Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফের বাড়ল খেলাপি ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ফের বাড়ল। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে বড় অংকের ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। যদিও গত বছর দেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন করে খেলাপি ঋণ যুক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, সা¤প্রতিক সময়ের মধ্যে গত বছরেই খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৬ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০.৩০ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে। ২০১৭ সালের একই সময়ে খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ২৩১ কোটি টাকা বেড়ে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তার আগের বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। ওই বছর ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৪ ও ২০১৫ সালে খেলাপি ঋণ বাড়ে যথাক্রমে ৯ হাজার ৫৮০ কোটি ও ৯ হাজার ২৫০ কোটি টাকা হয়।

২০১৪ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৫০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা, আর ২০১৫ সালে হয় ৫৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৩ সালে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়ে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নিয়ম না মেনে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়ার কারণেই টাকা আদায় হচ্ছে না। প্রকল্প প্রস্তাব ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ প্রদানের ঘটনা ঘটছে অহরহ। যারা ঋণখেলাপি, তাদেরও যথেষ্ট রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে। কাজেই ইচ্ছে করলেই ব্যাংক এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। তার ওপর ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হয়। মূলত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ঘটনাই ঋণখেলাপি হওয়ার মূল কারণ।

এর সঙ্গে রয়েছে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনা। ব্যাংকগুলোয় দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে। ইন্টারনাল মনিটরিং এবং সুপারভিশন হয়তো ঠিকমতো করা হয় না। অডিট কমিটির স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা থাকলেও তারা তা করতে পারছে না। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইনের যে দুর্বলতা রয়েছে, তা দূর করে দ্রæতগতিতে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে ঋণখেলাপি সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাবে।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন ছিল ২৮ নবেম্বর। ১ ডিসেম্বর বাছাইয়ের দিন পর্যন্ত চলে প্রার্থীদের ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক। প্রায় ২৫০ আবেদন আসে ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও উচ্চ আদালত প্রার্থীদের পুনঃতফসিল করে দেয়। এতে শেষ তিন মাসে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ কমেছে ৬ হাজার ৯২ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অথচ ডিসেম্বের তা কমে হয়েছে ৯৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। তবে এটি খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র নয়। এর বাইরেও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হিসাব থেকে বাদ দিতে অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। এগুলোও খেলাপি ঋণ। এ ছাড়া গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল এক ধরনের হিসাব জালিয়াতি। এসব ঋণ আদায় হয় না। সর্বোচ্চ কিছুদিন লুকিয়ে রাখা যায়।

এদিকে খাতওয়ারি হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়ই মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেক রয়েছে। এই খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৩০ শতাংশেরও বেশি। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত খাতের দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। এই খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১৮.৭৪ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বা বিতরণকৃত ঋণের ৫.৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণকৃত ঋণের ৬. ৫৩ শতাংশ বা ২ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।

সূত্র আরও জানায়, খেলাপি ঋণের শীর্ষ তালিকায় আছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপির ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের ৯ হাজার ৩৪৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাকের ৫ হাজার ৯৬৩ কোটি রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ১১৬ কোটি ও বিডিবিএলের ৮৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হয়েছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের ৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৪.৩১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফারমার্স ব্যাংক (নতুন নাম পদ্মা)। এখানকার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের ২ হাজার ১৮ কোটি, ইউসিবি ব্যাংকের ১ হাজার ৯০৪ কোটি, এবি ব্যাংকের ১ হাজার ৬৬৫ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের দেড় হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঋণ

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৯ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ