Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পাবনায় ভূমিগ্রাসীদের দখলে শাস্ত্রীয় সংগীতের পন্ডিত বারীন মজুমদারের বাড়ী

পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:৩০ পিএম

পাবনায় সঙ্গীতের লক্ষ্নৌ হিসেবে পরিচিত শহরের রাধানগর এলাকা। এই স্থানে ক্ল্যাসিক শিল্পের অনেক গুণি জনের জন্ম হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সঙ্গীতের প্রখ্যাত পন্ডিত বারীন মজুমদার, নিত্য গোপাল জোয়ার্দ্দার প্রমুখ রয়েছেন।
সঙ্গীতের প্রখ্যাত শিল্পী বারীন মজুমদারের জন্ম ১৯১৯ সালে,পাবনার রাধানগরে। সঙ্গীত শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে আজীবন সংগ্রামী এই শিল্পীর জন্ম-ভিটা এখন ভূমিগ্রাসীদের অবৈধ দখলে। অযত‌ন অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে তার সব স্মৃতি চিহ্ন। স্মৃতি ধরে রাখতে সংগ্রহশালা ও সঙ্গীত একাডেমী প্রতিষ্ঠার দাবী স্থানীয়দের।
পাবনা পৌর এলাকায় রাধানগর মজুমদার পাড়ায় প্রখ্যাত জমিদার বংশ মজুমদার পরিবারে ১৯১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী জন্ম নেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী উস্তাদ বারীন মজুমদার। জমিদার পিতা নীশেন্দ্রনাথ মজুমদার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভক্ত ছিলেন, দেশ বিদেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে বাড়িতে নিয়মিত আসর বসত । সেখান থেকেই সঙ্গীতের প্রতি আসক্তি বারীনের। চর্চায় বাদ সাধে নি পরিবারও।তিনি ১৯৩৯ লক্ষ্নৌ-এর মরিস কলেজ থেকে সঙ্গীতে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। দেশবিভাগের সময় ১৯৪৭ এ ফিরে আসেন বাংলাদেশে। জমিদারীর বিষয় সম্পত্তি ফেলে মন প্রাণ সপে দেন শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রসারে।
পাবনার খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী প্রলয় চাকী সাংবাদিকদের জানান, ছোটবেলা থেকে জমিদারীর বিত্ত বিলাসেই বড় হয়েছেন বারীন মজুমদার। বেদখলে থাকা রাধানগরের পুকুর ঘাটের জমিদার বাড়িতে তিনি আসলে, আশেপাশের জেলা থেকে গুণী শিল্পী ও যন্ত্রীরা ছুটে আসতেন। মজুমদার পরিবারের দান করা জমিতেই গড়ে উঠেছে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, রাধানগর মজুমদার একাডেমীসহ আরো নানা স্থাপনা।
প্রলয় চাকী বলেন, সুর সাম্রাজ্যে নিমগ্ন থাকায় বিষয় সম্পত্তি নিয়ে ভাবনা ছিল না বারীন মজুমদারের। এমন উদাসীনতায় সমস্ত সম্পদ চলে যেতে শুরু করে ভূমিদস্যুদের দখলে। লজ্জায়, অভিমানে প্রতিবাদ করেননি তিনি। একসময় মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকুও বেহাত হলে তিনি মৃত্যুর আগে আর পাবনায় আসেননি।
বারীন মজুমদারের জেষ্ঠ্য পুত্র সঙ্গীত পরিচালক পার্থ সারথি মজুমদার জানান, পাবনায় আমাদের পূর্ব-পুরুষের বাড়ি, এবং এক হাজার দুইশ সাইত্রিশ সহস্রাংশ জমি ভূমিগ্রাসীরা জাল কাগজ তৈরী করে দখল করে নেয়। যাদেরকেই বাবা আশ্রয় দিয়েছেন, তারাই বাবার সাথে প্রতারণা করেছেন।
বারীন মজুমদারের কনিষ্ঠ পুত্র জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বাপ্পা মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষের মাটিতে আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা নেই। আইনী লড়াইয়ে প্রতারণা প্রমানিত হয়েছে। তারপরেও অবৈধ দখলদাররা আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। এ ব্যপারে আমরা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগীতা চাইছি।

পাবনা জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেলে বারীন মজুমদারের সম্পত্তি উত্তরসূরীদের ফিরিয়ে দিতে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্মৃতি ধরে রাখতে যে কোন উদ্যোগে সরকারী সহযোগিতার আশ^াস দেন তিনি। পাবনাবাসী মনে করেন, পাবনার জেলা প্রশাসকের এ পর্যন্ত কথা ও কাজে মিল পাওয়া গেছে। আশা করা যায় ভূমিদস্যুদের বিতাড়িত করতে তিনি ও পাবনার পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম পিপিএম সফল হবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ