Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুষ্টু ভূতের সাজা

প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আ ব্দু স সা লা ম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
ভূত রাজকুমারের সাথে রাজা ও রাণী দু’দিন পর এক টেবিলে খেতে বসলেন। টেবিলে সকলের পছন্দ মতো খাবার দেয়া ছিল। রাজকুমার তার পছন্দের খাবার না খেয়ে অন্য খাবারগুলো খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেললো। এসব লক্ষ্য করে রাজা তাকে বললো, কী ব্যাপার, তুমি তোমার পছন্দনীয় খাবার না খেয়ে এইসব খাবার খেলে যে?’ ভূতটি বুঝতে পারলো যে, আসল রাজকুমারের কিছু প্রিয় খাবার ছিল। যা তার জানা নাই। তাই সে কৌশলে টেবিলে রাখা সব খাবারগুলো দ্রুত খেয়ে ফেললো। এসব দেখে রাজা ও রাণী বেশ অবাক হলেন এবং মনে মনে একটু ভয়ও পেলেন। রাজকুমারকে নিয়ে রাজার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে রাজা রাণীকে কিছু বললো না। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে তারা খাবার টেবিল হতে উঠে নিজের ঘরে প্রবেশ করলো। রাণী রাজাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করলো। কিন্তু রাজা কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে রাণীকে শুধু ধৈর্যধারণ করতে বললো।
রাজকুমার বাইরে বের হয় না। সবসময় ঘরের মধ্যে অবস্থান করে। কারোর সাথে তেমন করে কথাও বলে না। এসব দেখে রাজা ও রাণী বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। তারা রাজকুমারের খাদেম আমির হোসেনের সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকলেন। কয়েকদিন পর আমির হোসেন একটু সুস্থ হলে রাজা তাকে প্রাসাদে আসার জন্য খবর দিল। খবর পেয়ে আমির হোসেন রাজপ্রাসাদে রাজার সাথে দেখা করলো। রাজা তাকে রাজকুমারের বিষয়ে সব কথা অবহিত করলেন। রাজা তাকে আরও অনুরোধ করে বললেন, ‘তুমি খেয়াল করবে রাজকুমার আমাদের আসল রাজকুমার কিনা, না অন্য কেউ রাজকুমারের রূপ ধরে রাজপ্রাসাদে আশ্রয় নিয়েছে।’ আমির হোসেন রাজাকে বললো, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমি দুই একদিনের মধ্যেই আপনাকে সবকিছু জানিয়ে দেব। তারপর আমির হোসেন ভূত রাজকুমারের খেদমতে নিয়োজিত হলেন।’
রাজকুমারকে দেখে আমির হোসেনের মনে প্রথমেই একটা খটকা লাগলো। কারণ সে আমির হোসেনকে দেখেই ভয় পেয়ে যায়। এরপর থেকে আমির হোসেন রাজকুমারের চলাফেরা, কথাবার্তা, আচার-আচরণ সবকিছু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেন। তিনি নিশ্চিত হলেন যে, সে রাজকুমারের ছদ্মবেশধারী কোনো একজন। সে আসল রাজকুমার নন। রাজকুমারের রূপ ধরে রাজপ্রাসাদে আশ্রয় নিয়েছে। আর দেরি করা যাবে না। দ্রুত রাজাকে এ বিষয়টি জানাতে হবে। দুই একদিন পরেই আমির হোসেন বর্তমান রাজকুমারের বিষয়ে রাজাকে সব ঘটনা খুলে বললো।
সবকিছু জানার পর এর একটা বিহিত করার জন্য রাজা ঘনিষ্ট কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। একজন মন্ত্রী রাজাকে জানালেন যে, এই রাজ্যে একজন বুজুর্গ দরবেশ বাস করেন। উনার অনেক ক্ষমতা। উনি আসলে একজন যাদুকর দরবেশ। সে তার যাদুরকাঠি দিয়ে মানুষ ছাড়া দুষ্টু জীবজন্তু ও পশুপাখিদের পুতুল বানিয়ে শাস্তি দিতে পারেন। আমরা উনার সাহায্য নিতে পারি। তবে এসব কথা আমাদের অবশ্যই গোপন রাখতে হবে। কোন রকমে যেন রাজকুমার জানতে না পার। তারা বিষয়টি গোপন রেখে কাজ করতে থাকলো। রাজার হুকুমে সেই বুজুর্গ দরবেশকে পরেরদিন রাজপ্রাসাদে আনা হলো। রাজা তাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। সবকথা শুনে দরবেশ রাজাকে বললেন, ‘আপনি বিতাড়িত রাজকুমারকে তাড়াতাড়ি খুঁজে আনুন। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে তাকে আমার খুব প্রয়োজন।’
রাজার লোকজনেরা রাজার হুকুমে বিতাড়িত রাজকুমারকে খুঁজতে শুরু করলো। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর তাকে পাশের রাজ্যে খুঁজে পাওয়া গেল। তারা বিতাড়িত রাজকুমার এবং তার সঙ্গীদের রাজ্যে নিয়ে আসলো। তারপর বিষয়টি দরবেশকে জানানো হলো। দরবেশের পরামর্শে তাকে রাজপ্রাসাদের বাইরে রাখা হলো। দরবেশ পরেরদিন রাজপ্রাসাদে আসলেন। ভূত রাজকুমার এসব কিছুই জানতে পারলো না। দরবেশের পরামর্শে রাজা ভূত রাজকুমারকে বললেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। আমি শাসনভার তোমার হাতে তুলে দিতে চাই। তুমি তো জানো, এই রাজ্যে একজন দুষ্টু ভূত বাস করে। সে তোমার রূপ ধরে এখানে একদিন এসেছিল। আমি চাই না, সে তোমার কোনো ক্ষতি করুক। তাই সকলের সামনে তোমার হাতে শাসন ক্ষমতা তুলে দিতে চাই। এই কথা শুনে ভূতটি মনে মনে খুশি হলো। আর সে বললো, ভূতটি আমার রূপ ধরে আপনার কাছে আসতে পারে। সে মিথ্যা কথা বলে আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। আপনি তার কথা মোটেই বিশ্বাস করবেন না। ও খুব বদমায়েশ। ওকে এই রাজ্যে কোনভাবে ঢুকতে দেবেন না।
--‘ও তুমি চিন্তা করো না। সে তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এখন তুমি যাও। আগামীকালই এর একটা বিহিত করে ফেলবো।’
বুজুর্গ দরবেশের পরামর্শে পরের দিন দরবার হলে রাজা ও রানীসহ রাজ্যের সকল মন্ত্রী, রাজকর্মচারী ও রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত হলেন। বিতাড়িত রাজকুমার ও ভূত রাজকুমারকেও দরবার হলে আনা হলো। দরবার হলের উপস্থিত লোকজনকে দেখে ভূত রাজকুমার ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু তার তখন পালানোর উপায় ছিল না। যাহোক, দুই রাজকুমারকে দুই পাশে বসানো হলো। দুই জনের একই রকম চেহারা। বোঝার উপায় নেই যে, কে আসল আর কে নকল। দরবেশ তাদেরকে বললেন, আজকে আমাদের মহান রাজা রাজ্যের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। আপনারা জানেন এখানে দুইজন রাজকুমার উপস্থিত আছেন। রাজা তার হাতেই শাসন ক্ষমতা দেবেন যিনি আসল রাজকুমার। তাই আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কে আসল রাজকুমার আর কে নকল রাজকুমার তা চিহ্নিত করতে। তারপর তিনি রাজকুমারদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আমি তোমাদের একটি পরীক্ষা নেব। আর তা হলো- তোমাদের পশুর রূপ ধারণ করতে হবে। যে পরীক্ষায় পাশ করবে, সে হলো আসল রাজকুমার। আর যে পরীক্ষায় পাস করবে না, সে হবে নকল রাজকুমার। আর নকল রাজকুমারকে বন্দি করে মৃত্যুদ- দেয়া হবে।’ দরবার হলে পিন পতন নীরাবতা। সকলে নিশ্চুপ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। দরবেশ কী করে তা দেখার জন্য সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
দরবেশ প্রথমে বিতাড়িত রাজকুমারকে বললেন, ‘তুমি তোমার চেহারা পরিবর্তন করে কোনো পশুর রূপ ধারণ কর। না পারলে তোমাকে মৃত্যুদ- দেয়া হবে।’
--‘দেখুন, আপনারা আমাকে মৃত্যুদ- দেন তাতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব নয় নিজের রূপ পরিবর্তন করা।’
--‘তোমার শাস্তি মৃত্যুদ-। মৃত্যুদ- কার্যকর করার পূর্বে অন্য রাজকুমারকেও আমাকে পরীক্ষা নিতে হবে।’
তারপর দরবেশ অন্য রাজকুমারকে উদ্দেশ্য বললেন, ‘তুমি পারবে কোনো পশুর রূপ ধারণ করতে? নইলে তোমাকেও মৃত্যুদ- দেয়া হবে।’
--নিশ্চয় পারবো। আমি এক্ষুণি পশুর রূপ ধারণ করে দেখাচ্ছি।
এ কথা বলার সাথে সাথে ভূতটি সকলের সামনে নিজের রূপ পরিবর্তন করে একটি নেউলের রূপ ধারণ করলো। আর অমনি দরবেশ তার যাদুরকাঠির সাহায্যে তাকে একটি ছোট পুতুল বানিয়ে ফেললো।
বুজুর্গ দরবেশ সকলের সামনে বিতাড়িত রাজকুমারকে দেখিয়ে রাজাকে বললেন, ‘উনিই হলো আসল রাজকুমার। আর এই পুতুলটি হলো সেই দুষ্টু ভূত। সে বেঁচে থাকলে আপনাকেও মেরে ফেলতো। এখন তার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। এই পুতুলটি এক্ষুণি নদীর মধ্যে ফেলার ব্যবস্থা করুন। সে আর কখনও কারোর ক্ষতি করতে পারবে না।’ দরবেশের কথা মতো রাজার লোকেরা পুতুলটি নদীর মাঝখানে ফেলে দিল। দুষ্টু ভূতের সাজা পাওয়ার কথাটি সারা রাজ্যে ছড়িয়ে গেল। সারা রাজ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। হারানো রাজকুমারকে পেয়ে রাজা ও রাণী খুব খুশি হলো। এরপর থেকে রাজ্যের কাউকে আর দুষ্টু ভূতের অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি। লোকজনেরাও নির্ভয়ে সড়কপথে চলাফেরা করতে থাকলো। আর রাজ্যেও সুখ-শান্তি ফিরে আসলো। (সমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুষ্টু ভূতের সাজা
আরও পড়ুন