পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বয়ে চলেছে আনন্দের বন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। বিদ্যুৎকেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। পাল্টে যাবে মানুষের ভাগ্যের চাকা। বদলে যাবে জীবনধারা। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলো। পথে পথে টানানো হয়েছে নৌকার তোরণ। সিক্সলেন সড়কের প্রধান ফটকে নির্মাণ করা হয়েছে বর্ণিল গেট। বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভ্যন্তরের সড়কগুলোও সাজানো হয়েছে রঙ-বেরঙের পতাকা। এমনকি শেখ জামাল, শেখ কামাল ও শেখ রাসেল সেতু বর্ণিল আলোয় সজ্জিত করা হয়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভাও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। পৌর শহরের খাসপুকুর থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত করা হয়েছে আলোকসজ্জা। পৌর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সাঁটানো হয়েছে নানান ফেস্টুন। লাখ লাখ মানুষ মুখিয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন উপভোগের জন্য।
বাংলাদেশ কার্যত ইতিহাস সৃষ্টি করল। দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে কম সময়ে এমন বড় অবকাঠামো নির্মাণ করার ঘটনা দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য এটি বড় সাফল্য। প্রকল্পের ব্যয় বা মেয়াদ বাড়েনি, বরং এ প্রকল্পে সাশ্রয় হয়েছে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ হিসেবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় নাম উঠালো। এ কেন্দ্রে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। কার্বন নিঃসরণের হার পরিমাপ করে এখানে নিয়মিত পরিবেশ দূষণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তেমন ক্ষতিকর কিছু ঘটেনি। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি। আর দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদন শুরু করে একই বছরের ২৬ আগস্ট। তবে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় পাওয়ার অপেক্ষায় এতদিন কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি। এছাড়া উদ্বোধনের পাশাপাশি শতভাগ বিদুৎতায়নের ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আজ সোমবার আনুষ্ঠানিক প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে কম সময়ে এমন বড় অবকাঠামো নির্মাণ করার নজির স্থাপন হলো। প্রকল্পের ব্যয় বা মেয়াদ বাড়েনি, বরং প্রকল্পের সময় ও টাকা সব কিছুই সাশ্রয় হয়েছে। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থের জোগান করতে দেড় থেকে দুই বছর লেগে যায়। এখানে তা হয়েছে এক মাসের মধ্যে। এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছে মাত্র আট মাসে। প্রকল্পের অনেক কাজ একই সঙ্গে চলেছে। সব মিলে কম সময়ের মধ্যে এটি করা সম্ভব হয়েছে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের কোনো ক্ষতি করছে না। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রর মাধ্যমে দেশ আজ শতভাগ বিদ্যুৎ পাবে। এ ধরনের একটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সাধারণত ৬ বছর সময় লাগে। তাদের সময় দেয়া হয়েছিল ৪ বছর। নির্মাণ শেষ হয়েছে এক মাস আগেই।
মূলত বাংলাদেশে এটাই প্রথম নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার নজির স্থাপন করেছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয়ও প্রাক্কলিত পরিমাণের চেয়ে কম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ প্রকল্পের তালিকায় ছিল না। ওই তালিকায় থাকা দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল ও মাতারবাড়ী এখন পর্যন্ত উৎপাদনে আসতে পারেনি। কিন্তু পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৪৮ মাস চার বছর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এক মাস আগেই। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে উৎপাদনে আসা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সবচেয়ে বড়। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ২৩০ কোটি ডলার (প্রায় ১৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা)। বাংলাদেশের ইতিহাসে কম সময়ে এত বড় অবকাঠামো নির্মাণ করার ঘটনা দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের এটি বড় সাফল্য।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম ইনকিলাবকে বলেন, সময়, দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য এটি একটি মাইলফলক, অন্য প্রকল্পের জন্য নজির। দীর্ঘ সময় এই কেন্দ্র থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। সঞ্চালন লাইন তৈরি ও কয়লার সরবরাহ ঠিক রেখে কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তি বিবেচনায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের অন্যতম সেরা একটি প্রকল্প।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থের জোগান করতে দেড় থেকে দুই বছর লেগে যায়। এখানে তা হয়েছে এক মাসের মধ্যে। প্রকল্পের অনেক কাজ একই সঙ্গে চলেছে। সব মিলে কম সময়ের মধ্যে এটি করা সম্ভব হয়েছে। অবশ্য পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ রয়েছে যে, কয়লার ব্যবহারের কারণে এটি পরিবেশের ক্ষতি করবে। বছরে ৪০ লাখ টন কয়লা ব্যবহার করা হবে এ কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। কার্বন নিঃসরণের হার পরিমাপ করে এখানে নিয়মিত পরিবেশদূষণ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন ক্ষতিকর কিছু ঘটেনি। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ হিসেবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় নাম আজ উঠলো।
পায়রা তাপবিদুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী তারিক নূর (অপারেশন এটাচ) জানান, প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৬ বছর, কিন্তু ৩ বছরের মধ্যে বিদুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রিড লাইনের মাধমে গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-ভেড়ামাড়ার মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের ওয়ের্স্টান গ্রিডে সংযুক্ত হচ্ছে। যার মধ্যে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো ছাড়া ওয়েস্টার্ন গ্রিডের মাধ্যমে খুলনা বিভাগেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বরিশাল বিভাগে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদার ১০০০ মেগাওয়াট বিদুৎ সরবরাহের পাশাপাশি খুলনা বিভাগের চাহিদার ২০০০ মেগাওয়াটের মধ্যে বাকি বিদ্যুৎ এখান থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পদ্মা রিভার ক্রসিং টাওয়ারের কাজ শেষ হলে তা ইস্টার্ন গ্রিডেও সরবরাহ করা হবে। তিনি আরো জানান, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে আরো ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান। এছাড়াও ২০২৬ সালের মধ্যে নতুন করে ১২০০ মেগাওয়াট এলএনজি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ, জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য পটুয়াখালীর পায়রা থেকে পটুয়াখালী সদর হয়ে গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলা পর্যন্ত আগেই ১৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ডবল সার্কিটের হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়েছে। এর মাধ্যমে বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রয়েছে। এ ছাড়াও গোপালগঞ্জ গ্রিড থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ চলছে।
বিসিপিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়নে একটি উপকেন্দ্র বসিয়ে পটুয়াখালী জেলাতেই ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিকল্প সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে খুলনা-যশোর এলাকায় এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে এখন সক্ষমতার ৮৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে। এদিকে পিজিসিবি যে সঞ্চালন লাইন তৈরি করছে, তার কাজ শেষ হতে পারে আগামী ডিসেম্বরে। সময়, অর্থ ও প্রযুক্তি বিবেচনায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের অন্যতম সেরা একটি প্রকল্প। বিদ্যুৎ খাতের জন্য এটি মাইলফলক, অন্য প্রকল্পের জন্য নজির। দীর্ঘ সময় এই কেন্দ্র থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। সঞ্চালন লাইন তৈরি ও কয়লার সরবরাহ ঠিক রেখে কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আগে দেশে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৪৫০ মেগাওয়াট। এই ক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। অবশ্য বড় আরো তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী কয়েক বছরে উৎপাদনে যাবে বলে আশা রয়েছে। সেগুলো হলো ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমে। কারণ, তখন ডিজেল ও ফার্নেস তেলভিত্তিক ছোট কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমে যায়।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি ব্যয় প্রায় ৩০ টাকা, ফার্নেস তেলে ১৪ টাকা ও কয়লায় ৭৮ টাকা। সবচেয়ে কম ব্যয় গ্যাসে, ইউনিটপ্রতি ৪ টাকার মতো। সার্বিকভাবে দেশে এখন গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইউনিটপ্রতি সাড়ে ৮ টাকার মতো। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার এক দশক আগে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি সই হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। যৌথ উদ্যোগের এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালাতে প্রতিদিন ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হবে। ১০ বছরের চুক্তির আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ ও চীনের দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সমান অংশীদারিত্বে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। এ কোম্পানির ৫০ শতাংশ করে মালিকানায় রয়েছে দেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চুক্তির এক মাসের মাথায় অর্থায়নের চুক্তি করে বিসিপিসিএল। প্রকল্পের ৮০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণসহায়তা থেকে।
মহিপুর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বুলেট আকন জানান, প্রধানমন্ত্রী কলাপাড়া আসায় আমরা দক্ষিণাঞ্চলবাসী আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীর হাতের ছোঁয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মাটি সোনায় রূপান্তরিত হয়েছে। এক সময়ের অবহেলিত কলাপাড়াকে জেলা ঘোষণা করার দাবি জানাই।
পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো: গিয়াস উদ্দিন জানান, পায়রা তাপবিদুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে এ অঞ্চল উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। পায়রা বন্দরের মাধ্যমে যে অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী আজ তারই ধারাবাহিকতায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন নতুন কল-কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ অধ্যক্ষ মহিবুবুর রহমান মহিব এমপি সাংবাদিকদের জানান, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ভ‚মিকা কোনো দিন ভোলার নয়। তাই সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আগমনে কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও মহিপুরের মানুষ আনন্দিত।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যৌথ উদ্যোগের ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছেন চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম। চীনের এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০ পরিবারকে ১৬ একর জমির ওপর ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ নামে আবাসিক পল্লী নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।