায়। আর প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, তার কাছে দেশের থেকে দল বড়। কংগ্রেসের কাছে দেশ প্রথম। মোদির কাছে দল প্রথম। সেনা সামলাচ্ছে দেশ, মোদি সামলাচ্ছেন দল।’
তারই কথার প্রতিধ্বনি তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘রাজনীতির প্রয়োজনে আর একটা নির্বাচন জেতার জন্য যুদ্ধ আমরা চাই না। আমরা শান্তি চাই।’
পুলওয়ামা হামলার পরে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অতর্কিত হানা এবং তার পর থেকেই যেভাবে গোটা দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই শুনছি, শত্রুপক্ষের ৩০০-৩৫০ লোক মারা গিয়েছেন। কত কী, আদৌ কেউ মারা গিয়েছেন কি না, আমরা জানতে চাই। আরও জানতে চাই, বোমা কোথায় ফেলা হয়েছিল, আদৌ বোমা ঠিক জায়গায় পৌঁছেছিল কি না।’
এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন বিদেশি সংবাদপত্রের নাম উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘তারা বলছে, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বোমাটা অন্য জায়গায় পড়েছে, মিস হয়েছে। মানুষ মারা যায়নি। কেউ বলছে একজন মারা গিয়েছেন। তো সত্যটি কী, এটাতো মানুষ জানতে চাইতেই পারে। আমরা বাহিনীর সঙ্গে রয়েছি। কিন্তু, বাহিনীকে সত্যি কথাটা বলার সুযোগ দেয়া উচিত। দেশের লোকেরও সত্যিটা জানা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের পক্ষে আমরা সবাই। দেশমাতৃকাকে আমরা সবাই ভালবাসি। জওয়ানদের রক্তে রাজনীতি করা আমরা ভালবাসি না। জওয়ানদের রক্তের দাম অনেক বেশি। তারা আমাদের গর্ব। তারা সীমান্তে লড়াই করেন। কিন্তু, ভোট বাক্সে ভোটের ফায়দা তোলার জন্য তাদের নিয়ে রাজনীতি করে কেউ কেউ। এটার নিন্দা করি।’ তবে বিরোধীদের এই সমালোচনার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন কর্নাটকের বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পা। তিনি বলেন, ‘মোদি যেভাবে পাকিস্তানে হামলা করেছেন, তারপর কর্নাটকে ২৮টির মধ্যে ২২টি আসনই পাবে বিজেপি।’ এরপর মোদি সরকারের মন্ত্রী ও প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভিকে সিংহ প্রকাশ্যে ইয়েদুরাপ্পার জবাব দেন, ‘দুঃখিত ইয়েদুরাপ্পাজি, কিছু বাড়তি আসনের জন্য সেনা কাজ করে না।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় পুলিশ কনভয়ে আত্মঘাতী হামলায় ৪২ জওয়ান নিহত হন। পরে জইশ-এ মোহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে। হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে ভারত। যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে আসছে।
পুলওয়ামা হামলার জবাব দিতেই গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে পাকিস্তানের ভুখণ্ডে হামলা চালায় ভারতের বিমানবাহিনী। পরে ভারত দাবি করে, ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান ১ হাজার কেজি বোমা ফেললে কমপক্ষে ৩০০ সন্ত্রাসী নিহত ও তাদের ঘাঁটি গুড়িয়ে গেছে। ভারতীয় যুদ্ধবিমানের নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের স্বীকার করলেও পাকিস্তান হতাহতের কথা অস্বীকার করে। এরই মধ্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। আর পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে আটক করে। পরে শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় পাইলটকে শুক্রবার ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যে ঘোষণা রাতারাতি তাকে হিরো বানিয়ে দিয়েছে। সূত্র: ইন্টারনেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।