Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোদাগাড়ীতে প্রাইভেট বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে মোঃ হায়দার আলী | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:৩৩ পিএম

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চলছে রমরমা কোচিং, প্রাইভেট বাণিজ্য এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার উপজেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসেন। এদের বিরুদ্ধে অভিযান করায় বেশীরভাগ কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট সেন্টার গুলি বন্ধ থাকায় উপায়হীনভাবে স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শ্রেণী কক্ষে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শিমুল আকতার গত সোমবার বার বিকেল ৫ টার দিকে গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশের সহযোগিতায় গোদাগাড়ী পৌর এলাকায় বিভিন্ন জায়গাতে অবৈধভাবে কোচিং পরিচালনার জন্য অভিযান শুরু করেন। এতে সুলতানগঞ্জ বাজারের ডায়নামিক কোচিং সেন্টার হতে মোঃ সেলিম আকতার ও রওশন আরা পারভীন কে আটক করে। অপরদিকে গোদাগাড়ী গ্রীণভিউ কোচিং সেন্টার হতে রাফিউল করিম ও সানরাইজ কিন্টার গার্ডেন হতে আবুল কালাম আজাদ কে আটক করে। পরে তাদের উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শিমুল আক্তার অবৈধ ভাবে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করার দায়ে প্রত্যেককে ১ হাজার অর্থদন্ড ও কোচিং পরিচালনা করব না মর্মে মুচলেকা দেয়। তাদের গ্রেফতারে খরর এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ার পর বেশীর ভাগ কোচিংবাজ ও প্রাইভেট বাজ শিক্ষক কোচিং সেন্টারে তালা লাগিয়ে প পালিয়ে যান। আবার কেউ কেউ ছাত্র ছাত্রী রেখে কোচিংবাজ শিক্ষক নিজেই পালিয়ে যান বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
অভিভাবক নাসিমা খাতুন, এ এম শাহিন, কামাল উদ্দিন, সাইদুর রহমান বলেন, কোচিংবাজ শিক্ষকদের গ্রেফতার করে জেলা হাজতে প্রেরণ করা দরকার। কেন না তারা ক্লাসে ঠিকভাবে পাঠদান করে তাদের প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে গাদাগাদি করে একরুমে ৫০/৫৫ জন শিক্ষার্থীকে এক সাথে পাঠদান করাচ্ছেন। প্রতি মাসে ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা এবং উপজেলা সদরে আসতে রিক্সা, অটোভাড়া দিতে হয় আর ২০/৪০ টাকা। এটা অভিভাবকদের উপড়ে বাড়তি চাপ। প্রতিদিন ৫/৬ ব্যাচ পড়ান ফলে তারা মাসে আয় করেন ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাদের প্রতিষ্ঠানের চাকুরীর প্রতি কোন মায়া থাকে না। এ ব্যাপারে অব্যাহত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শিমুল আকতারের এ ধরনের অভিযানকে খুব ভালভাবেই দেখেছেন অভিভাবক শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। তারা অব্যাহত রাখার দাবী জানান। তা হলে স্বল্প আয়ের অভিভাবক যেমন অটো চালক, শ্রমিক, দিনমজুর প্রভূতি পেশার মানুষ উপকৃত হবে।

এ মাসের উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় কোচিং প্রাইভেট বাণিজ্যের বিষয়টি জোরালো ভাবে উপস্থাপন করে বক্তব্য প্রদান করেন গোদাগাড়ী প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক, উদীয়মান সাংবাদিক আব্দুল বাতেন। অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। সদস্যগণ তার বক্তব্যকে স্বাগত জানান। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ সব অবৈধ কার্যক্রম চলায় দরিদ্র শিক্ষার্থী, অভিাবক, সচেতন মহল দারুন হতাশ। আর এসব কোচিং সেন্টারে সকাল সাড়ে ৫টা থেকে দুপুর ও বিকালে এমন কি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে শিক্ষকদের প্রাইভেট পাঠদান। কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা জানান, প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোচিংবাজ শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। পাঠদানে বেশী আন্তরিক হয়েছেন এ অভিযান অব্যাহত থাকলে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে। পাবলিক পরীক্ষা, টেস্ট, মডেল টেস্ট, অর্ধ বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে না। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারী বিধি মোতাবেক নির্ধারিত অর্থ নিয়ে অতিরিক্ত ক্লাস করলেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ বেশী উপকৃত হবেন। মাসিক খরচ কমে আসবে।

গোদাগাড়ী সরকারী স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মোঃ এনামুল হক বলেন, শিক্ষার মান ঠিক রাখা ও শিক্ষার্থীদের ক্লাস মুখি করার জন্য সারা বছর কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধ রাখতে হবে। তা হলে মানসম্মত, বাস্তবধর্মী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে শিক্ষার্থীরা। একজন কোচিংবাজ শিক্ষক ক্লাসে সঠিকভাবে পাঠদান না করে তারা নির্ধারিত কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট সেন্টারে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উৎসাহ যোগান। এতে করে শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২/১ জনের বিরুদ্ধে অভিযান করে যেন অভিযান শেষ না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে প্রশাসনকে। এককই মন্তব্য করেন রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা।

এদিকে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি ঘরে বেঞ্চে বসিয়ে ১ ঘণ্টার কোচিংয়ে ৪০ থেকে ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে একত্রে পড়ানো হচ্ছে। এতে দায়সারা গোছের পাঠদান হলেও মূলত শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১ ঘণ্টা করে মাসে ১২ দিন তাদের পড়ানো হয়। তাদের কোচিং ফি বাবদ মাসে ৫ ’শত থেকে ১৯’শত টাকা করে দিতে হচ্ছে। কোচিংয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘কি করবো, কোচিংয়ে না পড়লে পরীক্ষায় পাস করবো কিভাবে? ক্লাসে তো আর সব কিছু শেখানো হয় না। আর স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় জানুয়ারি মাসের বিনামূল্যে বই দেয়া হলেও ভর্তি, পরীক্ষা নানা অজুহাতে এখনও পুরো ক্লাস শুরু হয়নি। সকাল ৯ টায় ক্লাস শুরু করে দুপুরের পূর্বে তালা ঝুলানো হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। তাই কোচিং প্রাইভেট ছাড়া আর কি উপায় বলেন ? বাবা মা খুব কষ্ট করে কোচিং প্রাইভেটের টাকা আমাদেরকে দেন যদি প্রতিষ্ঠানে সরকারী নির্দেশ মত ৬ ঘণ্টা ক্লাস হত তা হলে আমাদের এত টাকা নষ্ট কোচিং প্রাইভেট বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হতে হত না। আমরাও চাই একেবারেই বন্ধ হউক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘স্কুল কলেজ মাদ্রাসা গুলিতে ঠিকভাবে ক্লাস হয় না। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই সরকার দেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কিন্তু ক্লাস শুরু হয় না। বিভিন্ন অজুহাতে জানুয়ারি মাস পার করে ফেব্রুয়ারি মাসেও অনেক স্কুল কলেজে ফুল ক্লাস শুরু হয়নি।

কলেজগুলিতে শিক্ষকদের কথিত অফডের কারণে সপ্তাহের ৩/৪ দিন পালা করে শিক্ষকগন কলেজে আসেন না। কলেজে ৯ টায় ক্লাস শুরু করে দুপুরের আগে তালা ঝুলিয়ে দেন। শিক্ষক শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে যায়। এদের শিক্ষার্থীর অবস্থা আরও করুন , পাবলিক পরীক্ষায় ফেল করেন অনেকে । বেশীরভাগ স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় সরকারী নির্দেশ মানা হয়না। সরকারী নির্দেশমত ৬ ঘণ্টা না চালিয়ে চালানো হয় ৩/৫ ঘণ্টা। আর বৃহস্পতিবারে কথিত হ্যাফডের কথা বলে প্রতিষ্ঠান চালানো হয় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। সিলেবাস শেষ না। বাধ্য হয়েই ছেলে মেয়েদের কোচিং, প্রাইভেট বাণিজ্যে পড়তে দিতে হচ্ছে। এমনও শিক্ষক রয়েছে তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না।’ কোচিংয়ে পড়ানোর বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে অনেকেই বলেন, ‘আমাদের আমাদের এলাকায় এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যার ২/৪ জন্য শিক্ষক প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্যের সাথে যুক্ত নাই। কিন্তু আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি না। কারণ তার অনেক প্রভাবশালী, দলীয় অনেক প্রভাব। কিছু কিছু শিক্ষক তাদের বাসা বাড়িতে প্রকাশ্যে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন।’ তাদের বাসায় লাইন দিয়ে অগ্রীম টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের কোচিং প্রাইভেটে ভর্তি হয়। ২/১ কোচিং প্রাইভেট বাজ শিক্ষকদের ও কোচিং সেন্টারে যুক্তদের অব্যাহত ভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করলে এগুলি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতিগন সরকারী নির্দেশমত চালাচ্ছেন কি না তা যদি প্রশাসনের লোকজন নিয়মিত তদারকি করেন তা হলেই শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে এবং কোচিং প্রাইভেট বাণিজ্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গোদাগাড়ী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ