সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
আ ব্দু স সা লা ম
অনেকদিন আগের কথা। বড় একটি নদীর পাশে একটি রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যটি ছিল ধন-সম্পদে ভরপুর। রাজ্যের প্রজাদের কোনো অভাব ছিল না। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে রাজ্যে বসবাস করতো। রাজ্যের রাজা ছিল খুব ভালো একজন শাসক। প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করার জন্য তিনি সব সময় চেষ্টা করতেন। রাজপ্রাসাদে বসে তিনি রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। রাজাকে দেখাশুনা করার জন্য রাজকর্মচারীরা রাজপ্রাসাদেই বসবাস করতো। আর রাজপ্রাসাদের একটু দূরে উজির, সেনাপতি ও অন্যান্য মন্ত্রীরা বসবাস করতো।
বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রজাদের রাজপ্রাসাদে আসতে হতো। রাজপ্রাসাদে আসতে হলে তাদেরকে প্রধান একটি সড়ক ব্যবহার করতে হতো। ওই দীর্ঘ সড়কটির দুই পাশে বড় বড় গাছ ছিল। সেই গাছগুলোতে একটি দষ্টু ভূত বাস করতো। কোনো পথচারীকে একা পেলেই সেই ভূতটি বিভিন্নভাবে তাকে ভয় দেখাতো। ওই ভূতটির ভয়ে অনেকে সড়ক পথে একা একা চলাফেরা করতে সাহস পেত না। ভূতটি সকলকে ভয় দেখাতে পারলেও রাজকুমারকে চেষ্টা করেও কখনও ভয় দেখাতে পারেনি। কারণ রাজকুমার যখন বাইরে কোনো কাজে বের হতেন, তখন তার সাথে রাজকর্মচারীরা থাকতো। রাজকুমারকে ভয় দেখাতে না পারার কারণে ভূতটির মনে একটা কষ্ট ছিল। এছাড়াও ভূতটির মনে বড় একটি বাসনা ছিল রাজ্যটির রাজা হওয়া। কীভাবে রাজ্যটির রাজা হওয়া যায় ভূতটি সে চেষ্টাও করে আসছিল।
রাজা ও রাণী রাজকুমারকে খুব ভালোবাসতেন। রাজকুমার যা চাইতো রাজা-রানী তার সব ইচ্ছা পূরণ করতেন। রাজাকুমার নিয়ম করে খাবার খেত, চলাফেরা করতো এবং পোশাক পরিচ্ছদ পরতো। সপ্তাহের প্রতিদিনের খাবারের মেনু কী হবে তা রাজকুমার নিজেই ঠিক করে দিত। আর কিছু কিছু খাবার রাজকুমারের এত পছন্দ ছিল যে, সেসব খাবার সব সময় খাবারের টেবিলে রাখা থাকতো। রাজকুমারের প্রিয় খাবারের মধ্যে সন্দেশ এবং মিষ্টি ছিল অন্যতম। রাজকুমারকে দেখাশুনা করার প্রধান দায়িত্ব ছিল আমির হোসেনের। সে জানতো রাজকুমার কী কী পছন্দ করে, আর কী কী অপছন্দ করে। তাই রাজকুমার যখন প্রমোদ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাইরে যেতেন, তখন তার সাথে সফরসঙ্গী হিসেবে আমির হোসেন থাকতেন।
রাজ্যের শেষ প্রান্তে যে নদীটি ছিল সেই নদীতে রাজকুমার প্রায়ই নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন রাজকুমার প্রমোদ ভ্রমণে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন। সেইদিন আমির হোসেন অসুস্থ ছিলেন। তাই তার সফরসঙ্গী হলেন কয়েকজন নতুন রাজকর্মচারী। রাজকুমারের সাথে নতুন লোক দেখে দুষ্টু ভূত একটা বুদ্ধি আটলেন। ভূতটি চিন্তা করলো, এখনই সুযোগ রাজকুমারকে শায়েস্তা করার। দুষ্টু ভূতটি নিজের চেহারা পরিবর্তন করতে পারতো। সে তখন নিজের চেহারা পরিবর্তন করে রাজকুমারের রূপধারণ করলো। তারপর রাজপ্রাসাদে একা একা প্রবেশ করলো।
রাজকুমারকে একা একা আসতে দেখে রাজা একটু ভয় পেয়ে গেল। তিনি রাজকুমারকে বললেন, ‘কী ব্যাপার, এত তাড়াতাড়ি চলে আসলে? তোমার তো এখন আসার কথা না। তোমার সাথে যারা গিয়েছিল তারা কোথায়? তুমি একা কেন?’
--‘হ্যাঁ বাবা, সে কথাই তোমাকে এখন বলবো। শোন। আমরা যখন রাস্তা দিয়ে নদীর দিকে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখন বড় একটা গাছ থেকে সেই দুষ্টু ভূতটা নেমে আসে। তারপর সে আমাদের সকলকে ধরে নিয়ে যায় পাশের জঙ্গলে। সে মূলত আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তার ইচ্ছা সে রাজকুমার হবে। আমি কৌশলে তার হাত থেকে পালিয়ে এসেছি। তোমার বিশ্বাস না হলে দেখ, কিছুক্ষণ পরেই সেই দুষ্টু ভূতটা আমার রূপ ধরে রাজপ্রাসাদে চলে আসবে। আর এসে বলবে, আমিই আসল রাজকুমার।’
--‘তার এত বড় সাহস। আসুক সেই ভূত। তারপর দেখবো সে কী করে।’
--‘তুমি যেন ওই ভূতটার কথা শুনে আমাকে অবিশ্বাস করো না।’
-- ‘কী বলছিস! আমি আমার ছেলেকে চিনবো না। তুই কোন চিন্তা করবি না। এখন খাওয়া দাওয়া কর গে। তারপর বিছনায় শুয়ে থাক। একটু বিশ্রাম নে। এসব নিয়ে একদম ভাববি না। বিষয়টি আমি দেখবো।’
এদিকে রাজা প্রধান ফটকের প্রহরীকে বলে দিলেন, রাজকুমার পরিচয়ে কেউ যেন রাজপ্রাসাদে ঢুকতে না পারে। সে যদি আসে, তাকে রাজ্য থেকে বের করে দেবে। রাজার এ রকম আচরণ দেখে ভূত রাজকুমার মনে মনে খুশি হলো। অনেকদিন পর হলেও তার মনের বাসনা পূর্ণ হওয়ার পথে। রাজকুমারকে রাজ্যছাড়া করতে পারলেই তার উদ্দেশ্য সফল হবে। তারপর রাজকুমারের বেডরুমে ভূতটি প্রবেশ করলো। আর মনে মনে একটা ফন্দি আটলো যে, কীভাবে রাজা ও রাণীকে হত্যা করা যায়। কারণ রাজার মৃত্যুর পর সেই হবে এই রাজ্যের রাজা। তখন খুব মজা হবে। সমস্ত রাজত্ব তার হাতে চলে আসবে। যাহোক, ভূতটা টেবিলে রাখা ভালো ভালো কিছু খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ পর আসল রাজকুমার প্রমোদ ভ্রমণ করে রাজপ্রাসাদে ফিরে আসলো। রাজার হুকুম অনুযায়ী প্রধান ফটকের প্রহরী তাকে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করতে বাধা দিল। সে রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে ঢুকতে পারলো না। এতে রাজকুমার খুব রেগে গেল। প্রহরীদের সাথে উচ্চস্বরে তার খুব বাকবিত-া হলো। একপর্যায়ে রাজা তাদের ঝগড়া শুনে ফটকের দিকে এগিয়ে আসলেন। রাজা রাজকুমারকে দেখে চমকিয়ে গেলেন। আর মনে মনে ভাবলেন- ভূতটা অবিকল আমার ছেলের রূপধরে এখানে এসেছে। এতো সাংঘাতিক ভূত! রাজা কথা না বাড়িয়ে সেনাপতিকে দ্রুত খবর দিলেন। সেনাপতি রাজার সামনে আসলেন। রাজা সেনাপতিকে রাজকুমারদের দেখিয়ে বললেন, ‘ওদেরকে রাজ্যকে বের করে দিন। দুষ্টু ভূতটা আমার ছেলের রূপধরে এখানে এসেছে। উনি আসল রাজকুমার নন। আসল রাজকুমার তার ঘরে ঘুমাচ্ছে। যাও, এক্ষুণি এদের রাজ্যছাড়া কর।’
রাজার হুকুমে সেনাপতি তার সৈন্যদের নিয়ে তাদের রাজ্যে থেকে বের করে দিল। রাজকুমার বুঝতে পারলো যে, দুষ্টু ভূতটা আমার রূপধরে রাজপ্রাসাদে আশ্রয় নিয়েছে। সে তো সুযোগ পেলেই আমার বাবা-মাকে হত্যা করবে। এখন কী করা যায়? নানান কথা ভেবে রাজকুমার খুব দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেল। তারা উপায় না পেয়ে পাশের রাজ্যে আশ্রয় নিল। আর গোপনে রাজপ্রাসাদের সব খোঁজখবর নিতে থাকলো। রাজা শাসনকার্যে ব্যস্ত থাকায় রাজকুমারের সাথে রাজার দুইদিন কোনো কথাবার্তা হয়নি। সেদিনের ঘটনার পর থেকে রাণী লক্ষ্য করেছেন যে, রাজকুমার অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। সে আর আগের মতো নেই। রাণীর বিশ্বাস, ভূতের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে রাজকুমার এ রকম পরিবর্তন হয়ে গেছে। রাণী মনে মনে ভাবছিলেন রাজাকে বলে রাজকুমারের জন্য ভালো একটা চিকিৎসার ব্যবস্থা করাবেন। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।