Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভূমিগ্রাসীদের কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার অফিস: সরকার এখন পর্যটন শহর কক্সবাজারকে বিশ্বমানের আধুনিক, পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলার মহা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এক শ্রেণির ভূমিগ্রাসীদের কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার। এরা নিয়ম-নীতি অমান্য করছে তা শুধু নয়, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও তোয়াক্কা করছে না।
কক্সবাজার সৈকত দখল ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা মামলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দেয়া বিতর্কিত চার্জশীট বাতিল করেছে আদালত। অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ভূমিগ্রাসী অভিযুক্তদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল।
এরই প্রেক্ষিতে চার্জশিট বাতিলের সাথে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে বাদ দেয়া মূল অভিযুক্ত হোটেল সী-ক্রাউন ও ফকির গ্রুপের মালিককে অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তপূর্বক পুনরায় চার্জশিট দেয়ার নির্দেশ দেন। গত রবিবার মামলার বাদী ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল মামুনের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান এ নির্দেশ দেন। বিষয়টি সংবাদ কর্মীদের নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ আদালতের স্পেশাল পিপি মোঃ সাইফুল ইসলাম।
জানা যায়, কক্সবাজার সৈকত দখল ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে করা মামলায় ৬ প্রতিষ্ঠানের ৮ জনের বিরুদ্ধে গত ১১ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামের দেয়া এ প্রতিবেদনে রহস্যজনকভাবে বাদ দেয়া হয়েছে হোটেল সী-ক্রাউন ও ফকির গ্রুপের মালিকদের।
অভিযোগ উঠেছে, পরিবেশ বিধ্বংসী দৃশ্যমান বড় অপরাধ করলেও রহস্যজনক কারণে হোটেল সী-ক্রাউন ও ফকির গ্রুপের মালিকদের বাদ দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সরদার শরিফুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, আসামিদের নিজস্ব লোকজনকে মামলার সাক্ষী হিসাবে নাম দেয়ার অভিযোগ উঠে।
যাদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন তারা হলেন, ফকির গ্রুপের কর্মচারী কলাতলীর বাসিন্দা নাজির হোসেনের ছেলে কামাল, সী-ওয়েব বর্তমানে এস্টেটিক প্রপার্টিজ-এর পরিচালক ঢাকা মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার মোঃ আব্দুল করিম শেখ-এর ছেলে কামরুল হাসান, হোম স্টোন প্রপার্টিজ লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা সূত্রাপর এর ওয়ারী এলাকার শহীদুল আলম ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডালিয়া আলম, হোটেল বে প্যারাডাইস-এর স্বত্বাধিকারী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল আমিন শানু, ক্রাউন প্যাসিফিক বীচ হোটেল এন্ড রিসোর্ট এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মেটাল প্রাইভেট লি:-এর স্বত্বাধিকারী ঢাকা নর্থ গুলশান-এর বিপিএল টাওয়ার এর বাসিন্দা মৃত জামিল উদ্দিন আহমেদ-এর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সাদিক জামিল এবং একই এলাকার পজেক্ট বিল্ডার্স লি: এর স্বত্বাধিকারী মোবাশ্বির উদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলাম।
জানা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইসিএ (প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা) এলাকায় সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সৈকত দখল করে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণের অভিযোগে ৪ ডেভেলপার কোম্পানিসহ ৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের সভাপতি এম. ইব্রাহিম খলিল মামুন। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, ডেভেলপার কোম্পানি ফকির গ্রুপ, সী-ওয়েভ, হোম স্টোনের টাইটানিক ইরা (বর্তমান হোটেল সি প্রিন্সেস) ও কক্স টাইটানিক, ডেসটিনি গ্রুপের ক্রাউন প্যাসিফিক, হোটেল সী-ক্রাউন ও হোটেল বে প্যারাডাইস।
আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের তৎকালীন পরিদর্শক সাইফুল আশ্রাফকে। তিনি একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে চট্রগ্রাম পরিবেশ আদালতে একটি আবেদনও করেন। কিন্তু পরিদর্শক সাইফুল আশ্রাফ ঢাকায় বদলি হয়ে যাওয়ায় পরে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি গত ১১ এপ্রিল অত্যন্ত গোপনে কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার প্রতিবেদন জমা দেন।
এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের সভাপতি এম. ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক রহস্যজনক কারণে মূল অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে এবং আসামিদের নিজস্ব লোকজনকে সাক্ষী বানিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। তাই বিতর্কিত এ চার্জশিট বাতিল করে বাদ দেয়া অভিযুক্তদের অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় চার্জশিট দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তিনি বলেন, আসল অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার কারণে সৈকত দখলসহ পরিবেশ বিধ্বংসী বিভিন্ন কার্যক্রমে উৎসাহিত হবে সাধারণ লোকজন। অথচ সরকার এখন কক্সবাজারকে বিশ্বমানের পর্যটন শহর করতে যাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভূমিগ্রাসীদের কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ