Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবীণ রাজনীতিবিদ বগুড়া জেলা আ’লীগের সভাপতি মরহুম মমতাজ উদ্দিনের বাসায় জানাজায় মানুষের ঢল, শোকের ছায়া

বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:১৫ পিএম

উত্তরজনপদের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মমতাজ উদ্দিন সিআইপি আর নেই। তিনি রবিবার ভোর ৫ টায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন । ( ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন )। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়ে, নাতী নাতনী, আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি শনিবার মাঝরাতে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

তার ইন্তেকালে বগুড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাকে শেষবারের মত দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল শহরের কালিতলার কাটনারপাড়া হটু মিয়া লেনের বাসভবনে। সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গসহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ মরহুমের বাসভবনে যাচ্ছে। বগুড়া-১ আসনের এমপি আব্দুল মান্নান, জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম-বার, বাসভবনে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বাদ যোহর শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে প্রথম জানাজা নামাজে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহন করেন। জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন মরহুমের ছেলে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন, নামাযে অংশগ্রহন করেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, বগুড়া-৫ আসনের এমপি আলহাজ্ব হাবিবর রহমান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা: মকবুল হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম সহ, বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জানাজা শেষে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শোকসন্তপÍ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এসময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

জেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি জানান, তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কয়েকদিন আগে কোলকাতা গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বুধবার ভোরে বগুড়ায় আসেন। শনিবার রাতে তিনি অসুস্থ্যবোধ করলে তাকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ৩ টার দিকে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ভোর ৫টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। বাদ যোহর শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে প্রথম জানাজা, বাদ আছর মানিকচক হাইস্কুলে ২য় জানাজা নামায শেষে সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউপির কদিমপাড়া গ্রামে বাবা-মা’র কবরের পাশে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হবে। এর আগে বেলা ১২ টার দিকে মরহুমের মরদেহ বগুড়া প্রেসক্লাবে নিয়ে আসলে সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্লাব সভাপতি মোজাম্মেল হক লালু, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম নয়ন। পরে প্রেসক্লাব, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর শহরের টেম্পল রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মরদেহ রাখা হয়।
তার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ আসনের এমপি এড. নুরুল ইসলাম তালুকদার, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর, পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আ’লীগ, যুব মহিলা আ’লীগ, সদর উপজেলা, পৌর শাখা সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন। দীর্ঘসময় যাবত বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সহ এফবিসিসিআই এর ও পরিচালক ছিলেন তিনি। সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন একাধিকবার। বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রভাতের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক তিনি। বগুড়া প্রেসক্লাবের সদস্য সহ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন । আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নির্বাহি কমিটির সিনিয়র সদস্য আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন বগুড়া করোনেশন স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। ৬৯’ই বৃহত্তর বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই থেকে পথ চলা শুরু। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর প্রথম ব্যাচ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং বগুড়ার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৭২ সালে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, ৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দুঃসময়ে বগুড়ায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন তিনি। প্রথমে প্রচার সম্পাদক, তারপর সাংগঠনিক সম্পাদক পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জানাজা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ