বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ চিকিৎসা কর্মীর অভাবে দক্ষিণাঞ্চলে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলছে সম্পূর্ণ জোড়াতালি দিয়ে। বিগত দিনে এ অঞ্চলে জেলা ও উপজেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলেও তার জনবল মঞ্জুরি পূর্বের আদলেই রয়ে গেছে। বেশিরভাগ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ৩৩ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও নতুন জনবল মঞ্জুরি হয়নি। আর পুরানো মঞ্জুরির প্রায় অর্ধেক পদই শূন্য। ফলে চিকিৎসকের অভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলার দু’টিতে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছেনি। বরগুনার তালতলী ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় করোনা ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করা যায়নি স্বাস্থ্য বিভাগের কোন স্থাপনা না থাকায়।
এরপরেও গত প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মীসহ জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন লড়াই করে যাচ্ছেন। সীমিত জনবলসহ সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও করোনা মহামারী মোকাবিলায় চিকিৎসা সেবা ও ভ্যাকসিন প্রদানে দক্ষিণাঞ্চলে স্বাস্থ্য বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে।
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাদে ৬ জেলার ৪২টির মধ্যে ৪০টি উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকের অনুমোদিত ১ হাজার ১৩১টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৫৯৮ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৫৩৩। যা অনুমোদিত পদের প্রায় ৪৫%। ১ হাজার শয্যার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ৫শ’ শয্যার বিপরীতে মঞ্জুরিকৃত পদের প্রায় ৪০ ভাগেই কোন চিকিৎসক নেই। হাসপাতালটি ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেখানে নতুন জনবল কাঠামো মঞ্জুরি কবে মিলবে তা এখনো অজ্ঞাত। বরিশালের ১শ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ৩৩ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত ২৩ জন। ১০টি পদে কোন জনবল নেই। জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগের এ করুণ হালের বাইরে উপজেলা পর্যায়েও পরিস্থিতি ভালো নয়। বরিশাল জেলা সদরের বাইরে ৯টি উপজেলা ও চাখারের ১০ শয্যার একটি হাসপাতালে ২২৪ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫০ জন। ৭৪টি পদেই কোন চিকিৎসক নেই।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসকের মাত্র ৫৮টি পদ মঞ্জুর করা হলেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১২ জনকে। ফলে সরকারি এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানে মঞ্জুরিকৃত ৪৬টি শূন্য পদে থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। তবে সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন থেকে আরো ১৪ জন চিকিৎসককে সেখানে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পটুয়াখালী সদরের বাইরে ৬টি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স এবং কুয়াকাটা ও কাঠালতলীতে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালের জন্য অনুমোদিত ১৬৫ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত ৯২ জন। ৭৩টি পদে কোন চিকিৎসক নেই।
অনুরূপভাবে ভোলা জেলা সদরের আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার মঞ্জুরিকৃত ২২ জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন ১২ জন। তবে অতি সম্প্রতি আড়াইশ’ শয্যার জনবল মঞ্জুরি প্রদান করেছে সরকার। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি এখনো। ভোলা সদরের বাইরের অপর ৬টি উপজেলা হাসপাতাল ছাড়াও চর আইচার ২০ শয্যার হাসপাতালটির জন্য মঞ্জুরিকৃত ১৮৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৯০, ৯৭টি পদে কোন চিকিৎসক নেই।
পিরোজপুর জেনারেল হাসপাতালটিও ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ৫০ শয্যার মঞ্জুরিকৃত ৩৩টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ১১ জন। ২২টি পদে কোন চিকিৎসক নেই। জেলা সদরের বাইরের ৬টি উপজেলায় ১৩৯টি মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭৬ জন। ৬৩টি পদ শূন্য। ঝালকাঠির ৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত মাত্র ৮ জন। ১৪টি পদে কোন চিকিৎসকই নেই। ৪ উপজেলার ঝালকাঠি সদরের বাইরের অপর ৩টি উপজেলাতে মঞ্জুরিকৃত ৮১টি পদে কর্মরত আছেন ৫০ জন চিকিৎসক। শূন্য পদের সংখ্যা ৩১।
বরগুনা জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালটির অবস্থা বর্ণনার বাইরে। দক্ষিণের অবহেলিত এ জেলা সদরের হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখানে চিকিৎসকের ৪২টি পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৬ জন। ৩৬টি পদ শূন্য। জেলা সদরের বাইরের চিত্রও প্রায় একই। এ জেলার তালতলী ও রাংগাবালী উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা উপজেলা হাসপাতাল স্থাপিত হয়নি। জেলা সদরের বাইরের অপর ৫টি উপজেলায় মঞ্জুরিকৃত ১২৫ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৬৩ জন। ৬২টি পদের বিপরীতে কোন চিকিৎসক নেই।
এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলাতে ১৪৫টি হেলথ টেকনিশিয়ানের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৫২ জন। ডেন্টাল টেকনিশিয়ানের ৪৮টি পদে কর্মরত ৩০ জন। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৩৬৪টি ইউনিয়নের ৭০টিতে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও সেখানে কোন চিকিৎসকের পদ নেই। উপজেলা হাসপাতাল থেকে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকরা সপ্তাহে একদিন ইউনিয়ন পর্যায়ে যাবার কথা। এছাড়া এ অঞ্চলে ২৬৬টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেও চিকিৎসকের কোন পদ নেই। এর বাইরে বর্তমানে ১ হাজার ১১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সার্ভিস প্রোভাইডাররা কাজ করছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আরো কিছু ক্লিনিক স্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।
এসব বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি নিয়মিতভাবেই স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি ৪ হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সেখান থেকে বেশ কিছু চিকিৎসক দক্ষিণাঞ্চলে নিয়োগ দেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।