Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সাত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

গ্যাস সঙ্কটের কারণে সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন সাত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যাহত হলেও বেসরকারি খাতে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। আগামী পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্র তিনটির মেয়াদ বাড়ানো ও বিদ্যুৎ কিনতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ। এ সপ্তাহেই ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। পেট্রোবাংলার নেওয়া সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ গ্যাসভিত্তিক অন্তত তিনটি রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে এই সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার।
গ্যাস সংকটের কারণে বড় কেন্দ্রগুলো চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছে না, এই অবস্থায় কেন গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে? বিদ্যুৎ বিভাগ ও পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান মো, রুহুল আমীন।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ডর চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিনের দাবি গ্যাসভিত্তিক ওই তিনটি কেন্দ্র গ্যাস পেলে আগের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ দিতে পারবো। তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করে বিদ্যুতের দাম আগের চেয়ে কমিয়েছি।
ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো সার-সংক্ষেপে বলাা হয়েছে, পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান-২০১৬ অনুয়ায়ী ২০২১ সালের বাংলাদেশের ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। কয়লাভিত্তিক বড় কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে আরও সময় প্রয়োজন হবে। এই প্রেক্ষাপটে রেন্টাল/কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের মেয়াদ বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী আরও তিনি থেকে পাঁচ বছর বাড়ানোর বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্র তিনটি থেকে বর্তমান বাল্ক সাপ্লাই ট্যারিফ ইউনিট প্রতি দুই দশমিক ০৫ টাকা থেকে কমিয়ে দুই দশমিক ০২ টাকায় কেনা হবে। ভবিষ্যতে বাল্ক ট্যারিফে কোন ধরনের পরিবর্তন আসলে সে অনুযায়ী মুল্য নির্ধারিত হবে। ২০১৮ সালের ৩১ আগষ্ট এই কেন্দ্র তিনটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সার-সংক্ষেপে প্রস্তাব করা হয়।
পেট্রোবাংলার থেকে বিদ্যু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, স্্েরফ গ্যাস সঙ্কটের কারণে ওই দিন দেশের ৭টি বড় কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। এছাড়া আরও তিনটি কেন্দ্র তার উৎপাদন ক্ষমতার ৩৫ শতাংশেরও কম উৎপাদন করতে পেরেছে। অব্যাহতভাবে গ্যাস সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায় দেশের বড় বড় সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখন কাঙ্খিত উৎপাদনে ব্যর্থ। ঠিক তখন বেসরকারিখাতে স্বল্প উৎপাদনের তিনটি কেন্দ্রে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিটি কেন্দ্রের ১১ মেগাওয়াট করে মোট ৩৩ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই তিনটি কেন্দ্র চালু রাখতে গ্যাসের ওপর আরও চাপ বাড়বে বলেই মনে করছেন অনেক কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ব্ধতন এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্র তিনটির মেয়াদ বাড়ানো ও বিদ্যুৎ কিনতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ সপ্তাহেই ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন হতে পারে। বেসরকারি কেন্দ্র তিনটি হচ্ছে, আশুলিয়ায়, নরসিংদীর মাধবদী ও কুমিল্লার চান্দিনায়। কেন্দ্রগুলো থেকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এবং নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বিদ্যুৎ নিচ্ছে। কেন্দ্র তিনটি স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে সামিট পাওয়ার লিমিটেড।
গ্যাস সঙ্কটের কারণে দেশের সরকারি বড় বড় কেন্দ্রগুলো ( বেইজ লোড পাওয়ার প্লান্ট) সক্ষমতার চেয়েও দিনে অন্তত ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করছে। একইসঙ্গে চাহিদার তুলনায় কম গ্যাস পাওয়ার কারণে শিল্প কারখানায়ও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়। এই অবস্থা মোকাবেলায় পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্ত ছিলো গ্যাসভিত্তিক ছোট কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হবে না। শুধুমাত্র বড় কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। কিন্তু প্রেট্রোবাংলার সে সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মন্ত্রণালয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিবরণীতে বলা হয়, গত ১৯ ফেব্রæয়ারি এদিন সক্ষমতার চেয়েও ১২৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে।ওইদিন গ্যাস সংকটের কারণে ৭টি বড় কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ ছিল। কারখানাগুলো হচ্ছে- ঘোড়াশাল এসটি, টঙ্গি জিটি, সিদ্ধিরগজ্ঞ এসটি, শিকলবাহা, শিকলবাহা পিকিং, বাঘাবাড়ি জিটি এবং সিরাজগজ্ঞ ইউনিট-৪। এছাড়া তিনটি কেন্দ্রে পুর্নাঙ্গ ক্ষমতার চাইতে অনেক কম উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সিরাজগঞ্জ জিটি-১ ও ২ কেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছে ১৩০ মেগাওয়াট, ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চট্টগ্রাম এসটি কেন্দ্রটি উৎপাদন করেছে মাত্র ৪০ মেগাওয়াট এবং ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরপিসিএল সিসিপিপি কেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছে ৪২ মেগাওয়াট। যা গড়ে মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৩৫ শতাংশেরও কম।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের অনুমতি দেওয়া হবে। এগুলোর মেয়াদ কি কারণে বাড়ানো হচ্ছে। যার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ কেন্দ্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ