Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমিটি হচ্ছে খেলাপি ঋণ পর্যালোচনায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন, তাদের সমর্থিত লোকজন জোর করে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে যায়। এভাবে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিতরণ করা ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। ফলে বেড়েই চলছে খেলাপি ঋণ। এতে করে পুরো ব্যাংকিং খাত নড়বড়ে অবস্থার মধ্যে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনকি সরকারও। নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আ হ ম মুস্তফা কামাল খেলাপি ঋণ নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি) নের্তৃবৃন্দকে ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান খেলাপি হওয়া ঋণ ধীরে ধীরে আদায়ের পাশাপাশি এনপিএল (নন পারফরমিং লোন) এক টাকাও বাড়বে না বলেও ছাপ জানিয়ে দিয়েছেন। 

পরে কেন্দ্রীয় এমডিদের নিয়ে খেলাপি ঋণ কমাতে এক পরামর্শ সভায় ব্যাংকাররা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের সামাজিক বয়কট চান। পাশাপাশি সভায় এমডিরা খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর আইন করার পাশাপাশি বিদ্যমান আইন সংস্কারের পরামর্শ দেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় খেলাপি ঋণ আদায়ে করণীয় নির্ধারণে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের চিন্তা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর নামকরণ করা হবে ‘খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা কমিটি।’ এর আগে এ বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বৈঠকে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সে সময় একটি টাস্কফোর্স গঠনের চিন্তা করা হয়। তবে এখন টাস্কফোর্স গঠন না করে খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পর্যালোচনা কমিটির প্রধান থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। এ ক্ষেত্রে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামিলকে প্রধান করা হতে পারে। কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং ব্যাংকিং খাত থেকে দু’জন করে ৪ জন প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটির কাজ হবে কী করে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করা যায় তার কৌশল নির্ধারণ করা। একই সঙ্গে তারা খেলাপি ঋণ যাতে আর না বাড়ে তার উপায়ও অনুসন্ধান করবেন। এছাড়া কী কারণে বিগত সময়ে এত বেশি পরিমাণে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখবে পর্যালোচনা কমিটি।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠন সম্পর্কিত একটি ফাইল অর্থমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্ত মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই টাস্কফোর্স গঠন না করে কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে এবং সব কিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানায়, ঋণ পর্যালোচনা কমিটির প্রধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে আহমেদ জামিলকে। তার আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে দু’জন যুগ্মসচিব এবং দুটি সরকারি ব্যাংক থেকে এমডি পদমর্যাদার দু’জনকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হবে। প্রাথমিকভাবে কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে পাঁচ। তবে প্রয়োজন হলে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন পেশ করবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন ৪৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ২২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা; সেখানে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাব ধরলে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হবে দেড় লাখ কোটি টাকা; যা আমাদের জাতীয় বাজেটের এক-চতুর্থাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঋণ

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৯ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ