Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাল্গুনেই প্রকৃতির রুদ্রমূর্তি

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে জানান, | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ফাল্গুনের শুরুতে প্রকৃতি হঠাৎই দেখালো তার রুদ্রমূর্তি। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ে শস্যসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল রোববার ভোরে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি ও দমকা ঝড় শুরু হয়। প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী একটানা শিলাবৃষ্টিতে ফসল, আধাপাকা ঘরাবাড়ি ও গাছাপালা ভেঙে পড়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন :
কুষ্টিয়ার মিরপুরে শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন ফসলসহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মাঠের পর মাঠ ফসলের ক্ষতি হয়ে গেছে। এতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হাজারো কৃষক।এছাড়া আবুরী-মাগুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের টিনের চালা ভেঙে গেছে। সেইসঙ্গে ফুটো হয়ে গেছে ২০-২৫টি বাড়ির টিনের চালা।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাজনগর, নওদাপাড়া, কাকিলাদহ, আবুরী, বড়বাড়ীয়া, হিদিরামপুর, আজমপুর, মল্লিকপাড়া, নওদাআজমপুর, মিটন, বুরাপাড়া, মেহেরনগর, চক, বাঁশবাড়িয়া, শ্রীরামপুর, কুর্শাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা দাবি করেছেন এক রাতের শিলাবৃষ্টিতে মিরপুর উপজেলায় প্রায় ১শ’ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
মালিহাদ ইউনিয়নের আশাননগর এলাকার কেসমত জানান, রাজপুর, রাজনগর, আবুরী, আশাননগর মাঠে প্রায় ২৫-৩০ জন চাষির কলা বাগান একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বিঘাপতি সেখানে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আবুরী মাগুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, শিলাবৃষ্টিতে শ্রেণী কক্ষের চালা ফুটো হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। দিনের বেলায় চালা দিয়ে আলো ঢুকছে। বৃষ্টি এলে ক্লাস করানো সম্ভব হবে না শ্রেণী কক্ষে।
কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, আমরা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়কা করব। কৃষকরা যদি তামাকের বিকল্প মসুর, ভুট্টা, গম, পেঁয়াজ, রসুন ও ধান চাষ করে তাহলে এ ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়ে লাভবান হতে পারে।
চান্দিনা (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার পাঁচটি উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে রবি শস্যসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বোরো ধান, সরিষা, গম, ভুট্টা, বাঙ্গী, সবজি, পান বরজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বাড়িঘরের ক্ষতি হওয়াসহ বিভিন্ন পাখি মারা গেছে। ঋণ করে ফসল ফলিয়ে হঠাৎ এই শিলাবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে।
কৃষকরা জানান, রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জেলার চান্দিনা, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় হঠাৎ করে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। শিলাবৃষ্টিতে সকাল ১০টা পর্যন্ত টিনের চালা, খড়ের গাদা, রাস্তাসহ কোন কোন স্থানে শিল জমে থাকতে দেখা গেছে। শিল পড়ে টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে।
উপজেলার রারিরচর এলাকার কৃষক কামরুল জানান, হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে তার অনেক কষ্টের ফসল একেবারে মাটির সাথে মিশে গেছে। এত শিল তারা আগে কখনও দেখেননি। দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ এলাকার বাঙ্গী চাষী আব্দুল গফুর জানান, শিলাবৃষ্টিতে তার বাঙ্গী ক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। ঋণ করে অনেক কষ্টের করা ফসল নষ্ট হওয়াতে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তেমনি ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। গৃহবধূ জোবেদা খাতুন জানান, শিলাবৃষ্টিতে তার ঘরে চালা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক পাখি মরে বাড়ির আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বোরো ধানের পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক বেশী ক্ষতি হয়ে গেছে। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীলীপ বরুয়া জানান, শিলাবৃষ্টিতে ২ হাজার ৭৭৪ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আর্থিক ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
পুঠিয়া (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, প্রায় সকল গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাম গুলোর মধ্যে রয়েছে, জিউপাড়া ইউনিয়নের ধোপাড়াপাড়া, দাশমাড়িয়া, নওপাড়া, উজালপুর, সৈয়দপুর মধূখালি, হাড়োখালি, সরিষাবাড়ি, ডাংঙ্গাপাড়া ও বাঙ্গালপাড়া গ্রামে গ্রামের অধিকাংশ এলাকার ফসল, আধাপাকা ঘরবাড়ি ও গাছাপলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ সব এলাকার প্রায় কয়েক হাজার একর জমির সফলের মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, পিয়াজ, সরিষাসহ আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকর কৃষকের কয়েক কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হয়েছে শিলাবৃষ্টিতে। এছাড়াও শিলাবৃষ্টিতে কাঁচা, আধাপাকা ঘরবাড়ির টিনসহ গাছাপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এলাকার প্রান্তিক কৃষক, বর্গা চাষি কৃষক ও প্রকৃত কৃষকের সর্বশান্ত হয়ে পরেছে। ধোপাপাড়া এলাকার বর্গা চাষি মফিজ বলেন, চার বিঘা জমির বর্গা নিয়ে পিয়াজের চাষ করেছেন। তাকে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমির লাগানো সব পিয়াজ শিলাবৃষ্টির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন চলার মত তার আর কোন উপায় নাই। এ অবস্থা এলাকার প্রায় সকল চাষির। বর্তমানের এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে এলাকার কৃষক প্রশাসনের সহযোগিত চেয়েছেন।
সিংড়ায় (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, শিলাবৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ঘরবাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন বিশেষ করে পৌরসভা, চৌগ্রাম, তাজপুর, লালোর, শেরকোল, ডাহিয়া, সুকাশ, ইটালী ইউনিয়নে কম বেশি ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে মাঠ, ঘাট, বাড়ির বারান্দায় শিলের স্তুপ পড়ে যায়। প্রবল এই শিলাবৃষ্টিতে টিনের চাল ফুটো হয়ে যাওয়ার উপক্রম। গাছের ডালপালা ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, শিলাবৃষ্টির কারণে ফসলসহ বিভিন্ন সবজি বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ