Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনবল সঙ্কটে সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত

সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

১০০ শয্যার সাতক্ষীরা সদর হাসাপাতালে দৈনিক গড়ে ২০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এছাড়া, সপ্তাহের অন্যান্য দিনে আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন আরো ৬০০ থেকে ৮০০ জন রোগী। এমন একটি হাসপাতালে ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র চার জন। আর উপজেলাসহ জেলার সকল হাসপাতালে ২০২ জন সরকারি ডাক্তারের স্থলে রয়েছেন মাত্র ৫১ জন ডাক্তার। ফলে জনবল সঙ্কটে দারুনভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসার প্রচুর পরিমান সরঞ্জাম থাকার পরও শুধুমাত্র জনবল সঙ্কটের কারণে রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। তারপরও যে সমস্ত ডাক্তাররা নিয়োগপ্রাপ্ত আছেন তাদের অনেকেই হাসপাতালে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করে প্রাইভেট ক্লিনিকে ব্যস্ত থাকেন।
এছাড়া, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে বেশিরভাগ সময়ে এক্সরে ফিল্ম থাকে না। ওষুধের সরবরাহও কম। দূরদরন্ত থেকে আসা রোগীরা নির্দিষ্ট রোগের ডাক্তারের পাশাপাশি সরকারি ওষুধের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থা জেলার প্রায় সব হাসপাতালগুলোতেই।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সফিকুল গাজী, কেয়া মনিসহ একাধিক রোগী জানান, হাসপাতালটি নার্সরাই চালাচ্ছেন। এখানে ডাক্তারদের দেখা পাওয়া খুবই কষ্টের এবং ভাগ্যের। তারপরও দুই/একজন ডাক্তার রাউন্ডে এলেও তাদের ব্যবহার ভালো না।
বিএমএ’র জেলা সভাপতি ডা. মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, একজন ডাক্তার নাইটডিউটি ছেড়ে ভোর ৬ টায় ফিরে আবারো সকাল ৮ টায় কাজে যোগদান করলে তার কাছ থেকে কতটা সেবা পাওয়া যাবে তা অনুমান করা সহজ। সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজে এনাটমি ও ফিজিওলজিতে কোন শিক্ষক নেই। সেখানে এনাটমি পড়ান একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ।
সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনের ৫৭ জন ডাক্তারের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। একজন রোগীর জন্য তিন শিফটে তিন জন ডাক্তার দরকার হয়। একই সাথে দরকার ৯ জন সেবিকাও। অথচ সেই জনবল এখানে নেই।
তিনি বলেন, সদর হাসপাতালে প্রয়োজন ২৭ জনের স্থলে আছেন ৪ জন ডাক্তার, কালিগঞ্জে ২১ জনের বিপরীতে ৪ জন, আশাশুনিতে ২১ জনের বিপরীতে ৪ জন, কলারোয়ায় ৩৪ জনের স্থলে ৪ জন, তালায় ৩৩ জনের বিপরীতে ৭ জন, দেবহাটায় ১৬ জনের বিপরীতে ৫ জন এবং শ্যামনগর হাসপাতালে ৩৩ জনের স্থলে ৫ জন ডাক্তার রয়েছেন। এসব হাসপাতালে প্রয়োজন ২০২ জনের স্থলে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৫১ জন।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে জনবল বরাদ্দ আছে ৫০ শতাংশ। অথচ বাস্তবে রয়েছে তারও অর্ধেক। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজেও একই সমস্যা বিরাজ করছে। প্রায় সব উপজেলায় স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি ১০ জন ভর্তি রোগীর পেছনে একজন ডাক্তার থাকতে হবে। সেই হিসাবে সাতক্ষীরায় ভর্তি হওয়া ২০০ রোগীর জন্য প্রতি শিফটে ২০ জন হলে দৈনিক দরকার ৬০ জন ডাক্তার।
জেলায় শতভাগ সরকারি ডাক্তারের মধ্যে আছে মাত্র ২৬ শতাংশ। মাত্র ৫১ জন সরকারি ডাক্তার দিয়ে জেলার স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করা কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য দরকার জনবল বৃদ্ধি করা। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ সকল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ডাক্তারদের নিয়োগ দিয়ে ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যসেবা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ